রমজানের আগে আরও এক দফা দাম বাড়ল চাল ও খোলা সয়াবিন তেলের

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ॥ রমজানের এক মাস বাকি থাকতেই আবারও বেড়েছে চাল ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম। তবে বেশি টাকা দিলে মিলছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। বিভিন্ন ধরনের ডালও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। গরুর মাংসের দাম বেড়ে আর কমেনি। ভরা মৌসুমে স্বাভাবিকভাবেই কমেছে শীতকালীন সবজির দাম। শুক্রবার যশোরের বড় বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অধিক মুনাফালাভের আশায় রোজাদারদের জিম্মি করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। যেহেতু বাজার তদারকি সংস্থাগুলো রমজান মাসে বাজারে অভিযানে নামে, এ কারণে বিগত কয়েক বছর ধরে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়ানোর কাজটা রমজানের আগেই সেরে ফেলেন। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

দু সপ্তাহ আগেও বড় বাজার চালবাজারে মিনিকেট চাল বিক্রি হয়েছিল মানভেদে প্রতি কেজি ৬৮ থেকে ৭২ টাকা। শুক্রবার সেই চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৬৮ টাকা থেকে ৭৪ টাকায়। দু সপ্তাহ আগে হীরা চাল বিক্রি হয়েছিল ৪৯ টাকা কেজি, শুক্রবার প্রতি কেজিতে ১ টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা। অন্যান্য চালও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার বাংলামতি চাল মানভেদে বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৮২ থেকে ৮৬ টাকা, বিআর-২৮ চাল বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৬২ টাকা, বিআর-৬৩ চাল বিক্রি হয়েছে ৭২ থেকে ৭৪ টাকা আর স্বর্ণা চাল বিক্রি হয়েছে ৫২ টাকা। যশোর চালবাজার সমিতির সভাপতি সুশীল কুমার বিশ্বাস বলেন, বোরো ধান না ওঠা পর্যন্ত চালের দাম কমার আর সম্ভাবনা নেই। তিনি জানান, বোরো ধান উঠবে এপ্রিল মাসের শেষ থেকে মে মাসের প্রথম দিকে।

এদিকে,বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট এখনও কাটেনি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের তেল আমদানিকারক কোম্পানিগুলো সরকারের কাছ থেকে আরও এক দফা সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। এ কারণে বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। এর আগে সরকার প্রতি লিটার তেলে ৮টাকা বাড়িয়েছে। শুক্রবার রুপচাঁদা কোম্পানির যশোরের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. শাকিল জানান, বাজারের চাহিদা অনুয়ায়ী কোম্পানি সয়াবিন তেল সরবরাহ করতে পারছে না। তবে বেশি টাকা দিলে দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে। শুক্রবার বারান্দিপাড়ার বাসিন্দা ক্রেতা মেহের বিশ্বাস একটি মুদি দোকান থেকে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনেছেন ১৮২ টাকা দিয়ে। অথচ বোতলের গায়ে দাম লেখা আছে ১৭৫ টাকা।

খোলা সয়াবিন তেলের দামও এ সপ্তাহে প্রতি কেজিতে ২ টাকা বেড়ে শুক্রবার বিক্রি হয়েছে ১৯২ টাকা। আর সুপার তেল বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকা, পাম তেল ১৭০ টাকা ও সরিষার তেল বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকায়। খুচরা বিক্রেতা রবি ব্যানার্জি জানান, রমজানের আগে বাজারে পাইকারি ব্যবসায়ীরা তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বাজারে রমজানকে সামনে রেখে বিভিন্ন ধরনের ডালের দামও দু সপ্তাহ আগে ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দিয়েছেন। দু সপ্তাহ আগে বড় বাজারে খেসারির ডাল বিক্রি হয়েছিল ১১০ টাকায়, কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, দু সপ্তাহ আগে ছোলার ডালের দাম ছিল ১২০ টাকা, প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা। দু সপ্তাহ আগে চিকন দানার দেশি মসুর ডালের কেজি বিক্রি হয়েছিল ১৩৫ টাকা. কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। দু সপ্তাহ আগে আমদানি করা মসুর ডাল প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছিল ১০৫ টাকা, কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। ব্যবসায়ীরা এসব ডালের দাম বাড়িয়ে আর কমাননি।

বড় বাজার কাঠেরপুলে গরুর মাংসের দামও দু সপ্তাহ আগে প্রতি কেজিতে ৫০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রেতারা আর দাম কমাননি। শুক্রবার প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকা, দু সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছিল ৭০০ টাকায়। কাঠেরপুলের মাংস বিক্রেতা ‘রাজ বিফ হাউস’ এর স্বত্বাধিকারী মো. আব্বাস জানান, হাটে গরুর দাম বেড়ে গেছে। একটা ৩ মণ ওজনের মাংসের গরু কিনতে দাম পড়ছে ৯০ থেকে ৯২ হাজার টাকা। তিনি আরও জানান, রোজার ঈদের পরে ছাড়া আর গরুর মাংসের দাম কমার সম্ভাবনা নেই। এদিকে বড় বাজারে বিক্রেতা আবুল হাশেম জানান, খামারের লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৪০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা ও দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা।

বাজারে একমাত্র সবজির দাম নাগালের মধ্যে। যেহেতু ভরা মৌসুম, এ কারণে শীতের সবজির দামও যথেষ্ঠ কমেছে। খুচরা বিক্রেতা মো. শফিকুল জানান, শুক্রবার বড় বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫ টাকা করে কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ১০ টাকা কেজি পেঁয়াজের কালি, টমেটোর কেজি ১৫ টাকা, গাজর ২০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, বেগুন ২৫ থেকে ৩০ টাকা, লাউ প্রতিটি ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

তাছাড়া এ সপ্তাহে আলুর দাম আরও কমেছে। বিক্রেতা মো. হাবিব জানান, তিনি প্রতি কেজি আলু ২০ টাকা, মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৪০ টাকা, আদা ১০০ টাকা ও রসুন ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন।
বড় বাজার কালিবাড়ি মার্কেট এলাকার পাইকারি বিক্রেতা ‘জম জম ভাণ্ডার’ এর স্বত্বাধিকারী কামালউদ্দিন জানান, তিনি শুক্রবার প্রতি কেজি আলু পাইকারি ১৫/১৬ টাকা ও মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৩০/৩৫ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। তিনি আরও জানান, আগামী ২০ ফেব্রুয়ারির পরে আলু কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণে চলে যাবে। এর পর আলুর দাম বাড়বে। আর মুড়িকাটা পেঁয়াজ থাকবে ফাল্গুন মাসের শেষ সময় পর্যন্ত। এরপর নতুন ভাতি পেঁয়াজ উঠবে জ্যৈষ্ঠ মাসে।