যশোর জেল রোডে দুর্ধর্ষ জুয়েল বাহিনীর দৌরাত্ম্য

0

বিশেষ প্রতিবেদক॥ যশোর শহরের ঘোপ জেল রোডে সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান জুয়েল ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে। এক যুগেরও বেশি সময় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অপ্রতিরোধ্য এই বাহিনী। সাধারণ মানুষ এদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার দেড় -দু বছরের মাথায় জেল রোডে আবির্ভাব ঘটে জুয়েল বাহিনীর। কে এই জুয়েল? কী উদ্দেশ্যে এই বাহিনী গঠন? কারা এই বাহিনীর সদস্য? এদের শক্তি যোগায় কারা? এমন নানা প্রশ্ন নিয়ে শেকড় সন্ধান চালানো হয়। অনুসন্ধানে ভয়ংকর তথ্যও মেলে।
ঘোপ ধানপট্টির বাসিন্দা লন্ড্রি ব্যবসায়ী খলিলুর রহমানের ছেলে ইসমাইল হোসেন জুয়েল। মূলত সন্ত্রাসের মাধ্যমে এলাকায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে জুয়েল নিজ নামেই সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তোলে। এই বাহিনীর অন্যতম সদস্য আরিফ, শাহাদাত ও আইয়ুব। দুর্ধর্ষ প্রকৃতির এই সন্ত্রাসীদের সাথে হাত মেলায় আরও অন্তত ২০ জন। জেল রোড এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় ও মাদক ব্যবসা এই বাহিনীর প্রধান কাজ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট শোক দিবস, শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, শেখ রাসেলের জন্মদিন, ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, পহেলা বৈশাখসহ নানা দিবসের নামে জুয়েল বাহিনী জেল রোডের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে থাকে। চাঁদা দিতে আপত্তি জানালে তাকে হয়রানি করা হয়। কোন কোন সময় সন্ত্রাসী জুয়েল সহজ সরল ব্যবসায়ীদের দোকানে আগ্নেয়াস্ত্র রেখে অর্থবাণিজ্য করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে উপশহর ফাঁড়ি পুলিশ সন্ত্রাসীদের পক্ষ নেওয়ায় ভয়ে কেউ টু-শব্দ করতে পারেননি। এদের দ্বারা বিরোধী দল-মতের মানুষজনও নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
সূত্র মতে, জেল রোড বেলতলা এলাকার বাসিন্দা মৃত মঈনুদ্দিনের দোতলা বাড়ির নিচতলায় রয়েছে জুয়েল বাহিনীর টর্চার সেল। এখানে চাঁদা বা মুক্তিপণ আদায়ের জন্যে লোকজন ধরে এনে নির্যাতন করা হয়। এছাড়া এখানে মদ ও নারী নিয়ে ফুর্তির বিষয়টিও কারো অজানা নয়।
সূত্র আরও জানায়, এলাকায় ফেনসিডিল, ইয়াবা ট্যাবলেট ও হেরোইনের ব্যবসার নিয়ন্ত্রক এই জুয়েল বাহিনী। উপশহর ফাঁড়ি পুলিশকে ম্যানেজ করে চলে এই অবৈধ ব্যবসা। রাতে এদের সশস্ত্র মহড়া জনমনে সৃষ্টি করেছে চরম আতংক। এরা পথচারীদের টাকা পয়সা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যায়ন মালামাল ছিনতাই করেছে বহুবার। এদের হাতে বেশ আগে খুন হন এক ইজিবাইক চালক। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে ফাঁড়ি পুলিশের সহায়তায় তা ধামাচাপা দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, দুর্ধর্ষ জুয়েলের কাছে পিস্তলসহ তার সহযোগীদের কাছে নানা ধরনের অস্ত্র রয়েছে। প্রকাশ্য মহড়ার সময় অনেকে এসব অস্ত্রপাতি দেখেছেন। এতদিন পুলিশের সাথে এই সন্ত্রাসীদের সখ্যের কারণে কেউ প্রতিবাদ বা ব্যবস্থা গ্রহণের সাহস পাননি।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুর্ধর্ষ হওয়ার কারণে জুয়েল বাহিনীর প্রতি আশীর্বাদ ছিল আওয়ামী লীগের একজন সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় শীর্ষ নেতার । আর এই আশীর্বাদ পেয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে জুয়েল ও তার সহযোগীরা। এই নেতারা নিজেদের স্বার্থে অন্যের জমি দখল, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ঘায়েল করাসহ নানা অনৈতিক কাজে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, সম্প্রতি স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে জুয়েল ও তার সহযোগীরা গা ঢাকা দিয়েছে। যদিও জুয়েলকে মাঝেমধ্যে জেল রোড়ে দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে তিনি যশোর সদরের বাহাদুরপুরে শ্বশুরবাড়িতে থাকছেন বলে জানা গেছে।
সূত্রের দাবি, সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান জুয়েলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের পাশাপাশি অপরাধের অনেক তথ্য মিলবে। এ ব্যাপারে প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ।