বর্ষবরণে ব্যাপক বিধিনিষেধ এবার যশোর প্রশাসনের

মঙ্গল শোভাযাত্রার পরিবর্তে বৈশাখ শোভাযাত্রা

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসন কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। দেশীয় সংস্কৃতি ও বর্তমান প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কার্যক্রম পহেলা বৈশাখে করা যাবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুর ইসলাম। গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এই নির্দেশনা দেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, বাংলা নববর্ষ উদযাপন উপ-কমিটির মাধ্যমে প্রতিটি সংগঠনকে তাদের অনুষ্ঠানের বিষয় ও স্ক্রিপ্ট আলোচনা করে নিতে হবে, যাতে কোনো প্রকার ত্রুটি না থাকে। বর্ষবরণ উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া জেলায় তিন থেকে সাত দিনব্যাপী কোনো মেলা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। এছাড়া যেকোনো ধরনের লটারির আয়োজন থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বছর রাষ্ট্রীয়ভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রার পরিবর্তে ‘বৈশাখ শোভাযাত্রা’ অনুষ্ঠিত হবে উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, যশোরে চারুপীঠ এই শোভাযাত্রার আয়োজন করবে। অতীতের ভুলগুলো সংশোধন করে সকল ধর্ম ও মতের ঊর্ধ্বে থেকে বাংলা বর্ষবরণ উদযাপনের কথা বলেন তিনি। সকল অনুষ্ঠান রাত ৮টার মধ্যে শেষ করারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রস্তুতিমূলক সভায় জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আছাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজিবুল আলম, জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মিজানুর রহমান খান, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, চারুপীঠ যশোরের সাধারণ সম্পাদক কাজী মামুনুর রশীদসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সভায় উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ৯টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় কালেক্টরেট চত্বরে সম্মিলিতভাবে জাতীয় সংগীত ও বৈশাখ বরণের গান ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ পরিবেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। একটি বড় ব্যানারের অধীনে সকল সংগঠন ও শ্রেণি-পেশার মানুষ বৈশাখ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করবে। শোভাযাত্রায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ, জেল পুলিশ, আনসার বাহিনী ও বাংলা ঢোলের বাদক দল বাদ্যযন্ত্র বাজাবেন। তবে শোভাযাত্রায় কোনো প্রকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চারুকর্ম প্রদর্শন করা যাবে না। কালেক্টরেট চত্বর থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি দড়াটানা, চৌরাস্তা হয়ে আদ্-দ্বীন হাসপাতালের পাশ দিয়ে যশোর মন্সি মেহেরুল্লাহ ময়দানের পাবলিক লাইব্রেরির সামনে গিয়ে শেষ হবে। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে নির্ধারিত স্থানে ও সময়ের মধ্যেই অনুষ্ঠান শেষ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সতর্ক করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, বৈশাখ উদযাপনকালে আইনশৃঙ্খলার অবনতির কোনো তথ্য থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে জানাতে হবে।

অনুষ্ঠানস্থলে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি কিশোর গ্যাংয়ের চাকুর সংস্কৃতির বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি। এমন কোনো কাজ করা যাবে না যা রাষ্ট্রের স্পিরিট ও আদর্শের পরিপন্থী।

এ বছর বৈশাখী উৎসবের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর তালিকা পরিবর্তন হতে পারে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পান্তা-ইলিশের কোনো ব্যবস্থা থাকছে না। এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে লোকজ সংস্কৃতিক উৎসব ও বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না।