যশোরে নামেই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র

0

বিএম আসাদ ॥ গর্ভবতী মায়েদের জন্য বিশেষায়িত সরকারি হাসপাতাল যশোর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি ধুকছে। চিকিৎসক ও কর্মচারী সংকটে থাকা এ হাসপাতালে রোগীরা কোন সেবা পাচ্ছে না। অ্যানাসথেসিয়া (অচেতনকরণ) ব্যবস্থা না থাকায় দু’বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে অপারেশন।
সূত্র জানিয়েছেন, যশোর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগ যশোরের অধীন। এটি ২০ শয্যার একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল। গর্ভবতী মা ও শিশু চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে যশোর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম এখন অচল হওয়ার পথে। এ কেন্দ্রটিতে গর্ভবতী মায়েরা এখন আর সেবা পায় নানা। সিজার করতে হলে মায়েদের যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল কিংবা মোটা অংকের অর্থ খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হয়। অথচ যশোর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে সিজারের তেমন কোন অর্থ খরচ হয় না। বিনামূল্যে প্রায় সব ধরনের ওষুধও পাওয়া যায়। অতিস্বল্প খরচের কারণে এই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি সাধারণ মানুষের আস্থায় স্থান পেয়েছিল। দু’বছর আগেও বছরে গড়ে ৩ সহ¯্রাধিক গর্ভবর্তী মা এ কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা সেবা নিতেন। যার প্রায় অর্ধেকই ছিল সিজার কার্যক্রম। বাকিটা ছিল স্বাভাবিক প্রসব বা নর্মাল ডেলিভারি ও শিশুদের পরিচর্যা।
কিন্তু বর্তমানে একজন মাত্র মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে এ কেন্দ্রটি। মাসে গড়ে ২২০ থেকে ২৩০ জন রোগী চিকিৎসা পাচ্ছেন।
দু’বছর আগে কেন্দ্রের দায়িত্বে ছিলেন জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. আসাদুজ্জামান ও অ্যানাসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. মো. রফিকুল আলম। দু’জন চিকিৎসকই এখন অবসরে। তাদের অবসরের পর কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে এখানে বদলি করা হয়নি। একজন জুনিয়র মেডিকেল অফিসার দিয়েই চলছে জনকল্যাণমূলক সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান। ফলে ২০ বেডের ওই হাসপাতালটি এখন রোগী শূন্য অবস্থায় পড়ে আছে।
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়েছে, এখানে একটি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। সেখানে স্বাভাবিক (নর্মাল) ডেলিভারি, সিজারিয়ান সেকশন, পুরুষ বন্ধ্যাকরণ, মহিলা বন্ধ্যাকরণ করানো হয়। রয়েছে ২০টি বেডসহ লেবার রুম। বর্হিবিভাগে দেওয়ার কথা গর্ভবর্তী পরিচর্যা, প্রসব পরবর্তী পরিচর্যা, পরিবার পরিকল্পনা সেবাসমূহ, ইপিআই শিশু খাদ্য পরিচর্যা, সাধারণ রোগীর চিকিৎসা, আরটিআই, এসটিআই চিকিৎসা, এমআর সেবা, নির্যাতিত নারীর সেবা, বয়োঃসন্ধিকালীন সেবা, গর্ভপাত পরবর্তী চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য শিক্ষা। এক্ষেত্রে পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের এই মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রটি উপেক্ষিত থেকেছে বিগত সরকারের আমলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, যশোর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ৭টি পদ রয়েছে। এখন একজন মেডিকেল অফিসার, এক জন ফিমেল অ্যাটেডেন্স, একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী, একজন পিয়ন, একজন সহকারী নার্স, একজন ভিজিটর, একজন গাড়ি চালক ও একজন মিডওয়াইফারি। বর্তমানে একজন মিডওয়াইফারি, ৩ জন ভিজিটর একজন ফার্মাসিস্ট ও দুইজন আনসার সদস্য নিয়ে কোন রকম চলছে কেন্দ্রটি।
সূত্র জানায়, যশোর পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের আওতায় এ ধরনের মোট ৪টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। সবটিরই অবস্থা একই ।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট একজন জানান, যশোর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অ্যানাসথেসিয়া বিভাগে একাধিক চিকিৎসক আছেন। জনকল্যাণে সরকারি কাজে তারা সমন্বয় করে যশোর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন।
এ ব্যাপারে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলামের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, দুটি দপ্তর আলাদা। তাদের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করতে হবে।
এ ব্যাপারে যশোর পরিবার-পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক মো. দিলদার হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি যশোর মা শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের বিরাজমান সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, একজন অ্যানাসথেসিয়া চিকিৎসক থাকলে সিজার কার্যক্রম আবার চালু করা যায়। অ্যানাসথেসিয়া চিকিৎসক খোঁজ করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, যশোর মেডিকেল কলেজে, যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে অ্যানাসথেসিয়া বিভাগে একাধিক চিকিৎসক আছেন। স্থানীয় ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে জনকল্যাণের স্বার্থে ওই সকল চিকিৎসককে নিয়ে সেবা দেয়ার বিষয়টি আলোচনা করা হবে।