বিশ্ব কবির জন্মদিন আজ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা, নোবেল বিজয়ী ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মদিন আজ। ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দের (৭ মে ১৮৬১ খিষ্টাব্দ) এ দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সাহিত্যের অনন্য এ কবি।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৪তম জন্মবার্ষিকী উদযাপনে নানা কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠানও সাজিয়েছে অনুষ্ঠানসূচি। গান-নাটক-আবৃত্তি, বক্তৃতা, পুরস্কার বিতরণসহ নানা আয়োজনে রবীন্দ্রজয়ন্তী উদযাপন হবে। এ বছর রবীন্দ্রজয়ন্তীর মূল অনুষ্ঠান হবে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে।

বিশ্বসাহিত্যের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাদের একজন হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে যার অবদান অসামান্য। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য পায় নতুন রূপ। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মননশীলতা দিয়ে বিশ্ব অঙ্গনে বিরল সম্মান আর্জন করেন তিনি।

বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা।

১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তার পত্নীবিয়োগ হয়।

১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।

১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তার মৃত্যু হয়।

সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন- রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন।

রবীন্দ্রনাথের গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তার রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ ও ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ গানদুটি যথাক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত। এছাড়া শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতের কথাও তার গানের অনুবাদ।

‘রবীন্দ্রনাথ ও বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সরকারি আয়োজন তিন দিনের। কবির স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর পতিসর, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, খুলনার দক্ষিণডিহি ও পিঠাভোগে রবীন্দ্রমেলা, রবীন্দ্রবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জন্মবার্ষিকী উদ্যাপিত হবে। এ বছর রবীন্দ্রসাহিত্যের গবেষণায় ড. অসীম দত্ত এবং রবীন্দ্রসংগীত চর্চায় শিল্পী এ এম এম মহীউজজামান চৌধুরী ময়না পাচ্ছেন বাংলা একাডেমি প্রবর্তিত ‘রবীন্দ্র পুরস্কার ২০২৫’।

বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলা একাডেমি তাদের নাম ঘোষণা করেছে। ২০১০ সাল থেকে বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র পুরস্কার দিয়ে আসছে। প্রতি বছর দুজনকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। এ পুরস্কারের অর্থমূল্য এক লাখ টাকা। সঙ্গে দেওয়া হয় সম্মাননাপত্র, সম্মাননা-স্মারক এবং পুষ্পস্তবক। বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে।