যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল চিকিৎসা সরঞ্জামাদির খবর নেই আছে বিল ভাউচার

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্টোরের মাল স্টোরেই থাকছে শুধু খাতায় উঠছে নতুন পণ্যের হিসেব। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ক্ষেত্রে চলছে এই আজব কারবার। রোগীদের প্রয়োজনে সরকারি গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলো সরবরাহ না করে বলা হচ্ছে কিনে আনতে। স্টোরের পণ্য ফুরাচ্ছে না। এরপরেও নির্দিষ্ট সময়ে স্টোর খালি উল্লেখ করে খাতার নতুন পণ্য যোগ করা হচ্ছে। পণ্য সরবরাহ ছাড়ায় খাতা ও বিল ভাউচার পরিবর্তনের এ কারবার চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে এ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে হাসপাতালের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছেন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের বাসভবনে তত্ত্বাবধায়ক থাকেন না। থাকেন বাইরে। তত্ত্বাবধায়কের বাসভবন এখন হাসপাতালের স্টোর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ওই ভবনের ভেতর জমা রাখা হয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদি গজ, ব্যান্ডেজ, ক্যাথেটার, প্যান্টোপ্রাজল ইনজেকশন, ট্যাবলেট সেফুরক্সিম। এছাড়াও তৃতীয় শ্রেণির কোয়ার্টারেও রাখা হয় চিকিৎসার এসব উপকরণ। হাসপাতালের মডেল ওয়ার্ড সংলগ্ন মূল স্টোরে এসব উপকরণ রাখার জায়গা না থাকায় ওই সকল ভবনে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ ও অন্যান্য মালামাল রয়েছে। সংকট নেই ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামাদি। এরপরেও চলছে সংকট। ওষুধ ও গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলার কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চিকিৎসা সরঞ্জামাদি(এমএসআর) টেন্ডার আহ্বান করা হয়। ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশে নতুন ওই মালামাল বাবদ বিল করে টাকা আত্মসাত করা হবে এবং স্টোরে জমা থাকা পুরনো মালামালগুলো নতুন সরবরাহ দেখানোর পুরনো কৌশল এবারো কার্যকর হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট এক কর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রোগীদের চিকিৎসা সেবায় উপকরণ ঠিকমতো ব্যবহার না করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার এ কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে অনেক আগে থেকে। যে কারণে কোটি কোটি টাকার ওষুধ ক্রয় করেও হাসপাতালে ওষুধ, গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলার সংকট কখনো দূর হচ্ছে না। এ ধরনের সৃষ্ট সংকটের কবলে পড়ে কেবল রোগীরা তাদের ন্যায্য প্রাচ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। কিন্তু এর সুরাহা হচ্ছে না। কুটকৌশলের কবলে পড়ে কেবল রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, পকেট ভারী হচ্ছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
একটি সূত্র জানায়, গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের পর থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, নিচের সেমি ও.টি, সার্জারি পুরুষ বিভাগের সেমি ও.টি, মহিলা সার্জারি বিভাগের সেমি ওটি ও মডেল ওয়ার্ডের সেমি ওটিতে গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা এসব উপকরণের সরবরাহ বন্ধ ছিল। মাঝে মধ্যে দু একটি সরবরাহ দেওয়া হতো তাতে রোগীদের ন্যুনতম প্রয়োজন মিটতো না। ওই সব বিভাগে কর্মরত কর্মচারীরা উপকরণ বাইরের ফার্মেসি থেকে ক্রয় করে এনে তাদের প্রয়োজনীয় সেবা নেন । এখনো সে প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে। মহিলা সার্জারি ওয়ার্ড, মহিলা পেয়িং ওয়ার্ড, পুরুষ পেয়িং ওয়ার্ড ও মেডিসিন ওয়ার্ডে মালামাল খাতায় সরবরাহ দেখানো হয়। এসব মালামাল পুনরায় ঠিকাদারের নিকট বিক্রির অভিযোগ আছে।
‘সংকট থাকায় হাসপাতালে গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলা সরবরাহ করা হয় না’ এমন অভিযোগে সত্যাতা অনুসন্ধানে শুরু করেন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হারুন-অর-রশীদ নিজেই। ডা. মো. হারুন-অর-রশীদ জানান, গজ ব্যান্ডেজ ও তুলার কোন সংকট নেই।
এরপর কয়েকদিন রোগীরা চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি সরবরাহ পান। তবে সরবরাহকৃত এসব গজ, ব্যান্ডেজ ও তুলা লালচে আকার ধারণ করায় চিকিৎসারা তা ব্যবহার করেননি। ফলে রোগীদের আগের মতই গজ ব্যান্ডেজ কিনে আনতে হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত স্টোরকিপার রতন কুমার সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি যে মালামাল দিচ্ছি তা আগের স্টোরকিপার সাইফুল ইসলামের রেখে যাওয়া। নতুন কোন মালামাল আসিনি।