বাবার বাড়ি বেড়াতে এসে লাশ হল শিশু কন্যা, সৎমা পুলিশ হেফাজতে

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরে নিখোঁজের একদিন পর  মঙ্গলবার দুপুরে জোনাকি (৯) নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার হয়েছে। শহরের রেলগেট এলাকায় মডেল মসজিদের পেছনে একটি পুকুরের পশ্চিম পাশে পানির ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। ৫দিন আগে শিশুটি সৎ মায়ের সাথে বেনাপোল থেকে যশোরে বাবার কাছে বেড়াতে এসেছিলো। জোনাকির বাবা শাহিন তরফদার রেললাইন সংলগ্ন একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন। পুলিশ এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত শিশুর সৎমা নার্গিস বেগমকে হেফাজতে নিয়েছে।
নিহত শিশু জেনাকির বাবা শাহিন তরফদার জানান, তিনি পেশায় ইজিবাইক চালক। জোনাকি তার প্রথম স্ত্রী কোহিনুরের সন্তান। কোহিনুরের সাথে তার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। জোনাকি এবং তার আরও দুই মেয়ে ও এক ছেলে বেনাপোলের পোড়াবাড়িতে দাদির কাছে থাকে। তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী নার্গিস বেগমকে নিয়ে যশোর শহরের রেলগেট রেললাইন সংলগ্ন আবুর বাড়িতে ভাড়া থাকেন। ৫ দিন আগে তার বর্তমান স্ত্রী নার্গিস বেগম বেনাপোলের পোড়াবাড়িতে গিয়েছিলেন গরুর দুধ আনতে। তখন জোনাকি তার সাথে যশোরে বেড়াতে আসে। এরপর গত সোমবার সকালে তিনি ইজিবাইক চালাতে শহরে বের হওয়ার পর জানতে পারেন সকাল সাড়ে ৮টা থেকে জোনাকিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা। এ ঘটনায় তিনি ডিবি পুলিশকে অবহিত করেন। এরই মধ্যে আজ (মঙ্গলবার) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাসার কাছের একটি পুকুরে তার মেয়ের লাশ ভাসতে দেখতে পান স্থানীয় লোকজন। এ সময় তারা পুকুর থেকে তার মেয়ের লাশটি উদ্ধার করেন।
স্থানীয়রা জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুকুর সংলগ্ন একটি বাড়ির মালিক ঝুমুর বেগম ঘরের পেছনের কাঁচা ড্রেন পরিস্কার করছিলেন। এ সময় তিনি প্রথমে জোনাকির লাশটি দেখতে পান। যেখানে লাশটি ছিলো সেখানকার পানির গভীরতা ৪ ফুটের মতো হবে। তাদের অভিযোগ, জোনাকিকে হত্যা করে লাশটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তার গলায় হাতের আঙ্গুলের আঁচড়ের দাগ রয়েছে। জোনাকিকে হত্যার জন্য তারা নিহতের সৎমা নার্গিস বেগমকে সন্দেহ করছেন।
নিহতের বাবা শাহিন তরফদার জানান, কে জোনাকিকে হত্যা করেছে তা তিনি জানেন না।
জোনাকির ভাই তাওহিদ হাসান চয়ন জানান, তার ছোট মা নার্গিস বেগম শিশুদের অপছন্দ করেন। তবে ছোট মা তার বোনকে হত্যা করেছেন কি-না তা তিনি জানেন না।
নিহত জোনাকির নানা সুরুজ মিয়া বলেন, শাহীনুর-কোহিনুর দম্পতির জোনাকি ছাড়াও দুই ছেলে-মেয়ে আছে। তারা তিন ভাই-বোন তার কাছেই মানুষ হয়। মাঝেমধ্যে নাতি-নাতনিরা রেলগেট এলাকার তার বাবা ও সৎমায়ের কাছে বেড়াতে যায়। শুক্রবার জোনাকিকে কসমেটিক কিনে দেওয়ার নাম করে তার সৎমা নার্গিস যশোরের বাসায় বেড়াতে নিয়ে আসেন। সোমবার সকাল ১০টা থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পরে আজ দুপুরে বাবার বাসার পাশে পরিত্যক্ত পুকুর থেকে জোনাকির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, ‘কসমেটিকের জায়গায় আমার নাতনিকে তারা কাফনের কাপড় দিল।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক মফিজুর রহমান বলেন, জোনাকিকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যার আগে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কি না, সেটা ময়নাতদন্তের পর জানা যাবে। লাশের হাত ও পায়ে জখমের চিহ্ন রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে শাহিনুর যখন বাড়ি থেকে বের হন, তখন তাঁর সঙ্গে স্ত্রী নার্গিস ও মেয়ে জোনাকিও বের হয়। বাড়ির পাশে জোনাকিকে খেলতে দিয়ে আসেন তার সৎমা নার্গিস। এর পর থেকে সে আর বাড়িতে ফেরেনি। বিকেলে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। খোঁজাখুঁজির পর আজ সকালে পুলিশ তার লাশ একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করেছে। কে বা কারা হত্যা করেছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
জোনাকির ভাই তাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার থেকে জোনাকিকে পাওয়া যাচ্ছে না। সৎমা আমাদের জানিয়েছিল পাশেই স্টেশন; সেই স্টেশনে খুলনার ট্রেনে উঠে যেতে পারে। আমরা খুলনাতেও খুঁজেছি। যশোরে থানাতে জিডি করেছি। এমনকি শহরে মাইকিং করে আমার বোনকে খুঁজেছি। আজ আমার বাবা ও সৎমা যেখানে থাকে; সেই বাসার পেছনের একটি পরিত্যক্ত পুকুরে জোনাকির মরদেহ খুঁজে পাওয়া গেছে। সৎমা নার্গিস আমার বোনকে হত্যা করতে পারে বলে আমাদের সন্দেহ।’
এ বিষয়ে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক বলেন, জোনাকি নিখোঁজের ঘটনায় সোমবার থানায় জিডি করা হয়। আজ (মঙ্গলবার) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। আইনগত প্রক্রিয়া চলছে।