নিরাপদ ও সম্প্রীতির যশোর চায় সাধারণ মানুষ

0

মাসুদ রানা বাবু ॥ যশোরের মানুষ বরবরই পরিবর্তন এবং নতুনের পক্ষে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই জেলার মানুষ রাজনৈতিকভাবে সচেতন এবং শান্তি প্রিয়। জুলাই আগস্টের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ১৬ বছরের ফ্যাসিস্টের পতনের পর দেশের সাথে প্রিয় যশোরকেও নতুনভাবে দেখতে চান এই জেলার মানুষ। তাদের প্রত্যাশা যশোর হবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে অনন্য। দলমতের উর্ধ্বে থেকে নিরাপদ যশোর। আসছে ২০২৫ সালের এমনটি প্রত্যাশা করেন এই জেলার মানুষ। আসছে বছরের প্রত্যাশা নিয়ে দৈনিক লোকসমাজে এমনটি মতামত ব্যক্ত করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
যশোরের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও কবি ড. মহিউদ্দিন মোহাম্মদ বলেন, রাজনীতি ও শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির পীঠস্থান যশোর। কিন্তু গত দেড় দশক ধরে একটি দলের টানা শাসনে যশোর থেকে তা যেন হারিয়ে যায়। সকল কিছু দলীয়করণের মানসিকতায় হারিয়ে যায় সম্প্রীতি, স্থান পায় হানাহানি। যশোরে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেনি। যা হয়েছে ওই সময়ে। ন্যাক্কারজনকভাবে হামলা চালানো হয়েছে বিএনপির কার্যালয়ে। ধ্বংস করা হয়েছে যশোরের রাজনৈতিক সহাবস্থানের সংস্কৃতিকে। গণঅভ্যুত্থানে ধিকৃত দলটি পতন হয়েছে, জনরোষ থেকে পালিয়ে নিজেদেরকে রক্ষা করেছেন তারা শীর্ষ থেকে তৃণমূল পর্যায়ের অত্যাচারী নেতৃত্ব। আশা করছি সেই গণধিকৃত ক্ষমতার পতনের পর যশোর ফিরবে তার ঐতিহ্যে। এমন প্রত্যাশা নতুন বছরে।
জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ বলেন, ২০২৪ সালের যে ঘটনা ঘটেছে এমন ঘটনার দ্বিতীয় ঘটুক সেটি আমরা প্রত্যাশা করি না। যে কারণে আমরা চাই রাজনীতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হোক, তাহলে সমাজেও শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। গেল ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর যশোরে শান্তির সুবাতাস বইছে এটি অব্যহত থাকুক। এই শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত তার সাংগঠনিক হাতকে প্রসারিত করে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আজও তিনি সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। প্রশাসনিক শূন্যতার মাঝেও তিনি আমাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়েছেন। যেখানেই দুবৃর্ত্তরা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করেছে সেখানেই অনিন্দ্য ইসলাম অমিত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি রাজপথে অনঢ় ছিলেন। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবারের শারদীয় দুর্গোৎসব নিরাপদে নির্বিঘ্নে পালন করতে পেরেছি। শান্তি সমাবেশের মাধ্যমে তিনি আমাদের সাহস ও শক্তি যুগিয়েছেন। এই যশোরে তিনি সকল ধর্মের মানুষের সহঅবস্থান নিশ্চিত করেছেন। আগামী ২০২৫ সালে সেটি অব্যাহত থাকবে এটিই আমি প্রত্যাশা করি।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলা শাখার আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, বৈষম্যহীনভাবে সাম্যের ভিত্তিতে মানবিক যশোর তথা সমগ্র বাংলাদেশ দেখতে চাই। সকল রাজনৈতিক দল যেন দেশপ্রেমের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ এবং বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে আবদ্ধ হয়ে সমাজ এবং রাষ্ট্র পরিচালনা করে। যেখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং উদার গণতন্ত্রের চর্চা থাকবে। একজন কৃষকের সন্তানও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে। সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ সুবিধা অবারিত থাকবে।
বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি যশোর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইবাদত খান বলেন, ৫ আগস্টের আগে সমাজের অস্থিরতা, অন্যায়, অনাচার, বিচার বহির্ভূত কর্মকান্ড সমাজ এবং রাষ্ট্রেকে গ্রাস করেছিল। সেখান থেকে উত্তরণের জন্য ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সাথে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলের অবদান ছিল। শেখ হাসিনা ও তার অনেক দোসর দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও তাদের প্রেত্মারা এখানো রাষ্ট্র এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরে বসে অস্থিরতা সৃষ্টি পায়তারা করছে। দেশ শেখ হাসিনা মুক্ত হয়েছে কিন্তু তার সেই অন্যায় অপকর্ম আজও সমাজে অনেকাংশে বিদ্যামান রয়েছে। নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা আগামীতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারক ও বাহক এমন নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হোক। যাদের হাতে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিষ্কণ্টক থাকবে। তাহলে বাংলাদেশ কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে বলে প্রত্যাশা করি।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব নির্মল কুমার বিট বলেন, আমরা নিরপাদ যশোর ও নিরপদ বাংলাদেশ চাই। যেখানে সকল ধর্মের মানুষের চলাফেরা কথা বলা এবং ধর্ম পালনের স্বাধীনতা অবারিত থাকবে। নতুন বছরের আমাদের প্রত্যাশা রাজনৈতিক নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশ পরিচালিত হোক। তবে কোন ভাবেই দেশ যেন ফ্যাসিবাদের ভাবধারায় ফিরে না যায়। এমনকি ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর রাষ্ট্র পরিচালনায় কোন পর্যায়ে না থাকে। একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতন সর্বোপরি সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যে নেতৃত্বের অবদান আছে সেই নেতৃত্বের মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশ পরিচালিত হোক। দেশের সীমান্তগুলো নিরাপদ থাকুক। যাতে সীমান্তে প্রতিবেশী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে দেশের কোন নাগরিককে জীবন না দিতে হয়।