ঢাবি ফোরাম যশোরের পিঠা উৎসবে প্রাণের উচ্ছ্বাস

0

স্টাফ রিপোর্টার ।। ‘সারি সারি স্টল। এসব স্টলে চিতই, ভাবা, পাটিসাপটা, পাকানসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের বাহারি সব পিঠা। দলবেঁধে আসছেন আর টোকেন জমা দিয়ে মাটির শানকিতে পিঠার পরসা সাজিয়ে নিচ্ছেন এসব বাহারী পিঠার স্বাদ।

শনিবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত যশোর সরকারি মহিলা কলেজে ঢাবি ফোরাম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) যশোরের পিঠা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এই আবহ সৃষ্টি হয়। শুধু পিঠার স্বাদ নয়; একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র জুনিয়র সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলন মেলায় কেউ ব্যস্ত কুশল বিনিময়ে, কেউ বা একে অন্যকে বুকে জড়িয়ে ধরে খুলে বসেন গল্পের ঝাঁপি। কেউ কেউ ব্যস্ত ছবি তুলতেও। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর অতিথিদের শুভেচ্ছ বক্তব্যে প্রাণবন্ত অনুষ্ঠানে রুপ নেয় পিঠা উৎসব।


“এসো মেলাই কাঁধে কাঁধ, যশোরের টিএসসির স্বাদ’ এই স্লোগানে ঢাবি ফোরাম যশোরের আয়োজনে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট নবগঠিত কমিটির অভিষেক অনুষ্ঠিত হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, এদিন সন্ধ্যা থেকেই যশোরস্থ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের ঢল নামে যশোর সরকারি মহিলা কলেজে। কলেজের মাঠে বাহারি সব পিঠার নামে ছোট ছোট স্টল বসে। স্টলের পাশেই উনুনে তৈরি হচ্ছে পিঠা। মাঠের বিভিন্ন প্রান্তে বসানো হয় প্রতীকী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন, টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য্য। স্টল থেকে গরম গরম পিঠা নিয়ে মাটির শানকিতে করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব প্রতীকী স্থাপনার সামনে দলবেঁধে নেন পিঠার স্বাদ। পিঠার স্বাদ নিতে নিতে ফিরে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াকালীন নানা স্মৃতিতে। অনেকেই হাসি ঠাট্টা আর গল্পের সঙ্গে এসব স্মৃতি বন্ধী করতে দেখা গেছে সেলফি তুলতে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও যশোর সরকারি এম এম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক রেহমান আজিজ বলেন, ‘শীতের সন্ধ্যায় সাবেক শিক্ষার্থীদের আড্ডা স্মৃতিচারণে পুরো অনুষ্ঠানটি ফিরে পায় প্রাণের এক অন্যরকম স্পন্দন। সত্যিই এ এক অন্যরকম অনুভূতি। সুযোগ পেলেই শৈশবে ফিরে যাওয়া মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। অনেক দিন পর সবাইকে একত্রে পেয়ে খুবই ভালো লেগেছে। পরিবার পরিজন নিয়ে অন্যরকম অনুভূতিতে দিনটি পার করেছি।’
সাবেক শিক্ষার্থী ও শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘ এখন তো আর গ্রামীন পিঠার স্বাদ নেওয়া হয় না। এই ধরণের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মাটির শানকিতে করে পিঠা খাওয়া আর ভার্সিটির ছোট ভাই বড় ভাইদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া অন্য রকম একটা মিলন মেলা উপভোগ করছি।’

অনুষ্ঠানে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি বলেন, ‘এক ভিন্ন রকম আয়োজন। সবাই যে যার কর্মস্থলে ব্যস্ত। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা ঘটাবার একটি মাত্র প্লাটফর্ম এটি। তিনি বলেন, ‘যে বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের রুজি রুটির ব্যবস্থা করে দিয়েছে, পরিচয় দিয়েছে, যে শিক্ষা দিয়েছে সেটার বড় শিক্ষা হলো মানুষকে মানুষ হিসাবে বিবেচনা করা। ধর্মীয় বিশ্বাস আর রাজনীতিক আর্দশের কারণে মানুষে মানুষে পার্থক্য সৃষ্টি হবে সেটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা নয়। আমরা যেন মানুষে মানুষে বিভক্ত না করি, নিজেরা যেন না হই।’
ঢাবি ফোরাম যশোরের সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের উৎসব সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখে এবং সবার মধ্যে আন্তরিকতা বৃদ্ধি করে। পাশাপাশি আমাদের লোকজ সংস্কৃতির ঐতিহ্য ধরে রাখতে পিঠা উৎসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মিলনমেলা আমাদের নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করে তোলে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে এ ধরনের অনুষ্ঠান করার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।’
অনুষ্ঠানে সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নাজমুল হাসান ফারুকসহ যশোরস্থ ঢাবি ফোরামের পাঁচ তিন শতাধিক সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। রাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন উপস্থিত ঢাবি ফোরামের সদস্য ও অতিথিবৃন্দরা।