যশোর ২৫০শয্যা হাসপাতালে পায়ে পায়ে দালাল

0

বিএম আসাদ ॥ যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে দালালের তৎপরতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। জরুরি বিভাগ, বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে ওয়ার্ড সবখানে দালাল আর দালাল। দালাল ছাড়া চলছে না হাসপাতাল। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে কতিপয় আউট সোসিং কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবক। হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে দালালরা নিয়ে যাচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতালে। এই সব বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিকগুলোও হাসপাতালের সামনে অবস্থিত। বার বার হাসপাতাল দালাল মুক্ত করার ঘোষণা কোন কাজেই আসছে না।

হাসপাতালের সাথে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অর্ধশতাধিক দালাল এখন নির্বিঘ্নে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- বাবু, রাকিব, সাঈদ, বিশ্ব, আসাদ, মনির, মোস্ত, রাশেদ ও সোহান । তাদের সহযোগিতায় রয়েছে আউটসোর্সিং পরিতোষ কুমারসহ হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী। যারা সরাসরি দালাল না হলেও দালালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।

যশোর ও আশপাশের জেলা থেকে প্রতিদিন রোগী আসে এ হাসপাতালে। সকাল পৌনে ৭ টা থেকে রোগীর ভিড় জমতে থাকে হাসপাতালের বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টারের সামনে। রোগী উপস্থিতির আগেই হাজির হয় দালাল চক্র। টিকিট কাউন্টারে দায়িত্ব পালন করেন আউটসোর্সিং কর্মচারী পরিতোষ কুমার। রোগীদের শিকারে পরিণত করতে দালাল চক্র পরিতোষ কুমারের সাহায্য নেয়। এরপর টিকিট কাউন্টারে আসা রোগীর স্বজনদের কাছে শুভাকাঙ্খী সেজে সম্পর্ক তৈরি করে।

সুযোগ বুঝে ভুলিয়ে ভালিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগী নিয়ে যায় দালালরা। সেখানে সরকারি টিকিটগুলো ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জমা নেন এবং নানা রকম প্যাথলজি পরীক্ষা করিয়ে হাজার হাজার টাকা বিল করেন। দালালরা রোগ পরীক্ষার বিলের শতকরা ৪০ ভাগ কমিশন পায়। তারা সরকারি এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, সিটিস্ক্যান রুম, এক্স-রে রুম, আল্ট্রাসনো রুম, পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ড, অর্থো সার্জারি ওয়ার্ড থেকে ভালো চিকিৎসা দেওয়ার নাম করে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায় ওই সকল বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর নামেও রোগী বাইরে নিয়ে যায়। এ কাজে দালালরা হাসপাতালের কর্মীদের ব্যবহার করে। হাসপাতালের কর্মীরা রোগীদের বাইরে (ক্লিনিক) থেকে ভালো মানের টেস্ট করানোর কথা বলে রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়। কর্মচারীরা রোগীদের দালালের হাতে তুলে দেয়। তারা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসে টেস্টের নামে রোগী নিয়ে যায়। এসব রোগীর বেশিরভাগই আর হাসপাতালে ফেরে না। হাসপাতালের তাদের পলাতক হিসেবে দেখানো হয়।

এভাবে প্রতিদিন দালালরা এক হাজার টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা তো উপার্জন করে বাড়ি ফিরছে। আর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে সাধারণ রোগীরা দালালদের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছে। আর্থিকভাবে তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অন্যদিকে হাসপাতালে ১১০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। যাদেরকে গত ফ্যাসিস্ট সরকার দলীয়ভাবে পূনর্বাসন করেছিল। এ সকল স্বেচ্ছাসেবকদের কোন বেতন ভাতা দেয়া হয় না। ওয়ার্ডে কাজ করে ১০০ টাকা, ৫০ টাকা আবার কারো কাছ থেকে ২০০টাকা সেবা প্রদানের নামে আদায় করে। রে। তারাও প্রত্যেকে হাসপাতাল থেকে ক্লিনিকে রোগী ভাঙানোর কাজে ব্যস্ত থাকে। এসব স্বেচ্ছাসেবক হাসপাতালে স্বীকৃত দালাল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে মানুষের কাছে। ফলে হাসপাতালের ভেতরে ও বাইরে দালালের ছড়াছড়ি। যেখানেই যাবেন সেখানেই দালাল।

হাসপাতলের সুস্থ পরিবেশ রক্ষায় রয়েছে পুলিশ। কিন্তু পুলিশের সাথে তাদের রয়েছে ভালো সম্পর্ক। ফলে হাসপাতাল দালালমুক্ত করার কাজে কোন অগ্রগতি নেই। হাসপাতলের প্রশাসনও তেমন ভূমিকা রাখছেন না। এ পরিস্থিতিতে দূর দুরন্ত থেকে আসা সাধারণ রোগীরা দালাল থেকে নিরাপদ হতে পারছেন না। অথচ তাদের সুখ-দুঃখ এবং নির্বিঘ্নে চিকিৎসা সেবা নেয়ার সুবিধা দেখার দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।

বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হিমাদ্রি শেখর বলেন, আমরা প্রতিদিন সকালে দালালমুক্ত করার কাজ করছি। কিন্তু যখন যাচ্ছি তখন দালালরা থাকে না। পালিয়ে যায়। পুলিশ ও মাঝেমধ্যে কাজ করে। তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

হাসপাতালের আরএমও ডা. বজলুর রশীদ টুলু বলেন, তাদের কাজ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়া। আর পুলিশের কাজ অপরাধী ধরা। দালালমুক্ত করার দায়িত্ব পুলিশের।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কতিপয় সদস্য হাসপাতালে নজরদারি করছেন। তাদের গ্রুপনেতা মেজবাউর রহমান রামীম বলেন, হাসপাতালে পরিবেশ রক্ষা করা খুবই কষ্টকর। দালালদের প্রভাব বন্ধ করা যাচ্ছে না।

যশোরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের দায়িত্ব রয়েছে হাসপাতালের সুবিধা অসুবিধা দেখার। কিন্তু তারাও এ ব্যাপারে তেমন ভূমিকা রাখছেন না।