চুয়াডাঙ্গায় কার্প ফ্যাটেনিংয়ে মাছ চাষে লাভবান কৃষক

0

রিফাত রহমান,চুয়াডাঙ্গা॥ চুয়াডাঙ্গায় কার্প ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে মাছ মোটাতাজা করে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছেন মাছ চাষিরা। মাছ চাষিদের ভাগ্য বদলের মাধ্যম এখন কার্প ফ্যাটেনিং পদ্ধতি। সাধারণ পদ্ধতির চেয়ে কার্প ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে স্বল্প সময়ে তিনগুণ বেশি মাছ উৎপাদন হওয়ায় আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হচ্ছেন শ শ মাছচাষি।

চুয়াডাঙ্গা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৯ হাজার ৩১২ জন মাছচাষি রয়েছেন। চাষিরা প্রতি বছর ২৩ হাজার ৬২৬ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করেন। জেলায় বছরে মাছের চাহিদা রয়েছে ২৭ হাজার ২৫ মেট্রিক টন। জেলায় পুকুর রয়েছে ১১ হাজার ৫৮ টি। মৎস্যজীবীর সংখ্যা রয়েছে ৫ হাজারের ১১২ জন।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় কার্যক্রমটি বাস্তবায়ন করছে ওয়েভ ফাউন্ডেশন। ২০১৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এ জেলায় মোট ১০৬টি প্রদর্শনীর মাধ্যমে কার্প ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে মাছ মোটাতাজাকরণ অব্যাহত রয়েছে। মাছ চাষের বিভিন্ন উপকরণ বিতরণের পাশাপাশি চাষিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছে ওয়েভ ফাউন্ডেশন। আর্থিক সহায়তাসহ পরামর্শ নিয়ে মাছ মোটাতাজাকরে অধিক মুনাফা আয় করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকে মাছচাষি।

এই পদ্ধতিতে পুকুরে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাছের পোনা দেওয়া হয়। তবে ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রামের কম ওজনের মাছ পুকুরে দেওয়া হয় না। এক বছর পর যথাযথ পরিচর্যায় বেড়ে ওঠে মাছ। এ পদ্ধতিতে অল্পদিনে বড় আকারের মাছ উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতিতে পাতলা করে মাছ চাষ করতে হয় বলে প্রতি শতাংশে ১৫ থেকে ২০টি পর্যন্ত পোনা ছাড়া হয়।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর গ্রামের মাছচাষি সুমন হালদার বলেন, তিনি দেড়শ বিঘা পুকুরে মাছ চাষ করেছেন। তার পুকুরে ছোট থেকে মাছ পরিচর্যা করে বড় করা হয়। তিনি কিছু কিছু বাছাই মাছ ৫০০ গ্রাম ওজনের ৪ বিঘা পুকুরে চাষ করেছেন। এ চাষে তার ব্যয় হবে ১০ লাখ টাকা। আর ৬ থেকে ৮ মাসে মাছ বিক্রি করে তিনি ১৫ থেকে ১৬ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন।

একই গ্রামের ইয়াকুব হোসেন বলেন,প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি মাছ চাষে সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। তারও মাছ চাষের ইচ্ছা আছে। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহায়তা পেলে তিনিও মাছ চাষ করবেন।

ওই গ্রামের মাছ চাষি পলাশ হালদার বলেন, তিনি দুই বিঘা জমির পুকুরে ছোট মাছের চাষ করেছিলেন। ছোট মাছ চাষ করে ১ লাখ টাকার ওপরে লাভ হয়েছিলো। এখন তিনিও বড় মাছ পুকুরে ছেড়েছেন, ৬ মাস পরে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশা করেন।

চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের মৎস্য কর্মকর্তা সাঈদ-উর-রহমান জানান, পিকেএসএফের অর্থায়নে ওয়েভ ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় তারা দামুড়হুদা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে মৎস্য প্রযুক্তি সম্প্রসারণে কাজ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তারা এখানে কার্প জাতের মাছ মোটাতাজাকরণ প্রদর্শনী বাস্তবায়ন করেছেন। এ প্রদর্শনীর আওতায় চাষি পূর্বের তুলনায় বেশি মুনাফা অর্জন করছেন।

চুয়াডাঙ্গা ওয়েভ ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী কামরুজ্জামান যুদ্ধ বলেন, মাছচাষিরা গতানুগতিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে আসছে। মাছ চাষ লাভজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে ওয়েভ ফাউন্ডেশন পিকেএসএফের সহায়তায় আধানিবিড় পদ্ধতিতে মাছ চাষ শুরু করেছে। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করে চাষিরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

দামুড়হুদা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারুক মহলদার জানান, জনসাধারণের আর্থিক উন্নয়ন এবং আমিষের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে মৎস্য বিভাগ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।