যশোরে নতুন তিন স্টেশনই অব্যবহৃত আশা বঞ্চিত দুই উপজেলার মানুষ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘পদ্মাসেতু রেলপ্রকল্পের’ আওতায় যশোরে নির্মিত তিনটি রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে কোনো যাত্রী ওঠানো হচ্ছে না। যদিও এসব স্টেশনে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং প্রয়োজনীয় লোকবল আগে থেকেই নিয়োগ রয়েছে। এজন্য দ্রুত স্টেশন তিনটি চালু ও যাত্রী ওঠা-নামার উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ উন্নয়নে পদ্মাসেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পের আওতায় ১৪টি নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ ও ৬টি স্টেশন পুনঃনির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে যশোরে রয়েছে তিনটি স্টেশন। এগুলো যশোর সদরের রূপদিয়া, পদ্মবিলা ও বাঘারপাড়ার ভিটাবল্যায় অবস্থিত। স্টেশনগুলোতে প্রয়োজনীয় জনবলও পর্যাপ্ত অবকাঠামো বিদ্যমান রয়েছে।

এরই মধ্যে বিগত ২০২৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর এই রুটে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। প্রতিদিন ঢাকা থেকে বেনাপোলগামী রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ও খুলনা থেকে ঢাকাগামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি স্টেশন তিনটির ওপর দিয়ে যাতায়াত করলেও সেখানে থামে না। এতে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট দুই উপজেলার বাসিন্দারা।

বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়া ভিটাবল্যা স্টেশনের পাশে আসলাম হোসেন নামে একজন বলেন, ‘প্রতিদিন চোখের সামনেই স্টেশন ছুঁয়ে ট্রেন আসা-যাওয়া করে, কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা ট্রেনে উঠতে পারিনা। আল্লাহ জানে, কোনোদিন এই স্টেশন থেকে আমরা ট্রেনে উঠতে পারবো কিনা।’

শুধু তিনি নন, যশোর সদর ও বাঘারপাড়া উপজেলার অধিকাংশ মানুষেরই এখন একই প্রশ্ন, কবে ট্রেন থামবে এই দুই উপজেলার তিনটি স্টেশনে, কবে তারা ট্রেনের সুবিধা পাবেন?

পদ্মবিলা স্টেশন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দীন বলেন, ‘পদ্মাসেতু রেল প্রকল্পের আওতায় এখানে স্টেশন নির্মাণ করা হওয়ার পর থেকে খুবই উচ্ছ্বাসিত ও আশান্বিত ছিলাম। কিন্তু প্রতিদিন স্টেশন হয়ে ট্রেন চলাচল করতে দেখি, কিন্তু উঠতে পারিনা। এর চেয়ে কষ্টের কিছু থাকতে পাওে না।’

তিনি বলেন, খুলনা থেকে জাহানাবাদ এক্সপ্রেসটি সিঙ্গিয়া রেলজংশনে থামলেও সেটি পদ্মবিলা ও জামদিয়ার ভিটাবলা স্টেশন অতিক্রম করে নড়াইলে গিয়ে যাত্রী ঊঠাচ্ছে, একই অবস্থা বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা রূপসী বাংলা ট্রেনেরও। এই ট্রেনটি রূপদিয়া স্টেশনসহ বাকি দুটি স্টেশনকে উপেক্ষা করে নড়াইলে গিয়ে থামছে। এসব কারণে যশোর সদর ও বাঘারপাড়া উপজেলার একাংশের অন্তত আড়াই লাখ মানুষ রেল সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাধ্য হয়ে তাদের সড়কপথেই ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা-খুলনা, যশোর যাতায়াত করতে হচ্ছে।

তবে এসব বিষয়ে আপাতত হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানান যশোর রেলওয়ে জংশনের মাস্টার আয়নাল হাসান। তিনি বলেন, পদ্মাসেতু হয়ে রেল চলাচল করলেও আপাতত সীমিত সংখ্যক ট্রেন চলাচল করছে, এ প্রকল্পের অধীনে আপাতত ট্রেনের সংখ্যা কম। খুব দ্রুতই এর সংখ্যা বাড়ানো হবে। ট্রেনের সংখ্যা যখন বাড়বে তখন এসব স্টেশনে লোকাল ট্রেন বা শাটল ট্রেনের মাধ্যমে যাত্রী ওঠানামা করবে বলে তিনি জানান।

প্রসঙ্গত, বেনাপোল স্টেশন থেকে রূপসী বাংলা ট্রেনটি যশোর রেলওয়ে জংশন হয়ে পদ্মাসেতু ঢাকায় যাতায়াত শুরু করছে; যা যশোরবাসীকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। তবে ট্রেনটির সময় সূচি নিয়ে স্থানীয়দের বিতর্ক এখনো চলছে। বিশেষ করে বেনাপোল থেকে ট্রেনটি ছাড়ার সময় যশোরবাসীর জন্য সুবিধাজনক না হওয়ায় তারা এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।

অপর দিকে, খুলনা থেকে ঢাকাগামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাতায়াতে যশোর রেলওয়ে জংশন উপেক্ষা করা নিয়ে যশোরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে আগে থেকেই। এ অবস্থায় রেল পরিষেবায় সুষম বণ্টন না হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে সমস্যা থেকেই যাবে বলে স্থানীয়রা মনে করেন।