ভারতীয় ভিসা সংকট : দেশি পোশাকে নির্ভরতা, দাম নিয়ে শংকা

0

আকরামুজ্জামান ॥ গত প্রায় ৬ মাস ধরে বাংলাদেশীদের জন্য ভ্রমন ভিসা বন্ধ রেখেছে ভারতীয় দুতাবাস। যেকারণে এবার ঈদে যশোরসহ বাংলাদেশীদের ভারতে আসা-যাওয়া একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। যারা হরহামেশা ভারতে যান কেনাকাটায় তাদের এবার এবারের ঈদুল ফিতরে দেশি পোশাকেই নির্ভর করতে হবে। তাই বিক্রেতারা দাম নিয়ে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেন কিনা সেই শংকা ক্রেতার।

মাসের শুরুতে বেতন বোনাস পেয়ে যশোরের ঈদের বাজাওে ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। গতবারের চেয়ে এবার দাম বাড়তি ছোট-বড়দের পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে শাড়ি, থ্রিপিসসহ প্রায় সব পোশাকের। এই অবস্থায় নির্দিষ্ট বাজেটে ঈদের কেনাকাটা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অনেককেই।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর সুতাসহ বেশির ভাগ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। তাছাড়া ভারতের ভিসা জটিলতার কারণে অনেক পণ্যও নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এসবের নেতিবাচক প্রভাবে গতবারের তুলনায় এবার ঈদের বাজারে পোশাকের দাম বেশি বলে তারা জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদ বা যেকোনো উৎসবে কলকাতার নিউমার্কেট, ট্রেজার আইল্যান্ড, সিমপার্ক মল ও আশপাশের অন্যান্য বাজারের মোট ব্যবসায়ের প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশই বাংলাদেশি ক্রেতাদের ওপর নির্ভরশীল। এসব ক্রেতাদের বড় একটি অংশ থাকে যশোরসহ দক্ষিণের জেলার বাসিন্দারা।

কিন্তু এবছর একেবারেই উল্টো চিত্র। গত ৬ মাসেরও অধিক সময় ধরে ভারতীয় ভিসা প্রাপ্তিতে জটিলতার কারণে বাংলাদেশীদের যাতায়াত কমেছে হতাশাজনক পর্যায়ে। আর এর বড় প্রভাব পড়েছে ঈদের বাজারে।
সোমবার যশোর শহরের মুজিব সড়ক, এইচএমএম রোড এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে ঈদের বাকি ২০ দিন থাকলেও প্রায় প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের উপস্থিতি রয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবছর ভিসা জটিলতার কারণে ভারতে যাচ্ছেন না বাংলাদেশীরা। যেকারণে দেশের বাজার থেকেই তারা যাবতীয় কেনাকাটা শুরু করছেন। এসব কারণে আগেভাগেই তারা বাজারে আসতে শুরু করেছেন।

তবে ক্রেতাদের দাবি এবার প্রতিটি পোশাকের দাম আগের চেয়ে বেশি। এর বড় কারণ হিসেবে তারা চিহ্নিত করছেন ভারতের ভিসা জটিলতার বিষয়টি। ক্রেতাদের দাবি এসময়ে প্রচুর লোক ভারতে গিয়ে ঈদের কেনাকাটা করতো। কিন্তু এবছর সেই সুযোগ না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা প্রতিটি পোশাকের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে যশোর শহরের মুজিব সড়কের ব্লু স্প্রিন ফ্যাশনের কথা হয় রেশমি আরা জুতি নামে এক তরুণীর সাথে। পরিবারের ছোট ভাই-বোনদের নিয়ে তিনি ওই দোকানে কেনাকাটা করতে এসেছেন। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে ১০ রোজার পরে ইন্ডিয়ায় গিয়ে কেনাকাটা করে আসছেন। তবে এবছর ভিসা জটিলতার কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না বলে তিনি জানান। বাজার পরিস্থিতি কেমন জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এবার দাম অনেক বেশি। গতবার শিশুদের যেসব পাঞ্জাবি ৫০০ টাকায় কিনেছি, এবার তার দাম চাচ্ছে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা।

একই কথা বলেন, সাজিদুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি। তিনি বলেন, মুজিব সড়ক এলাকায় বিলাসী যতসব বিপণী বিতান রয়েছে প্রতিটি দোকানেই দেশি-বিদেশি পোশাক রয়েছে। তবে এবার বেশির ভাগ দোকানে ভারতী পোশাকের পাশাপাশি পাকিস্তানি পোশাক রয়েছে। এসব পোশাকের দাম অনেক বেশি বলে তিনি জানান।

ব্লøু স্প্রিন ফ্যাশনের বিক্রয় প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম আশিক বলেন, এবার আমরা ঈদে ভালো বেচাকেনার আশা করছি। ইতিমধ্যে ক্রেতারা বাজারে আসতে শুরু করেছেন। সামনের দিনগুলোতে আরও বেশি হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে যশোরের ব্যবসায়ীদের তেমন কোনো ব্যবসা ছিলো না। এর বড় কারণ ছিলো ভারতের বাজার। কিন্তু এবার ভিসাপ্রাপ্তিতে জটিলতার কারণে সেই শঙ্কা নেই। তবে ক্রেতারা বেশি দামে পোশাক বিক্রি করা হচ্ছে বলে যে অভিযোগ করছেন তা সঠিক নয়।

পাশেই লাল সবুজ রঙের দোকানে কথা হয় কয়েকজনের সাথে। ওই দোকানের স্বত্ত্বাধিকারী মো. রিয়াজ উদ্দীন বলেন, এ বছর আমরা দেশি ব্র্যান্ডের পোশাকের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। প্রিন্স আড়, হাজী গার্মেন্ট, আরআর ফ্যাশনসহ বিভিন্ন প্রসিদ্ধ কোম্পানির পোশাক দোকানে তুলেছি। এর বাইরে পাকিস্তারী পাঞ্জাবি, কাবলি সেট, ইন্ডিয়ান বেবি সেটসহ নানা ব্র্যান্ডের পোশাক আনা হয়েছে। ক্রেতারা দেশি ব্র্যান্ডের পোশাকের প্রতি বেশি আগ্রহী বলে তিনি জানান।

পাশের দোকানের বিক্রয় প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম তপু বলেন, দেশি ব্র্যান্ডের পোশাকের বাইরে এবার ঈদের বাজারে পাকিস্তানি মালহার নামে একটি থ্রিপিসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ক্রেতাদের কাছে। এসব ড্রেসের দাম অনেকটা সহনীয় বলেও তিনি জানান। প্রতি পিস ১২শ থেকে ১৮শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাকিস্তানের শিপন জর্জেটের কাপড় কোয়ালিটি ভেদে ৫ হাজার থেকে ৯ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে তিনি জানান।

ঈদে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি সিট কাপড়ের দোকানগুলোতেও বেচাকেনা বেড়েছে। শহরের এইচ.এম.এম রোডের কাপুড়িয়াপট্টি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে। তবে ক্রেতারা অভিযোগ করেন প্রতিটি কাপড়ের দাম আগের তুলনায় অনেক বেশি। চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম বেশি বলে জানান ক্রেতারা।