ঝিনাইদহে অনলাইন জুয়ার আসক্তিতে আত্মহত্যাসহ অপরাধ প্রবণতা বাড়ছ

0

 

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ॥ ঝিনাইদহের গ্রামাঞ্চলে অনলাইন জুয়ায় আসক্তি বাড়ছে। এই জুয়ার প্রতি কিশোর, যুবক ও যুবতীরা বেশি ঝুঁকছে। দিনে দিনে অনলাইন জুয়ার আসক্তি বাড়ছে। টাকার লোভে মানুষ অনলাইন জুয়ায় লগ্নি করে ফতুর হয়ে যাচ্ছে। এদিকে জুয়ায় সর্বস্ব হারিয়ে হতাশায় আত্মহত্যার ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মোবাইল অ্যাপস নিয়ন্ত্রণকারীদের কাছে জুয়ার মাধ্যমে পাচার হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
বিস্মকর ব্যাপার হলো, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে এ জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। চটকদার এসব বিজ্ঞাপনে সাকিব আল হাসানসহ খ্যাতনামা তারকারা অংশ নিচ্ছেন। এতে মানুষ প্রলোভিত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে অনলাইনে টাকা উপার্জনের নেশায়।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না এলাকায় জুয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে লালু মিয়া নামে এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছেন। তার স্ত্রী ছোট ছোট তিন সন্তানকে নিয় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এছাড়া ঋণগ্রস্ত হয়ে বাড়িছাড়া ও দাম্পত্য কলহের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে এ জেলায়। অনলাইনে টিকে-৭৭৭, জয়া-৯৯৯, ক্যাসিনো-৭৭৭, হাউজ অব ফান, স্টার স্লট, লাকি স্পিন স্লট, ওয়ান এক্স বেট, লুডো কিং, তিন পাত্তি গোল্ড, ২৯ গোল্ড কার্ড গেম, বেট কুইন ও ৩৬৫ বেটসহ অসংখ্য জুয়ার অ্যাপে আসক্ত হয়ে পড়ছে সব বয়সের মানুষ। এসব অ্যাপে বিকাশ ও নগদ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেন হয়। সোশ্যাল মিডিয়ার চটকদার বিজ্ঞাপনের জন্যে ব্যবহার করা হয় জনপ্রিয় তারকা, ক্রিকেটার, রাজনৈতিক নেতার ছবি।
সদর উপজেলার বেতাই গ্রামের নিলুফা খাতুন জানান, তার স্বামী লালু মিয়া মোবাইল জুয়ায় আসক্ত হন। জুয়া খেলতে গিয়ে তিনি গরু বিক্রি ও জমি বন্ধক রাখেন। জাগরণী চক্রসহ ৪টি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকা দিয়ে জুয়া খেলে হেরে যান। অবশেষে ঋণের বোঝার চাপে তিনি আত্মহত্যা করেন। এখন ছোট ছোট ছেলে- মেয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন নিলুফা খাতুন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না বাজারের মুদি ব্যবসায়ী কবির হোসেনের দোকানে প্রতিদিন দেড়-দুই লাখ টাকা বেচাকেনা হতো। জুয়াড়ি যুবকদের প্ররোচণায় তিনি জুয়া খেলতে শুরু করেন। জুয়া লাভজনক ভেবে তিনি জনতা ব্যাংক থেকে সিসি ঋণ নিয়ে ১৫ লাখ টাকা জুয়ায় হেরে যায়।
কবির হোসেন বলেন, জুয়ার নেশায় আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। এখন আমার কিছুই নেই।
সদর উপজেলার চান্দেরপোল গ্রামের তাইজেল হোসেনের ছেলে রেজাউল ইসলাম তরকারির দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তিনিও অনলাইন জুয়া খেলায় ৮০ হাজার টাকা হেরেছেন।
রেজাউল ইসলাম জানান, শুনেছিলাম মোবাইল ফোনে খেলা করে অনলাইনে টাকা উপার্জন করা যায়। সেজন্যে জুয়ার অ্যাপস মোবাইলে নিয়ে খেলতে শুরু করি। এখন আমি নিঃস্ব হয়ে পড়েছি।
বিভিন্ন সূত্র জানায়, ঝিনাইদহের বিভিন্ন বাজারে কতিপয় যুবক নিজস্ব অ্যাপস বানিয়ে জুয়ার রমরমা আসর বসিয়েছে। জুয়া খেলে নিঃস্ব যুবকরা ঋণগ্রস্ত হয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মহিদুর রহমান বলেন, জুয়া খেলার এই বিজ্ঞাপন সরকারিভাবে বন্ধ না হলে তা রোধ করা যাবে না। এটা বিটিআরসির নিয়ন্ত্রণে হওয়ায় পুলিশের কিছুই করার নেই। রাষ্ট্র উদ্যোগ নিলেই কেবল অনলাইন জুয়া বন্ধ করা সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন সেলিব্রেটির ছবি ব্যবহার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় জুয়ার বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এতে শুধু গ্রামের মানুষই নয়, অনেক বুঝদার চাকরিজীবীও আসক্ত হয়ে পড়ছেন।