সিলেট বিভাগের বর্ষসেরা ভলান্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সজীব

0

ইবি সংবাদদাতা ॥ ২০২৪ সালের সিলেট বিভাগের বর্ষসেরা ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্নাতক ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদ আহমেদ সজীব। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতকরণ, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, যুব ক্ষমতায়ন, নাগরিক শিক্ষা প্রসার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকার জন্য তাকে এই সম্মাননা প্রদান করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়নমূলক ও দাতব্য সংস্থা ভলান্টিয়ারি সার্ভিস ওভারসিজ (ভিএসও বাংলাদেশ)

বর্তমানে সজীব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা অধিকার নিশ্চিতে ‘সিটিজেন ফাউন্ডেশন’ এর ঝিনাইদহের স্কুল পরিচালক এবং ‘ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’সহ বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও তিনি জাগো ফাউন্ডেশনের ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের (ভিবিডি) খুলনা বিভাগের সভাপতি হিসেবে এসডিজি বাস্তবায়ন ও সামাজিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

সজীবের শৈশব কেটেছে সুনামগঞ্জের শর্মপাশা উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশির সাথে। ফলে খুব কাছ থেকে দেখেছেন হাওরের মানুষের জীবন সংগ্রামের গল্প। মানুষের দুঃখ দুর্দশার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তাকে ভাবিয়ে তুলেছে।

পথ খুঁজে বেরিয়েছেন কিভাবে হাওরের নিপীড়িত মানুষকে একটি সুন্দর জীবন দেওয়া যায়। সেই চিন্তা ভাবনা থেকেই শুরু হয়েছে তার স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার গল্প।

মানুষের জন্য কিছু করার আকাঙ্ক্ষা থেকে ২০১৪ সালে সজীবের স্বেচ্ছাসেবী যাত্রা শুরু। প্রথমদিকে তিনি তার বাবার সাথেই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ শুরু করেন। নিজ এলাকায় কিছুদিন কাজ করার পর পড়াশোনা জন্য নেত্রকোনায় চলে আসেন। নেত্রকোনায় তার বন্ধুদের সাথে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন ‘শিশু ছায়া’ নামক সংগঠন। সেই সাথে বিডি ক্লিনের সাথেও তিনি কাজ করেন। পরে ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয় সজীব। সেখানে ‘বাঁধনে’ কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ চালিয়ে যাওয়ায় এইচএসসির ফলাফল খারাপ হয় তার। এছাড়া প্রথমবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতেও অকৃতকার্য হয় সজীব। ফলে তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়দের কটু কথায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এতেও তিনি হাল না ছেড়ে দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষে ভর্তির সুযোগ পান।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর শুরু হয় সজীবের স্বেচ্ছাসেবার দুরন্ত কর্মস্পৃহা। ক্যাম্পাসে আসার পরেই তিনি প্রথমে খুঁজেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। প্রথমদিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত হলেও প্রান্তিক মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছা থেকে ঝিনাইদহের বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যুক্ত হন। অক্লান্তভাবে ছুটে চলেন শহর থেকে গ্রাম-গ্রামান্তরে। যেখানেই দুস্থ অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত শিশু-বৃদ্ধদের খোঁজ পায় সেখানেই সজীব তার যথাসাধ্য ছুটে যান। এসকল কাজের ফলে সজীব তার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের কাছে পরিচিত হয় ‘মানবসেবী সজীব’ নামে।

২০২৪ সালের ফেনী-লক্ষ্মীপুরের বন্যায় নিপীড়িত মানুষের সহযোগিতায় সজীব ছিলেন অগ্রসৈনিক। তিনি ও তার বন্ধুরা মিলে বন্যার্তদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনে অর্ধকোটি টাকা সহায়তা প্রদান করেন। এছাড়াও ২০২২ সালে বন্যায় ও করোনা মহামারিতেও তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। অসহায়, পথশিশু ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজ করাসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সজীব।

এ বিষয়ে সজিব বলেন, সিলেট বিভাগীয় পর্যায়ে বর্ষসেরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে নির্বাচিত হওয়া আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের এবং সম্মানের। এই অর্জনের জন্য সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ স্বীকৃতি শুধু আমার একার নয়। এটি আমার পরিবার, সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং সকল স্বেচ্ছাসেবকের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। এই স্বীকৃতি আমার দায়িত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও নিষ্ঠার সঙ্গে সমাজসেবামূলক কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবায় আগ্রহ সম্পর্কে সজীব বলেন, আমি ছোটবেলা থেকেই শিখেছি, নিঃস্বার্থভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানোই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা। এই শিক্ষা আমি প্রথম পেয়েছি আমার পরিবার থেকে। বিশেষ করে আমার শ্রদ্ধেয় আব্বার কাছ থেকে। তিনি কখনো স্বার্থের কথা চিন্তা না করে মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন, আমাদেরও সেই পথেই চালিত করেছেন। আমাদের উপদেশ দেওয়ার আগে তিনি নিজেই তা বাস্তবে অনুসরণ করতেন। অন্যের প্রতি সদয় আচরণ, সৎ পথে থাকার দৃঢ় সংকল্প এবং বিনয়ী থাকার শিক্ষা আমি তার কাছ থেকেই পেয়েছি।