বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বন্ধ, বেকার কয়েক হাজার শ্রমিক

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ বাংলাদেশ ও ভারত করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ জারি করেছে। তারই জেরে বন্দর এলাকার অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। বেনাপোলে নেই কোনো শিল্প কারখানা। বেনাপোল স্থলবন্দরের ওপরে জীবিকার জন্য নির্ভরশীল কয়েক হাজার মানুষ। এ পথে আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকার জেরে রোজগারে টান পড়েছে তাদের। স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল। সেই সঙ্গে বেকার হয়ে পড়েছে বন্দর সংশ্লিষ্ট কয়েক হাজার শ্রমিক। এছাড়াও বন্দর ও কাস্টমস সংশ্লিষ্ট কয়েকশ এনজিও কর্মীও একই অবস্থায় পড়েছে। ভারত দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সিংহভাগ পণ্য আসে এই বন্দর দিয়ে। আপাতত বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে যুক্ত সীমান্ত এলাকার মানুষজন করোনা নয়, রুটি-রুজি হারানোর ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন।
গত ২৬ মার্চ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে সাধারণ ছুটিতে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছিল। সেটা ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এরপর ভারতে ২১ দিনের লকডাউন ২৩ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে যা ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে। সেই হিসেবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে আমদানি-রফতানি। পণ্যবাহী ট্রাকের চালক ও হেলপারদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস যাতে এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিস্তার করতে না পারে সে লক্ষ্যে বেনাপোল বন্দরের সঙ্গে সব ধরনের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ করা হয়েছে। গত ২২ মার্চ ভারতে কারফিউ থাকায় বন্ধ থাকে আমদানি-রফতানি। এরপর ২৩ মার্চ থেকে ২৭ মার্চ পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করে ভারত। এর মধ্যে ২৩ মার্চ রাতে এক ঘোষণায় ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। যা চলবে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। সেই হিসেবে ২৪ দিন বন্ধ থাকতে পারে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। এর ফলে উভয় সীমান্তে আটকা পড়ে আছে শতশত পণ্যবোঝাই ট্রাক। যার অধিকাংশই বাংলাদেশের শতভাগ রফতানিমুখী গার্মেন্টস শিল্পের কাঁচামাল। যেগুলো বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
গত ২২ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে কোনো পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করেনি। বেনাপোল বন্দর দিয়ে কোনো পণ্য নিয়ে ট্রাক পেট্রাপোল বন্দরে যায়নি। আমদানি-রফতানি বন্ধ থাকায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। যদিও এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রভাব পড়েনি। তবে আর কয়েকদিন বন্ধ থাকলে শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহতের পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রীর মূল্য বাড়ারও শঙ্কা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। এদিকে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে লকডাউনের সময় বৃদ্ধি করা হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে সে ক্ষেত্রে আমদানি-রফতানি সাময়িকভাবে চালু হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে গত ৩০ মার্চ জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ছুটিকালীন সময়ে আমদানিকৃত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, জরুরি চিকিৎসা ও অন্যান্য সেবা সামগ্রী শুল্কায়নসহ খালাস প্রদান এবং রফতানি ও ইপিজেডের কার্যক্রম সচল রাখার জন্য সকল কাস্টমস হাউস ও শুল্ক স্টেশনসমূহে সীমিত আকারে দাফতরিক কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়, অন্যান্য সেবা সামগ্রীর সঙ্গে শিল্পের কাঁচামাল এবং সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার আমদানিও অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে পণ্য খালাসের সঙ্গে বন্দর, ব্যাংক, ট্রান্সপোর্ট ও বন্দর শ্রমিকরা জড়িত রয়েছে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করা না হলে কার্যত পণ্য খালাস প্রক্রিয়া কতটুকু সফলতা পাবে সেটাও ভাববার বিষয়।
বেনাপোল স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য সজিব হাসান বলেন, আমরা এখানে কাজ করে যে টাকা পাই তাতে ভালোভাবে আমাদের সংসার চলে যায়। সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে সকল প্রকার লোড-আনলোড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা শ্রমিকসহ সকলে অসুবিধায় পড়েছি। কীভাবে সংসার চলবে জানি না। কোনো উপার্জন নেই এই মুহূর্তে। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দু‘দেশের সীমান্ত বাণিজ্য ২২ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। সেই সঙ্গে কাস্টমস ও বন্দরে কোনো কাজ হচ্ছে না। ফলে আমাদের শত শত সদস্য খুব কষ্টের মধ্যে দিন পার করছে। পেট্রাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ ওয়েল ফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, করোনার বিস্তার ঠেকাতে কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করা হয়েচে। এতে সকল রকম আমদানি-রফতানিসহ সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে স্থলবন্দর এলাকার অর্থনীতি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে।
বেনাপোল আমদানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক আনু জানান, এখনই ক্ষতির মুখ দেখতে শুরু করেছে ভারত-বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রফতানিকারকেরা। ক্ষতি কাটিয়ে নিতে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বড় বাণিজ্যিক সম্পর্ক। আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতে লকডাউন ঘোষনা করায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বাণিজ্য বন্ধ থাকলে ব্যবসায়ীদের ক্ষতির পাশাপাশি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামও বেড়ে যাবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার বলেন, প্রতিদিন পেট্রাপোল বন্দর থেকে তিনশ থেকে চারশ ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। আবার বেনাপোল দিয়ে দেড়শ থেকে আড়াইশ ট্রাক রপ্তানি পণ্য চালান যায় ভারতে। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে দুই দেশের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমদানি-রফতানির পাশাপাশি বন্দরের সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা জানান, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দুই দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ চালু হবে সেটা বলা যাচ্ছে না।