অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য যশোর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

0

স্টাফ রিপোর্টার ।। অপরাধের দুর্ভেদ্য অঞ্চল হিসেবে পরিচিত যশোর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব বারান্দীপাড়া, মোল্লাপাড়া ও সিটি কলেজ পাড়ায় অলিগলির শেষ নেই। ভৈরব নদ সংলগ্ন এসব এলাকা অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলো আওয়ামী লীগের বিগত ১৬ বছরের শাসন আমলে। শীর্ষ এক সন্ত্রাসীর এলাকা হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সব সময় আতঙ্ক বিরাজ করতো।

ওই অঞ্চলের সন্ত্রাসীদের একটি অংশকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এবং একই দলের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ অপর অংশের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রায় ২ মাস পার হলেও এসব এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আটকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ না নেওয়ায় শান্তিপ্রিয় মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের বিগত ১৬ বছরের শাসন আমলে পূর্ব বারান্দীপাড়া, মোল্লাপাড়া ও সিটি কলেজ পাড়ায় এমন কোনো অপরাধ নেই যা সংঘটিত হয়নি। খুন, বোমাবাজি, অস্ত্রের ব্যবসা, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আর মাদক ব্যবসার স্বর্গরাজ্য ছিলো এসব এলাকায়। সন্ত্রাসী ও অস্ত্র ব্যবসায়ী ও মাদক ব্যবসায়ীদের একটি অংশ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের অনুসারী ছিলেন। আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিংয়ে তাদের সরব উপস্থিতি ছিলো।

পূর্ব বারান্দী সরদার পাড়ার কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন রাজিব ওরফে বাবা রাজিব (ইয়াবা ব্যবসায়ের কারণে বাবা জাকির হিসেবে পরিচিত) রীতিমতো এলাকায় অফিস খুলে মাদকের ব্যবসা করতেন। পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী তালেবকে শেল্টার দিতেন এই বাবা রাজিব। এ জন্য তালেবের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা পেতেন তিনি।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজিবের নেতৃত্বে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী কসাই মনিরসহ তাদের সহযোগীরা ওই এলাকায় বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছিলেন। অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের সঙ্গী সুজায়েত শামীম সুমনকেও মারধর করেছিলেন এই সন্ত্রাসীরা। পূর্ব বারান্দী মাঠপাড়ার বাসিন্দা কসাই মনির দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদকের ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তার স্ত্রী শ্যামলীও একজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী। তিনি পুলিশের দালাল হিসেবেও পরিচিত। তাছাড়া এলাকার একটি কিশোর সন্ত্রাসী গংকে তিনি লালন করতেন। কুখ্যাত শ্যামলীকেও বিগত দিনে আওয়ামী লীগের মিছিল মিটিংয়ে দেখা যেতো।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের অনুসারী মোল্লাপাড়া ঢাকা রোডের আউয়াল মিস্ত্রির দুই ছেলে শাকির ওরফে শাকিল এবং আরিফ দুই জনই অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ে অভিযুক্ত। ইতোপূর্বে কয়েকবার অবৈধ অস্ত্রসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছেন শাকির ওরফে শাকিল। বেশ কয়েক বছর আগে সদর উপজেলার পাঁচবাড়িয়াস্থ সিনজেনটা অফিসের কাছে সন্ত্রাসীদের পিস্তলের গুলিতে নিহত হন ইছালী ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মোশাররফ হোসেন। পরে সিআইডি পুলিশের তদন্তে উঠে আসে অস্ত্র ব্যবসায়ী আরিফের সরবরাহকৃত পিস্তলের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন মোশারফ হোসেন।

মাদক ব্যবসায়ী ও অস্ত্র ব্যবসায়ী কারা ?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা জানান, শাহীন চাকলাদারের অনুসারী অসংখ অপরাধী রয়েছেন পূর্ব বারান্দীপাড়া, মোল্লাপাড়া ও সিটি কলেজপাড়ায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগীরা হলেন- শাকির ওরফে শাকিল, আরিফ, জাকির হোসেন রাজিব ওরফে বাবা রাজিব, শ্যামলী, কসাই মনির, মোমিন ওরফে পাউডার মোমিন ওরফে বোমা মোমিন, সনি, নাছির ওরফে কিলার নাছির, মাদক কামরুল, শিমুল প্রমুখ।

ওই অঞ্চলে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যাও প্রচুর। তার অনুসারী সন্ত্রাসী জিতুর হাতে খুন হয়েছিলেন তাঁতি লীগের নেতা কাকন। ১ নম্বর ওয়ার্ডের অপসারিত পৌর কাউন্সিলর সাইদুর রহমান রিপন ওরফে ডিম রিপন সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। বেশ কয়েক বছর আগে ঢাকা রোড তালতলায় এলাকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে ও বোমায় নিহত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা ও টায়ার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম। এ ঘটনায় সাইদুর রহমান রিপনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি পুলিশ।  মোল্লাপাড়ার আলোচিত খোঁড়া নান্নু ওরফে গাঁজা নান্নু সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

ওই অঞ্চলে অন্য সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ী কারা ?

স্থানীয়রা জানান, সিটি কলেজ পাড়ার শাহ আলম, বারান্দী নাথপাড়ার জাকির, সোহেল, আল আমিন, ২ নং কলোনির সাগর বেগম, রাজন, নাছি, সজন, হাটকাটা বেড়ে, ক্যাপ্টেন ওরফে টাওয়ার ক্যাপ্টেন, মন্ডল, আরমান, বারান্দী মাঠপাড়ার ইউনুস, বক্কার, জীবন, রাসেল, বড় মনি, রুমি, বারান্দী বউ বাজার এলাকার আরশাদ আলী, বারান্দীপাড়া কাঁঠালতলা এলাকার আব্দুল গফুর, সাত্তার প্রমুখ। এছাড়া ওই এলাকায় কয়েকটি ছিনতাইকারী চক্র এবং কিশোর সন্ত্রাসী গ্যাং রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানায়, আলোচিত এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর গোটা ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় প্রভাব রয়েছে। তার সহযোগীদের বিভিন্ন ভাবে শেল্টার দিয়ে আসছেন আলোচিত একজন পরিবহন শ্রমিক নেতা।