বৃষ্টিতে বিলম্ব শীতকালীন সবজির আবাদে

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অতি বৃষ্টিতে পর পর দুই দফা নষ্ট হয়েছে শীতকালীন সবজির আগাম আবাদ। এরপরেও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন যশোরের চাষিরা। চলছে ৩০ কোটি চারা তৈরির প্রস্তুতি। নতুন চারা তৈরি হলেও পিছিয়ে যাচ্ছে আবাদ মওসুম। ফলে শীতকালীন সবজি সংকটের শঙ্কা তৈরি হয়েছে সবজির রাজধানী খ্যাত যশোরে।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যশোরে উৎপাদিত ৭০ শতাংশ সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়। গেল সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি অসময়ের অতিবৃষ্টি ও অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে শীতকালীন সবজির আগাম আবাদ। মাঠ জুড়ে যেখানে মাচাভরা সিম, পটল, করলা থাকার কথা সেখানে চলছে চারা উৎপাদনের চেষ্টা। বিলম্ব হচ্ছে শীতকালীন সবজির চাষ, আশঙ্কা করা হচ্ছে ভরা মৌসুমেও চড়া দামের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, যশোরে ২১ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ হয়। উৎপাদন হয় সাড়ে ৪ লাখ টন সবজি। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত সবজির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ চলে যায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বাজারে যখন শীতকালীন আগাম সবজির সরবরাহ থাকার কথা সেখানে চলছে চারা উৎপাদন। এবার সদর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থাপনায় উন্নতমানের সবজির চারা উৎপাদন হচ্ছে। একাধিকবার নষ্ট হয়ে গেলেও প্রায় ৩০ কোটি চারা প্রস্তুত হচ্ছে, যার বাজারমূল্য ২৫ কোটি টাকার বেশি।
আব্দুলপুর গ্রামে যশোর-চৌগাছা সড়কের দু’পাশে তাকালেই দেখা যায় শত শত পলিথিনে ঢাকা রয়েছে সবজির বীজতলা। প্রতিবছর আষাঢ় মাস থেকে বিশেষ ব্যবস্থায় বীজতলাগুলো প্রস্তুত করে বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ বিভিন্ন সবজির বীজ বপণ করা হয়। পাঁচ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা হলেই সেগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়। এবার টানা ভারী বর্ষণে ঘটে বিপত্তি। পলিথিনের কাগজ দিয়ে বৃষ্টির ঝাপটা থেকে সুরক্ষা দিতে পারলেও জলাবদ্ধতায় সেগুলো নষ্ট হয়ে যায়। কোনো কোনো বীজতলায় তিন থেকে চারবারও বীজ বপন করতে হয়েছে।
সদর উপজেলার দোগাছিয়া গ্রামের আক্কাস আলী ও কুদ্দুস আলী নামে দুই কৃষক বলেন, ‘আব্দুলপুরের সবজির চারার মান ভালো হওয়ায় আমাদের মতো দূরদূরান্ত থেকে অনেকেই এখানে চারা সংগ্রহ করতে আসেন। কিন্তু একই চারা একাধিকবার কিনতে গিয়ে সবজি চাষে দেরি হয়ে যাচ্ছে, এগুলো উঠবেও দেরিতে। এ কারণে ভরপুর শীতেও হয়তো মৌসুমি শাকসবজির সংকট থাকবে। দামও থাকতে পারে নিয়ন্ত্রণহীন।’
নজরুল ইসলাম নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বরে পাতাকপি, বেগুন ও ফুলকপির চারা কিনেছিলাম। ভারী বৃষ্টিতে সব মরে গেছে। আবারও চারা কিনছি। এতে সবজির উৎপাদন খরচ দ্বিগুণ হওয়ার পাশাপাশি তা সংগ্রহেও বিলম্ব হবে।’
কৃষক জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার তিন বিঘার বীজতলা আছে। সেখানে একে একে তিনবার বীজ রোপণ করার পর তা অতিবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন আমাকে লোকসান পুষিয়ে নিতে ১ টাকার চারা ৪ টাকায় বিক্রি করতে হবে।’
শাহজাহান হোসেন বলেন, যশোরে ভালো মানের বীজ পাওয়া কঠিন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে উন্নত বীজ সংগ্রহ করে চারা রোপণ করা হয়। সেই বীজতলা নষ্ট হয়ে যে লোকসান হয়েছে, তা তো কিছুতেই পূরণ করা যাবে না। টানা বৃষ্টিতে দু-তিনবার বীজতলা ভেসে যাওয়ায় বাজারে বীজেরও সংকট দেখা দিয়েছে। এ জন্য ৪০০ টাকা কেজির বীজ ৮০০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে না।
শীতকালীন এসব সবজির বাজারে উঠতেও দেরি হবে। বাজারে সবজির ঘাটতি লেগেই থাকবে। যেখানে চারার দাম ৪গুণ বেড়েছে যেখানে সবজি বাজারের অস্থিরতার আশঙÍা থেকেই যাচ্ছে।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশিক্ষণ) আবু তালহা বলেন, ‘উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ও চারার গুণগত মান ঠিক রেখে আব্দুলপুরের চাষিরা ৯ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজির চারা উৎপাদন করেন। বৃহত্তর যশোর অঞ্চল ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বড় কৃষক-খামারিরা এখান থেকে চারা কেনেন। তবে গত জুলাই থেকে ধারাবাহিক বৃষ্টির কারণে বেশ ক্ষতি হয়েছে। তাদের লোকসান কিছুটা হলেও পুষিয়ে দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন শাকসবজির বীজ, সার প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) সমরেন বিশ্বাস বলেন, যশোর অঞ্চলে সাধারণত শীতকালীন সবজি আগাম চাষ হয়। দফায় দফায় অতিবৃষ্টির কারণে এ বছর চাষিদের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। সবজি চাষ বিলম্ব হতে পারে।