রমজানে সম্প্রীতির প্রতিচ্ছবি মসজিদের ইফতার

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ আসরের নামাজ শেষে মসজিদের আঙ্গিনায় এক রোজাদার অন্য রোজাদারের মেহমানদারির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ইফতারের খাবার পরিবেশেনের জন্য কেউ প্লেট ধোয়া-মোছার কাজে, কেউবা মুসল্লিদের বসার জায়গা প্রস্তুত করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

এরপর প্রতিবেশী মুসল্লির বাড়িতে থেকে আসা ইফতার রোজাদারদের মাঝে পরিবেশন করা হয়। কেবল তৃপ্তি নয়, সাম্য-সম্প্রীতির এক অপরূপ সেতুবন্ধ তৈরি হয় মসজিদে মসজিদে। রমজানে ধনী-গরীবে বৈষম্য অবসানে এভাবে যুগের পর যুগ ইফতার হয়ে আসছে মসজিদে মসজিদে।

সিয়াম সাধনার অংশ হিসেবে ইফতার একদিকে যেমন ইবাদতের অংশ, তেমনি মুসলিম সমাজ ও সংস্কৃতির অংশ। কেননা ইফতার সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির সুযোগ এনে দেয়। ধর্মীয় আবহ, পারিবারিক বন্ধন এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের একসঙ্গে মিলিত হওয়ার এক অনন্য উপলক্ষ্য হয়ে ওঠে ইফতার। তাই ইফতার শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক আয়োজনেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি সামাজিক সংহতির প্রতীক।

রমজানে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, মসজিদ ও বিভিন্ন সংস্থা দরিদ্রদের জন্য ইফতার বিতরণের আয়োজন করে। এটি সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একত্রিত করে এবং সহমর্মিতার চেতনাকে জাগিয়ে তোলে। চেতনাকে জাগ্রত করে ইফতার শুধু খাবার নয়, এটি আত্মসংযম, ভাগাভাগি ও আনন্দের প্রতীক। সময়ের সাথে পরিবর্তন আসলেও, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনের এই সংস্কৃতি বাঙালি মুসলিমের ঐতিহ্যে অমলিন হয়ে রয়েছে।

মুসল্লিরা জানান, আসরের নামাজের পর থেকে ইফতারের প্রস্তুতি শুরু হয় । এ কাজে গ্রামের তরুণদের বেশি উৎসাহী হতে দেখা যায়। তারা দল বেঁধে ইফতারের আয়োজনে নেমে পড়েন। কেউ পাটি বিছান, কেউ প্লেট ও পানি দেওয়ার কাজ করেন, কেউবা খাবার পরিবেশন করেন। মসজিদে চলে ধর্মীয় আলোচনা। এরই মধ্যে রোজাদার ও পথচারী মুসল্লিরা সারিবদ্ধভাবে বসে যান খাবার সামনে নিয়ে। ইফতারের আগে মোনাজাতে অংশ নেন উপস্থিত সবাই। এরপর মুয়াজ্জিন ইফতার করার ঘোষণা দেওয়া মাত্রই সবাই এক সাথে ইফতার সেরে মাগরিবের নামাজ আদায় করে বাড়ি ফেরেন।

যশোরের মনিরামপুর উপজেলার ঝাঁপা নূরানী জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব প্রভাষক মাওলানা আবু তাহের বলেন, ‘রমজানের আগে থেকেই আমার মসজিদের আশেপাশের বাড়ির মানুষেরা ইফতার করানোর জন্য তালিকায় নাম উঠান। তালিকা অনুযায়ী প্রতিদিন একেক বাড়িতে থেকে ইফতার আসে। যা দিয়ে মসজিদের সকল মুসল্লি ইফতার সারেন। মুসল্লিরা নিজেরা ইফতারে মেহমানদারি করেন।

মূলত রমজানের আগের জুমার নামাজের আগে ইফতার করানোর বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় কে কবে মসজিদে ইফতার দেবেন সেই তালিকা করা হয়। মুসল্লিদের বেশ উৎফুল্ল দেখা যায় এসময়। কে আগে ইফতারি খাওয়াবেন সেটা নিয়েও প্রতিযোগিতা দেখা যায়। মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে বিষয়টি আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করে।’

এ বিষয় যশোর জেলা ইমাম পরিষদের প্রচার সম্পাদক মুফতি আমানুল্লাহ বলেন, একে অপরকে ইফতারি করানো ইসলামে অনেক ফজিলত আছে। একজন রোজাদার অন্য রোজাদারকে ইফতার করালে সেও রোজাদারের সমান সওয়াব লাভ করে। সাহাবায়ে কেরামদের মধ্যেও এই রীতি ছিল।

ইফতার করানোর জন্য খুব বেশি আনুষ্ঠানিকতা বা ভালো মানের খাবার দিতে হবে বিষয়টি এমন না। বরং নবী করিম (সা.) খোরমা ও পানি দিয়ে ইফতার করনোর কথা বলেছেন। তাঁরা সম্প্রীতি বন্ধন গড়ে তোলার জন্য নিজের ইফতারটা অন্যকে দিতেন এবং অন্যের মাধ্যমে আসা ইফতার দিয়ে নিজের ইফতারটা সারতেন। যত সামন্য যা হবে তাই দিয়ে আমি অন্যকে ইফতার করাবো এটাই ইসলামের রীতি। রমজানে প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে ইফতারির যে খাবারটা যায় এটাকে কেন্দ্র করে একে অপরের মধ্যে মহব্বত-ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়।