শীর্ষ চরমপন্থী শিমুল ভুইয়াসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে অভয়নগরের রকিবুল,সুব্রত হত্যা মামলার চার্জশিট

0

মীর মঈন হোসেন মুসা ॥ সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় আটক আলোচিত শীর্ষ চরমপন্থী নেতা শিমুল ভুইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুইয়া যশোর ও খুলনা অঞ্চলের ৬টি হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে যশোরের অভয়নগর উপজেলায় দামুখালীতে সুব্রত মন্ডল ও দত্তগাতিতে খন্দকার রকিবুল ইসলামকে গুলি চালিয়ে হত্যায় তার সম্পৃক্ততা ছিলো। চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ ওই দুই চরমপন্থীকে হত্যা করা হয় বলে ডিবি পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে।
নিহত সুব্রত মন্ডল অভয়নগর উপজেলার দামুখালী গ্রামের মৃত অনাদী মন্ডলের ছেলে এবং খন্দকার রকিবুল ইসলাম খুলনার ফুলতলা উপজেলার উত্তর আলকা এলাকার মাহাবুব খন্দকারের ছেলে। এর মধ্যে সুব্রত মন্ডল পেশায় মৎস্য ব্যবসায়ী ও খন্দকার রকিবুল ইসলাম ফুলতলা বাজার বণিক সমিতির ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন।
সম্প্রতি সুব্রত মন্ডল হত্যা মামলায় ১৫ জন ও খন্দকার রকিবুল ইসলাম হত্যা মামলায় ১১ জনকে অভিযুক্ত করে যশোরের আদালতে আলাদা চার্জশিট দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল। ওই দুই মামলার চার্জশিটে শীর্ষ চরমপন্থী শিমুল ভুইয়া এবং তার সহযোগী জায়েদ হাওলাদার ওরফে জিহাদ হামলারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
খন্দকার রকিবুল ইসলাম হত্যা মামলার চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন, খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর এলাকার মৃত নাসির উদ্দিন ভুইয়ার ছেলে শিমুল ভুইয়া, জামিরা এলাকার মৃত পীর মোহাম্মদ মোল্লার ছেলে জিয়া মোল্লা, শফিকুল শেখের ছেলে মেহেদী হাসান সবুজ, শাহজাহান মোল্লার ছেলে সোলায়মান মোল্লা, কামরুল বিশ্বাসের ছেলে রাজু, মাহতাব বিশ্বাসের ছেলে হৃদয়, দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামের জয়নাল হাওলাদারের ছেলে জায়েদ হাওলাদার ওরফে জিহাদ হাওলাদার, যশোরের অভয়নগর উপজেলার দত্তগাতি গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে জিয়াউর রহমান জিয়া, কাশেম মোল্লার ছেলে সাইফুল আলম মোল্লা, ওয়াছেক আলী মোল্লার ছেলে বুলবুল ও সরখোলা গ্রামের আনোয়ার মোল্লার ছেলে রাজিব মোল্লা।
২০২২ সালের ১২ মে রাত সোয়া ৮টার দিকে খন্দকার রকিবুল ইসলাম তার বান্ধবী পিয়ারী বেগম ওরফে বর্ষাকে নিয়ে মোটরসাইকেলে অভয়নগর উপজেলার দত্তগাতিতে যান পায়রা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার সাইফুল আলম মোল্লার কাছে গ্যাসের কবিরাজি ওষুধ আনতে। মূলত সাইফুল আলম মোল্লা গ্যাসের করিবাজি ওষুধ দেওয়ার কথা বলে ফাঁদ পেতে খন্দকার রকিবুল ইসলামকে ডেকে আনেন। পরে সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে দত্তগাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছে তাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুর্বৃত্তদের গুলিতে তার বান্ধবী পিয়ারী বেগম ওরফে বর্ষা আহত হন। এ ঘটনায় নিহতের মা রহিমা বেগম ১৩ মে অভয়নগর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল জানান, নিহত খন্দকার রকিবুল ইসলাম চরমপন্থী সংগঠনের সদস্য ছিলেন। তিনি ঘের মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতেন বলে অভিযোগ ছিলো। তার জন্য প্রতিপক্ষ চরমপন্থীরা ওই এলাকায় সুবিধা করতে পারতো না। এ কারণে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ফাঁদ পেতে ডেকে এনে গুলি চালিয়ে তাকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ চরমপন্থীরা। মামলার তদন্তকালে এই হত্যার সাথে শীর্ষ চরমপন্থী নেতা শিমুল ভুইয়াসহ উল্লিখিত ১১ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। এ কারণে তাদেরকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন।
অপরদিকে সুব্রত মন্ডল হত্যা মামলার চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন, খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর এলাকার মৃত নাসির উদ্দিন ভুইয়ার ছেলে শিমুল ভুইয়া, জামিরা শাহজাহান মোল্লার ছেলে সোলায়মান মোল্লা, দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর গ্রামের জয়নাল হাওলাদারের ছেলে জায়েদ হাওলাদার ওরফে জিহাদ হাওলাদার, গোলাম মুন্সীর ছেলে ইসরাফিল মুন্সী ও আরমান মুন্সী, মৃত গাজী জাকির হোসেনের ছেলে গাজী আরাফাত হোসেন কাইফ, যশোরের অভয়নগর উপজেলার দামুখালী গ্রামের মৃত শৈলন ম-লের ছেলে শ্যামল ম-ল, স্বপন হালদারের ছেলে পিন্টু হালদার, চলিশিয়া গ্রামের আব্বার মোল্লার ছেলে আমিনুর মোল্লা, সরখোলা গ্রামের ইয়াজিয়ার মোল্লা ওরফে ইয়াহিয়া মোল্লার ছেলে রাকিবুল ইসলাম রাকিব, ইয়াসিন সরদারের ছেলে শাকিল সরদার, আনোয়ার মোল্লার ছেলে রাজিব মোল্লা, উত্তর সরখোলা গ্রামের হান্নান মোল্লার ছেলে সুমন মোল্লা, বুইকারা হাসপাতাল এলাকার আনোয়ার হোসেন মোল্লার ছেলে রাব্বি হোসেন ও দত্তগাতি গ্রামের কাশেম মোল্লার ছেলে সাইফুল আলম মোল্লা।
২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি সকাল ৮টার দিকে অভয়নগর উপজেলার দামুখালীতে মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তরা গুলি চালিয়ে হত্যা করেন সুব্রত মন্ডলকে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই অমৃত মন্ডল ১৩ জানুয়ারি অভয়নগর থানায় মামলা করেন। এই মামলা তদন্তকালে ডিবি পুলিশের এসআই শফি আহমেদ রিয়েল চরমপন্থী নেতা শিমুল ভুইয়াসহ উল্লিখিত ১৫ জনের সম্পৃক্ততা পান। চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তারা সুব্রত মন্ডলকে হত্যা করেন বলে জানা যায়। এর প্রেক্ষিতে উল্লিখিত ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে ডিবি পুলিশ।
এদিকে ডিবি পুলিশের এসআই মো. মফিজুল ইসলাম জানান, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারসহ নানা কারণে সাম্প্রতিক সময়ে শিমুল ভুইয়া গংয়ের হাতে যশোর ও খুলনায় ৬ জন খুন হয়েছেন।