শ্যামনগরের লবণাক্ত জমিতে এখন সবুজের সমারহ

0

শেখ আব্দুল হাকিম,শ্যামনগর (সাতক্ষীরা)॥ শ্যামনগর উপজেলা চিংড়ির জন্যে প্রসিদ্ধ। ৯০- এর দশকে লবণ পানি উঠিয়ে চিংড়ি চাষের কারণে কৃষি খাত বিলুপ্তির পথে। গত কয়েক দশক ধরেই লবণাক্ততার কারণে জমিতে ফলে না ফসল। মিঠাপানির আধারগুলো গেছে শুকিয়ে। গ্রামের পাশ দিয়ে খাল প্রবহমান থাকলেও পানির অভাবে শস্য আবাদ করতে পারেন না উপকূলের কৃষকরা। শুষ্ক মৌসুমে দিগন্তজুড়ে দেখা দেয় খরা। এরই মাঝে সিনজেন্টা বাংলাদেশ লিমিটেড গো গ্রো প্রকল্পে প্রশিক্ষণসহ আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছেন এই এলাকার কৃষকরা। পতিত ফসলী জমির কোনায় পুকুর করে মিঠা পানির সংস্থান করছেন তারা। সেই পানি দিয়ে এখন ফলানো হচ্ছে শস্য। ভরে উঠেছে শস্যের ক্ষেতগুলোতে ধান,তরমুজ ও শাস -সবজিতে। এক ফসলী জমিগুলো এখন তিন ফসলে রূপান্তরিত হচ্ছে।
এই পরিবর্তনের লাভবান হচ্ছেন সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলা কাশিমাড়ী ইউনিয়নের খুটিকাটা গ্রামের কৃষকরা। আগে এখানকার কৃষকরা শুধুমাত্র আমন ধান আবাদ করতে পারতেন। এখন সেই লবণাক্ত জমিতে তরমুজ,লাউ, কুমড়ো, পেঁপে, ঢেঁড়শ, পুঁইশাক, উচ্ছে, শশা ও লালশাকসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি উৎপাদন করে সফল হয়েছেন তারা। তারা সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখাচ্ছে আশপাশের কৃষকদের। পতিত জমি এখন আশা দেখাচ্ছে। আগামীর জন্যে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা।
খুটিকাটা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক নির্মল সরকার, রবিন্দ্র নাথ সরকার ও নিহার সরকার জানান, লবণাক্তার কারণে তাদের গ্রামের শ শ হেক্টর কৃষি জমি পতিত থাকে। ফসল ফলে না ঠিকমত। গত ২৩-২৪ অর্থ বছরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই),বিনা,ডিএইর এসএসি প্রকল্প ও এসআরডিআইসহ সিনজেনটা প্রকল্পের সহযোগিতায় লবণাক্ত জমিতে ফসল উৎপাদন করে এলাকায় রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছেন কৃষকরা। গ্রামের অধিকাংশ কৃষককে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে পুকুর খনন করে দিয়েছে সিনজেন্টা।
এছাড়া আবাদের জন্যে ভার্মি কম্পোস্ট সার প্লান্ট, শস্য বীজ ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষকরা লবণাক্ত জমিতে বৃষ্টির পানি ব্যবহার করে নানা প্রকার ফসল উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে প্রতি বিঘা জমিতে একেক জন কৃষক ৩০-৫০ হাজার টাকা লাভ করেছেন। অধিকসংখ্যক পুকুর খনন এবং গ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খালগুলো পুর্নখনন করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে বারো মাসই সবজিসহ বিভিন্ন প্রকার ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
এ বিষয়ে সিনজেন্টা বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক শহীদুল ইসলাম ও উপজেলা সেলস প্রমোশন অফিসার সাঈদ হাসান বলেন, উপকূলের পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপজেলা কৃষি অফিসের পরার্মশে কাশিমাড়ি ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে ১২০ জন কৃষককের শস্য আবাদে ১৩টি পুকুর খননসহ বীজ, ভারমি কম্পোস্ট, সোলার ইরিগেশন ও বিভিন্ন গাছের চারা বিতরণসহ কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে সিনজেনটা। এতে করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে লবণাক্ত জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. নাজমুল হুদা বলেন, ১২টি ইউনিয়নে ১৬৫৩৯ হেক্টর জমিতে আমন, বোর মৌসুমে ২৩১০ হেক্টর আউশ ১০৫ হেক্টর ধান চাষ হয়। আর পাঁচটি ইউনিয়নে রবি শস্যের চাষ হয়েছে ১৫৬ হেক্টর জমিতে। সরকারিভাবে প্রতি বছর প্রান্তিক কৃষকের জন্যে প্রদশনীমূলক কিছু প্যাকেজ আসে। এ বছর ২৮শ বিঘা জমিতে প্রনোদনা হিসেবে সার, বীজসহ কৃষি উপকরণ দেওয়া হয়েছে। পানি সমস্যার কারণে বোরো মৌসুমে কৃষকরা ধান চাষ করতে পারেনা। এখানকার কৃষকদের ধান চাষে আগ্রহ আছে। তবে পানির সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা হলে এখানকার কৃষকরা কৃষি থাতে বিপ্লব ঘটাবেন বলে তিনি মনে করেন।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরাÑ৪ আসনের এমপি এসএম আতাউল হক দোলন বলেন, উপকূলে বসবাসরত মানুষদের বারো মাসই নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেল করতে হয়। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও খরার কারণে এসব উপকূলীয় জনপদে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের টিকে থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার উপায় বের করতে হবে।