জলাবদ্ধ ভবদহে এক ফালি উৎসব

0

শতবর্ষী গাউটে পূজার মেলায় হিন্দু-মুসলিমের মিলন মেলা

মজনুর রহমান,মনিরামপুর (যশোর)॥ যশোরের মনিরামপুরে ভবদহের জলাবদ্ধতার সাথে নিরন্তর লড়াই করে মানুষ যখন সর্বস্বান্ত। তখন শতবছরের ঐহিত্য ধরে রাখতে আয়োজন করা হয় সপ্তাহব্যাপী মেলার। স্থানীয়রা ”গাউটে পূজা” উপলক্ষে ভবদহপাড়ের রাজবংশিপাড়ার কালিমন্দির চত্বরে এ মেলার আয়োজন করে। হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা হলেও ভবদহের হিন্দু-মুসলিম একাট্টা হয়ে উপভোগ করছেন এ মেলা। প্রতিদিন বিকেল তিনটায় শুরু হয়ে চলছে গভীর রাত পর্যন্ত। এ মেলা এলাকায় নজির স্থাপন করেছে এক অভূতপূর্ব সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধন। এমনটিই জানা গেছে মেলা দেখতে আসা ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে।
মনিরামপুর উপজেলার ভবদহের কপালিয়া বাজারের পূর্বপাশে রাজবংশিপাড়ায় অবস্থিত কালি মন্দির চত্বরে শ্রী শ্রী মহামায়া পূজা (গাউটে পূজা) উপলক্ষে ১০ ডিসেম্বর থেকে আয়োজন করা হয়েছে সপ্তাব্যাপী মেলার। মন্দিরের সামনে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। এখানে রয়েছে সুসজ্জিত মঞ্চ। মঞ্চে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিল্পীরা ধর্মীয়সহ ভিন্ন ভিন্ন গান পরিবশেন করছে। কবিতা আবৃত্তি, নাটক ছাড়াও প্রতিরাতে অনুষ্ঠিত হচেছ যাত্রাপালা। প্রচন্ত শীত উপেক্ষা করে হিন্দু সম্প্রদায় ছাড়াও মুসলিমরাও এ মেলায় অংশ নিচ্ছেন। মন্দির চত্বর ছাড়িয়ে তিনভেন্ট স্লুইচগেটের পাশ দিয়ে বহমান প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ছোট রাস্তার দুপাশে হরেকরকমের পসরার কয়েক’শ দোকান দেওয়া হয়েছে।  এসব দোকানে চাসহ বিভিন্ন খাবার, শিশুদের খেলনা, নারী-শিশুসহ সব বয়সীদের পোশাক, জুতা, স্যান্ডেল, প্রসাদনী সামগ্রি, কাঠের তৈরি আসবাবপত্রসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী শোভা পাচ্ছে এসব অস্থায়ী দোকানে। এছাড়া রয়েছে নাগোরদোলা, পুতুল নাচসহ ভিন্ন ভিন্ন বিনোদনের ব্যবস্থা। প্রতিদিন বিকেল তিনটা থেকে শুরু হয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এ মেলা। অন্যদিকে শ্রীহরি নদীর তীরের এ মেলা হওয়ায় প্রতিদিন ডুমুরিয়া উপজেলা থেকেও বাশের সাঁকো দিয়ে নদী পার হয়ে অনেক মানুষ মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। শুধু ডুমুরিয়া নয়, পাশের অভয়নগর, কেশবপুর ও খুলনার ফুলতলা উপজেলা থেকেও মানুষ আসে মেলায়।

মেলা অয়োজক কমিটির সভাপতি শিবুপদ মন্ডল জানান,শতবছরের ঐতিহ্য গাউটে পূজা উপলক্ষে প্রতিবছর সপ্তাহব্যাপী এ মেলার আয়োজন করা হয়। সনাতন ধর্মের পাশাপাশি মুসলিমরাও এ মেলায় অংশ নেন।

কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিত কুমার সরকার জানান, জলাবদ্ধতার সাথে নিরন্তর লড়াই করে ভবদহ  জনপদের বাসিন্দাদের বসবাস করতে হয়। এখানে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে চমৎকার সাম্প্রাদায়িক সম্প্রীতি বজায় রয়েছে। ফলে হাজারো কষ্টের মধ্যে এ মেলা ভবদহবাসীকে একটু আনন্দ দেয়।

স্থানীয় মনোহরপুর ইউপি চেয়ারম্যান আকতার ফারুক মিন্টু জানান, প্রতিবছর এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ মেলা এলাকার সব ধর্মের মানুষের মধ্যে আনন্দের বন্ধন তৈরি করে।

স্থানীয় ঘের মালিক হরিচাঁদ মল্লিক জানান, এ মেলায় কোন প্রকার আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয় না। হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে চমৎকার সম্প্রীতি সম্পর্ক বজায় রয়েছে। কোরবান আলী জানান, তারা অনেকেই স্বেচ্ছাশ্রমে এ মেলার নিরাপত্তা বিধান করে থাকেন।

রোববার সন্ধ্যার সময় দেখা যায় মেলা মঞ্চে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেনসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে। শহীদ ইকবাল হোসেন জানান, শত বছরের ঐতিহ্য গাউটে পূজা উপলক্ষে আয়োজিত মেলা হিন্দু-মুসলিমরা একত্রিত হয়ে নির্বিঘ্নে পালন করে। তিনি জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে এ মেলা নির্বিঘ্ন করতে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রতিদিন মানুষের ঢল নামে মেলায়।