যশোর শিশু হাসপাতালের চাকরিচ্যুৎ কর্মকর্তা ফের নিয়োগ পেতে মরিয়া

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ শিশু হাসপাতাল যশোরের ম্যানেজার (প্রশাসন) হাদিউজ্জামান খান নয়ন পুনরায় চাকুরি প্রবেশ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। হাসপাতালের উপ-পরিচালক সৈয়দ নূর ই হামিমের ওপর পেশি শক্তি প্রয়োগ করছেন।

গেল ৩ ফেব্রুয়ারি হাদিউজ্জামান খান নয়ন প্রকাশ্যে দিবালোকে হাসপাতালে প্রবেশ করে পুনরায় নিয়োগ প্রদানের জন্য উপপরিচালককে চাপ প্রয়োগ করেন। এতে রাজি না হওয়ায় তাকেসহ হাসপাতালের অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যান।

এ ঘটনায় হাসপাতালের উপ-পরিচালক নূর ই হামিম কোতয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত সেবিকাদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগে এবং এস এস সি ও এইচ এস সি পাশের সনদ জাল হওয়ায় ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে তাকে চাকুরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ সালের ২৭ জুন শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার আকবর আলী খানের পুত্র হাদিউজ্জামান খান নয়ন ভূয়া এস এস সি ও এইচ এস সি পাশের সনদ নিয়ে শিশু হাসপাতাল যশোর ম্যানেজার (প্রশাসন ) পদে যোগদান করেন। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে সম্পূর্ণ ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে যায়। শুরু হয় হাসপাতালে তার নিয়োগ বানিজ্য ও সেবিকাদের যৌন নিপীড়ন। হাসপাতালের পাঁচতলার একটি কক্ষে দিনের পর দিন সেবিকাদের সাথে নিয়ে ধর্ষণ করে। ওই কক্ষটি সেবিকাদের কাছে আয়না ঘর হিসেবে পরিচিতি। যুবলীগ সন্ত্রাসী তৌহিদ চালকদার ফন্টু তার বাল্যবন্ধু কোন কিছু তোয়াক্কা করেন নি।

এই প্রতিবেদকের সাথে হাদিউজ্জামান খান নয়নের যৌন হয়রানির শিকার একাধিক সেবিকার সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। যার কথপোকথনের রেকর্ড এই প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। স্বেচ্ছায় চাকুরি ছেড়ে দেওয়া এক সেবিকা বলেন, হাদিউজ্জামান খান নয়নের যৌন নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে চাকুরি ছেড়ে দিয়েছি। নয়ন একজন চরিত্রহীন লম্টপ। আমার মত অনেকে যৌন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে চাকুরি ছেড়ে চলে গেছে। সে আমাকে যখন যৌন নিপীড়ন করে তখন আমি চাকুরি কথা না ভেবে প্রতিবাদ করি। যৌন নিপীড়নের কাজে জড়িত একজন সেবিকা ইনচার্জ। আগে থেকে সেবিকা পছন্দ করে ওই ইনচার্জকে জানিয়ে দিতো। ইনচার্জ ভর্তির রোগীর ফাইল পাঠানোর নামে হাদিউজ্জামান খান নয়নের কাছে ওই সেবিকাকে পাঠিয়ে দিতো। এরপর পাঁচতলার অপারেশন থিয়েটারের পাশে একটি কক্ষে নিয়ে নয়ন এমন পৈশাচিক কাজ করতো। অনেকে মুখ বুঝে সহ্য করেছে আত্মমর্যাদার খাতিরে। পরে বিষয়টি নিয়ে আমি যখন প্রতিবাদ করি, তখন সেই আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি প্রদান করে।

ওই সেবিকা আরও জানান, হাদিউজ্জামান খান নয়ন অবৈধ ভাবে হাসপাতাল থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। তার অবৈধ আয়ের অন্যতম উৎস ছিল নিয়োগ বানিজ্য। উপর মহলকে ম্যানেজ করে নিয়োগ বানিজ্য করতো। হাসপাতালে কোন কর্মচারী নিয়োগ পেলে তার কাছ থেকে বল প্রয়োগ করে টাকা নিতো। হাসপাতালের দুঃস্থ রোগীদের জন্য বীনামূল্যে সংরক্ষিত বেড থেকে ভাড়া আদায় করতো। যৌন নিপীড়ন থেকে শুরু করে হাদিউজ্জামান খান নয়নের সকল অপকর্মের বিষয়টি ওপর মহলকে জানালে তারা কেবল চাকুরিচ্যুত করে। কিন্তু চাকুরিচ্যুত তার উপযুক্ত শাস্তি নয়, আমি মনে করি তাকে শাস্তির বদলে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে সে আবারে চাকুরিতে ফেরার পায়তারা করছে।

এদিকে শিশু হাসপাতাল যশোরের উপপরিচালক সৈয়দ নুর ই হামিম গেল ৩ ফেব্রুয়ারি হাদিউজ্জামান খান নয়নের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে তার অপকর্মের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়। অভিযোগে বলা হয়, চাকুরিতে বহাল রাখার জন্য আমাকে অন্যায় চাপ সৃষ্টি করে। আমি তার প্রস্তাবে রাজি না হলে আমাকে মারপিট খুন জখমে হুমকি প্রদান করে।

একটি গোপন সূত্র থেকে জানা যায়, হাদিউজ্জামান খান নয়ন শিশু ফাউন্ডেশনের এক কর্তা ব্যাক্তিকে ম্যানেজ করে আবার চাকুরিতে ফিরতে তৎপর হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে একটি পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কর্মকর্তা জানান, নয়নকে ওই পদে নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা হয়েছে। যেখানে নিয়োগে শর্তে বলা হয়েছে ওই পদে নিয়োগের জন্য যেকোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক অথবা স্নাতকোত্তর পাশ হতে হবে। আবার এটি বলা হয়েছে ম্যানেজার (প্রশাসন) অথবা সুপারভাইজার পদে হাসপাতালের কাজে কমপক্ষে ১২ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীর ক্ষেত্রে ন্যূনতম এস এস সি পাশ শিথিলযোগ্য। কিন্তু জাল সনদে হাদিউজ্জামান খান নয়ন ওই প্রতিষ্ঠানে ১৩ বছরের বেশি চাকুরি করেছেন।

অভিযুক্ত হাদিউজ্জামান খান নয়নের সাথে এই প্রতিবেদক অভিযোগের বিষয় তার বক্তব্য নিতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি নামাজে যাচ্ছি। পরে আপনার সাথে কথা বলছি। কিন্ত পরবর্তীতে তিনি এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলেননি।