বোতলজাত সয়াবিন ছাড়া বাজার স্থিতিশীল

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন॥ আরও এক দফা দাম বেড়েছে সরু চালের। তাছাড়া রমজান মাসে একমাত্র বোতলজাত কোম্পানিগুলো ছাড়া অন্যান্য ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে রেখেছেন। দাম কমেছে খোলা সয়াবিন তেলের। কমেছে খামারের মুরগি, ডিম, বেগুন, শসা, লেবু, গাজর ও টমেটোর দাম। বাজারে এসেছে গ্রীষ্মকালীন নতুন সবজি। দাম কমতে আরও দু সপ্তাহ সময় লাগবে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।

রোববার যশোরের বড় বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এ সপ্তাহে সরু চাল বাংলামতির কেজিতে আর ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৮৮ থেকে ৯০ টাকা, মিনিকেট চালেও ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৪ টাকা। অন্যান্য চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। কাজললতা চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৪ টাকা, বিআর-৬৩ চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৪ টাকা, বিআর-২৮ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, বিআর-৪৯ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা, স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা ও হীরা চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা। যশোর চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সুশীল কুমার বিশ্বাস জানান, মৌসুম শেষ, বাজারে সরবরাহ কম ও সরু চালের আমদানি নেই বলে দাম বাড়ছে। তবে তিনি আশ্বস্ত করেন রোজার ঈদের পরে বাজারে নতুন বোরো ধানের চাল উঠলে সব ধরনের চালের দাম কমে আসবে।

রমজান মাসে রোজাদারদের ওপর যাতে বাড়তি আর্থিক চাপ না পড়ে সেদিক বিবেচনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ব্যবসায়ীরা তাদের দাম স্থিতিশীল রেখেছেন। এমনকি কোনো কোনো পণ্যের দামও কমিয়েছেন। কিন্তু এই রমজানেও বড় কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের জিম্মি করে বোতলজাত সয়াবিন তেল মজুদ করে রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রেখেছেন। তবে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিলে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে। ১৭৫ টাকা লিটার বোতল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা, ৮৫২ টাকার ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়।

বোতলজাত সয়াবিন তেলের ‘রুপচাঁদা’ কোম্পানির যশোর বিক্রয় প্রতিনিধি আসাদুজ্জামান শাকিল লোকসমাজকে জানান, তারা কোম্পানি থেকে ক্রেতাদের চাহিদামতো তেল সরবরাহ পাচ্ছেন না, তাছাড়া রমজানে বাড়তি চাহিদা থাকায় তারা খুচরা দোকানে ঠিকমতো তেল সরবরাহ করতে হিশশিম খাচ্ছেন। ক্রেতা যশোর সদরের তরফনওয়াপাড়ার বাসিন্দা ইকরাম মোল্লা জানান, তিনি অপরিচিত বলে তার কাছে দোকানিরা বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করেনি। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে তিনি খোলা সয়াবিন তেল কিনেছেন।

তবে বড় বাজারের খোলা ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী রবি ব্যানার্জি জানান, এ সপ্তাহে পাইকারি ব্যবসায়ীরা খোলা সয়াবিন তেলের কেজিতে ১০ টাকা দাম কমিয়েছেন। তিনি রোববার খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি খুচরা ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৯০ টাকা। সুপার তেল বিক্রি করছেন ১৬৫ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ টাকা, পাম তেল বিক্রি করছেন ১৬২ টাকা, গত সপ্তাহে ছিল ১৬৩ টাকা। তিনি আরও জানান, খোলা সয়াবিন তেলের দাম আরও কমে আসবে।

এদিকে বাজারে খামারের মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। প্রতি কেজিতে ১০ টাকা কমে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা, ১০ টাকা কমে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকা ও ১০ টাকা কমে লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা। তবে দেশি মুরগিতে আরও ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা। খুচরা বিক্রেতা গোলাম হাশেম জানান, মুরগি ক্রেতা কমে এসেছে, সামনে দাম আরও কমতে পারে। দাম কমেছে খামারের মুরগির ডিমের দাম। রোববার সাদা ডিম প্রতি পিস ১০ টাকা ও লাল ডিম প্রতি পিস সাড়ে ১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা ও খাসির মাংসের কেজি ১২০০ টাকায় অপরিবর্তিত রয়েছে।

এ সপ্তাহে বেগুনের কেজিতে ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, ২০ টাকা কমে শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা, প্রতি পিসে ৫ টাকা কমে লেবু বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা, কেজিতে ৫ টাকা কমে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। ১০ টাকা কমে গাজর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০ টাকা। তাছাড়া গ্রীষ্মকালীন সবজি, উচ্ছে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা, শিম ৬০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা। আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২৫ টাকা, পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩৫ টাকা ও কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা।

বড় বাজার এইচএমএম রোডের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ‘আরিফ ভাণ্ডার’ এর অন্যতম স্বত্বাধিকারী সুজিত কাপুড়িয়া বাবলু জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী দু সপ্তাহের মধ্যে বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির সরবরাহ বেড়ে দাম আরও কমে আসবে।

বাজারে সব রকম ডালের দাম অরিবর্তিত রয়েছে। চিকন দানার দেশি মসুর ডালের কেজি ১৩৫ টাকা, মোটা আমদানিকৃত মসুর ডাল ১১০ টাকা, খেসারির ডাল ১১০ টাকা, মটর ডাল ১৪০ টাকা, ছোলার ডাল ১২০ টাকা ও ছোলা ৯৫ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।