যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ওয়ার্ডে কে সাধু কে চোর বোঝা দায়

বেসরকারি ফিজিও থেরাপিস্টদের অবাধ বিচরণ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডে গড়ে উঠেছে একাধিক ফিজিওথেরাপি কেন্দ্র। এসব ফিজিওথেরাপি কেন্দ্রগুলোর একমাত্র ব্যবসাস্থল যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ওয়ার্ড।

বেসরকারি ফিজিওথেরাপি কেন্দ্রের নিয়োগকৃত কর্মীরা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের টাকার বিনিময়ে থেরাপি দিচ্ছেন। বেআইনি হলেও বিনা বাধায় হাসপাতালের বিদ্যুৎ খরচ করে নিত্যদিন চলছে এ ব্যবসা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রতিরোধের ব্যাপারে কোন ভূমিকা পালন করছেন না।

সরেজমিনে জানা গেছে, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে শয্যার অতিরিক্ত তিনগুণ রোগী ভর্তি থাকছে। দিনে রাতে রোগী ও দর্শনার্থীদের ভীড় লেগেই থাকে। এর ভেতর কে দালাল আর কে দর্শনার্থী তা বোঝা যায় না। এরমধ্যে ফিজিওথেরাপি সেন্টারের কর্মীরা তাদের কাজ চালিয়ে যায়। ফিজিওথেরাপি দিতে গিয়ে তারা রোগী প্রতি ২শ টাকা হারে আদায় করছে।

এসব থেরাপিস্টোর গুলোর মধ্যে হাসপাতালের সামনে নদী গর্ভে যশোর ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পাশে রয়েছে একটি ফিজিওঘেরাপি সেন্টার। ৭/৮ জন মহিলা এ কেন্দ্রে থেরাপি দেয়ার কাজ করে থাকে। সকাল থেকে রাত অবধি তারা মেশিন নিয়ে ওয়ার্ডে ও ওয়ার্ডের বাইরে চিকিৎসাধীন থাকা রোগীদের খুঁজে বেড়ায়। যাদের থেরাপি দেয়ার প্রয়োজন হয় না তাদেরকেও ভুল বুঝিয়ে থেরাপি নিতে বাধ্য করে। চিকিৎসাহীন পড়ে থাকার চেয়ে রোগীরা এটাকে বড় চিকিৎসা মনে করে থেরাপি কর্মীদের কদর করে।

ফিজিওসেন্টারে একজন কর্মী শাম্মী আক্তার। তার সাথে থাকেন আরো ৩/৪ জন। যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর কাছে গিয়ে এমন আচরণ করেন যে রোগীরা মনে করেন তিনি যেন চিকিৎসক। থেরাপি দিলে রোগ অর্ধেক ভাল হয়ে যাবে। বেশি না মাত্র ২শ টাকা দিলেই হবে। এসব কথা বলে রোগীর কাছ থেকে ২শ টাকা করে নেন এবং ওয়ার্ডে থাকা রোগীদের সামান্য ফিজিও থেরাপি দিয়ে টাকা নিয়ে চলে যান। হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড ও পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডসহ সব ওয়ার্ডে গিয়ে তারা ফিজিও থেরাপি দেন। এভাবে ৪ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা করে আয় করেন এক একজন মহিলাকর্মী।

তারা অনেক সময় নিজেদের কলেজ ছাত্রী বলে পরিচয় দেন এবং অবসর সময়ে এ কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এভাবে ফিজিও থেরাপির কাজ করে ওই কর্মীরা লাভবান না হলেও ফিজিও থেরাপি সেন্টারের মালিকরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন। যশোরে ফিজিওথেরাপি সেন্টারের নামে কোন লাইসেন্স দেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। অথচ নির্বিঘ্নে বিনা লাইসেন্সে এ ধরনের দালালি ব্যবসা করে যাচ্ছেন ফিজিও থেরাপি সেন্টারগুলো।

ফিজিও কর্মীরা সকলেই নারী। তাদের বেশিরভাগই রোবখা পরে থাকেন। তাদের মত ছিনতাইকারী ও ধান্দাবাজরা বোরখা পরে হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করে। সুযোগ পেলেই তারা ছিনতাই করে। বিগত দিনে কয়েকজন রোরখা পরা ছিনতাইকারী আটকও হয়েছেন। এতে করে রোগীরা ওই ফিজিও থেরাপির কর্মীদের চোর বলেও সন্দেহ করেন।

এ বিষয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হিমাদ্রি শেখর সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হাসপাতালে এসে রোগীর থেরাপি দিয়ে টাকা নেয়া সম্পূর্ণ বেআইনী কাজ। আমি এটা কখনো সমর্থন করি না। আমরাও এদের ধরার জন্য খোঁজ করছি তবে তাদের সামনে পাচ্ছি না। হাসপাতালের অফিস সময় শেষ হলে ওই দালালগুলো চিকিৎসকদের অগোচরে এসে ফিজিওথেরাপি ব্যবসা করছে।