কেশবপুরে নদী ও খাল পুনর্খননে পাউবোর ১৪৩ কোটি টাকার প্রকল্প

0

জয়দেব চক্রবর্তী, কেশবপুর (যশোর) ॥ কেশবপুর ও মনিরামপুরে বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে আবারও ৩টি নদী ও ১০টি সংযোগ খাল পুনর্খননে ১৪৩ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কেশবপুরবাসী নদী-খাল খননসহ নদী অববাহিকায় টিআরএম বাস্তবায়ন ও পোল্ডারে আবদ্ধ নদ-নদী উন্মুক্তের দাবি জানিয়ে আসলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তা উপেক্ষা করায় বানভাসীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার বর্ষার অতিরিক্ত পানি হরি নদীর শাখা দেলুটি দিয়ে শিবশা নদী হয়ে সাগরে পতিত হয়। এসব নদীর সংযোগ খালে পাউবোর ৯১টি স্লুইস গেট ও অসংখ্য পোল্ডার রয়েছে।

খুকশিয়া ৮ ভেন্টে স্লুইস গেটের সাথে ছোট বড় ২৭ টি বিল, নরনিয়া ৪ ভেন্টের সাথে ১০/১২টি বিল, ভবদহের ২১ ও ৯ ভেন্টের সাথে ছোট বড় ৫২টি বিল ও কোনো কোনো রেগুলেটরের সাথে একাধিক বিল যুক্ত আছে। যা পোল্ডারে আবদ্ধ থাকায় দু পাশ পলিতে ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। পোল্ডারের কারণে প্লাবনভূমির সঙ্গে নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বর্তমানে হরি নদীতে জোয়ার ওঠে না। ফলে নদীগুলো বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়ে বন্যায় রূপ নিয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন বিলের মধ্যে ৫৯টি সরকারি খাল মৎস্য ঘের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে উদ্ধার করে খনন করতে হবে।

পাউবো সূত্র জানা গেছে, চলতি বছর হরি নদীর খর্নিয়া ব্রিজ থেকে ভবদহ ২১ ভেন্ট স্লুইস গেট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার, হরি নদীর শাখা আপারভদ্রার কাশিমপুর থেকে মঙ্গলকোট ব্রিজ পর্যন্ত ১৮.৫০ কিলোমিটার, বড়েঙ্গার তিন নদীর মোহনায় জিরো পয়েন্ট থেকে কেশবপুর মনিরামপুর হয়ে রাজগঞ্জ রোর্ড পর্যন্ত হরিহর নদীর ৩৫ কিলোমিটার খননে ১শ ৩১ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, নদীর ১০টি সংযোগ খালের মধ্যে নুরানিয়া-৬.৫ কিলোমিটার, বাদুড়িয়া-৩ কিলোমিটার, শাখা নদী বুড়িভদ্রার-৫ কিলোমিটার, গরালিয়া-১.৩৫০ কিলোমিটার, কন্দর্পপুর-১ কিলোমিটার, কাশিমপুর-১ কিলোমিটার, ভায়না-১.৫০ কিলোমিটার, বিল খুকশিয়া-৭.৫০ কিলোমিটার, বুড়ুলি-৩ কিলোমিটার ও পাথরা-১.৫০ কিলোমিটার পুনর্খননে ১২ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

তিন নদী মোহনার বাসিন্দা বড়েঙ্গা গ্রামের সুকুমার বিশ্বাস বলেন, প্রতি শুষ্ক মৌসুমের ১৫ মাঘ থেকে নদীতে পলি আসা শুরু হয়। এজন্যে ১৫ মাঘের আগেই আপারভদ্রার কাশিমপুরে সাময়িক ক্রসবাঁধ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। কিন্তু বিলম্বে বাঁধ দেওয়া হয়। ফলে পলিতে নদী ভরাট হয়ে যায়। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় হরি নদীর বিল কপালিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়ন ছাড়া সকল পরিকল্পনাই অকার্যকর হবে। যে কারণে ২০১৯ সালে পাউবো নদী খননের নামে ভবদহ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে। কিন্তু ২ বছর যেতে না যেতেই আবারও তা পলিতে ভরাট হয়ে ভয়াবহ বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।

এ ব্যাপারে হরি-ঘ্যাঁংরাইল অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির সভাপতি ও সাবেক পাউবোর সদস্য মহিরউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ১৯৬০ সালের আগে এই অববাহিকায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি ঘনমিটার পানি সঞ্চালিত হতো। পোল্ডার ব্যবস্থার পরে তা কমে ২ থেকে আড়াই কোটি ঘনমিটারে দাঁড়ায়। পলির পরিমাণ ঠিক থাকলেও পানির সঞ্চালন কমে যাওয়ায় জোয়ারের প্রান্ত ভাগ থেকে পলি জমতে থাকে। একই সাথে ভূমির নিম্নগমন ও আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে জোয়ারের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অঞ্চলে ১৯৮৪ সালের পর থেকে পাউবো ডজন খানেক নানাবিধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও একমাত্র টিআরএম প্রকল্প ছাড়া, আর কোনো প্রকল্পই নদীর নাব্যতা সৃষ্টি বা ধরে রাখতে পারেনি। নদীর বুকে পলি জমা ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কেশবপুরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, বন্যা ও জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩টি নদী ও ১০টি খাল পুনর্খননে সরকার ১৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এরমধ্যে ৩টি নদীর পুনর্খনন সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে করা হবে।

ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী নদী এলাকা পরিদর্শন করেছে। এসব নদী-খাল খনন সম্পন্ন হলে এলাকা বন্যা ও জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে।