চোখে গুলিবিদ্ধ আহাদ সেদিনের ঘটনায় এখনো শিউরে ওঠেন

0

মজনুর রহমান,মনিরামপুর(যশোর)॥ ৫ আগস্ট ঢাকার রামপুরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে চোখে গুলিবিদ্ধ হন বিসিএস পরীক্ষার্থী মনিরামপুরের আহাদ আলী। বামচোখে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান হাসপাতালে। দুই দফা অস্ত্রোপচারের পরও তার চোখ খেকে গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। পুলিশের ছোড়া গুলি এখনও চোখে বিদ্ধ অবস্থায় আহাদ আলী অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। তার এখন প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসা। আহাদের আক্ষেপ স্বৈরাচার সরকারের পতন হলেও এ পর্যন্ত কেউ তার খবর নেয়নি। এদিকে আহাদ আলীর সুস্থতা ও লেখাপড়া নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন তার স্বজনরা।
স্থানীয়রা জানান, মনিরামপুর উপজেলার ঢাকুরিয়া ইউনিয়নের বলিয়ানপুর গ্রামের মৃত সাহেব আলীর ছোট ছেলে আহাদ আলী(২৭) যশোর এমএম কলেজ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার মালিবাগে একটি বিসিএস কোচিং সেন্টারে ভর্তি হন। পাশে একটি ম্যাচে থেকে তিনি কোচিং সেন্টারে লেখাপড়া করে আসছিলেন। এরই মধ্যে আহাদ আলী তার সহপাঠীদের সাথে যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। সেদিন (৫ আগস্ট) গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন আহাদ হোসেন। আন্দোলনে সফলতার কোনো আনন্দ তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। চোখের সামনে অসংখ্য গুলিবিদ্ধ হয়ে সহপাঠীসহ সাধারণ মানুষের মৃত্যুর দৃশ্য যেন তিনি ভুলতেই পারছেন না। মৃত্যুর দৃশ্য চোখে ভেসে উঠলেই শিউরে উঠছেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে আহাদ আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি চোখের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। পাশে বসে থাকা আহাদের মা রাজিয়া বেগমের চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।
সেদিনের লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আহাদ আলী বলেন, প্রতিদিনের মত ৫ আগস্ট সকালে ম্যাচ থেকে সহপাঠীদের সাথে তিনি ঢাকার রামপুরায় মিছিলে অংশ নেন। এক পর্যায়ে ছত্রভঙ্গ করতে ব্যর্থ হয়ে পুলিশ গুলি চালায়। এ সময় আহাদ বামচোখে গুলিবিদ্ধ হন। সহপাঠীরা তাকে উদ্ধারের পর মালিবাগের খিদমাহ চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোখ থেকে গুলি বের করতে হবে।
আহাদের বড় ভাই কলেজ শিক্ষক মুরাদ হোসেন জানান, চিকিৎসকের পরামর্শে আহাদকে ভর্তি করা হয় গ্রিন রোডের ভিশন চক্ষু হাসপাতালে। সেখানে দুইদফা অস্ত্রোপচার করা হলেও চিকিৎসকরা আহাদের চোখ থেকে গুলি বের করতে পারেননি। তাই আহাদকে তার স্বজনরা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসেছেন।
আহাদ আলী আক্ষেপ করে বলেন, আমরা ছাত্ররা যে আন্দোলন করে খুনি হাসিনার পতন ঘটিয়েছি তার ফায়দা লুটছে কেউ কেউ। এখন পর্যন্ত কেউ আমার খোঁজ-খবর নেননি। অনেকে আনন্দ মিছিলসহ লুটপাটে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আহাদ আলীর বিষয়টি জানা ছিলনা উল্লেখ করে থানা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল হোসেন তার চিকিৎসার সার্বিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।