যশোরে ডাক্তারের নামে মামলা টিউমারের পরিবর্তে জরায়ু ও প্রস্রাবের নাড়ি কেটে ফেলার অভিযোগ

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের ইউনিক হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সুফিয়া খাতুন নামে এক নারীর টিউমারের পরিবর্তে জরায়ু ও প্রস্রবারে নাড়ি কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। ভুল অপারেশনের কারণে ওই নারী আরও গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের কাছে বিষয়টি জানালেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলেও অভিযোগ।
ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী সুফিয়া খাতুনের ভাই মাহাবুর মোল্লা ইউনিক হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একজন চিকিৎসকসহ ৩ জনকে আসামি করে সোমবার আদালতে মামলা করেছেন। তিনি সদর উপজেলার বিজয়নগর গ্রামের জামান মোল্লার ছেলে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান আহম্মেদ অভিযোগের তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্যে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে আদেশ দিয়েছেন।
অভিযুক্তরা হলেন, ইউনিক হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহানাজ পারভীন, ফিল্ড অফিসার রেখা খাতুন এবং সদর উপজেলার ডাকাতিয়া গ্রামের লাভলুর স্ত্রী শাহানাজ।
মাহাবুর মোল্লা মামলায় উল্লেখ করেছেন, তার বোন সুফিয়া খাতুন পেটের ব্যথার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বর তাকে নিয়ে যশোর শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডা. ইলা মন্ডলের কাছে যান। এ সময় ডা. ইলা মন্ডল তার বোনের আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়ে জানান যে, সুফিয়া খাতুনের জরায়ুতে টিউমার হয়েছে এবং অপারেশনের মাধ্যমে অপসারণ করতে হবে। এ কথা শুনে তারা তার বোনকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তখন তাদের পূর্ব পরিচিত শাহানাজ তাদেরকে ইউনিক হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সুফিয়া খাতুনকে নিয়ে অপারেশন করানোর পরামর্শ দেন। শাহানাজের পরামর্শে গত ২ জানুয়ারি তারা সুফিয়া খাতুনকে নিয়ে ইউনিক হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে ফিল্ড অফিসার রেখা খাতুন ভালোভাবে অপারেশন করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর তারা ওই হসপিটালের ডা. শাহানাজ পারভীনের কাছে গেলে তিনিও তাদেরকে জানান, সুফিয়া খাতুনের জরায়ুকে টিউমার হয়েছে। অপারেশন করতে ৭০ হাজার টাকা লাগবে। পরদিন তারা অপারেশনের জন্যে ফিল্ড অফিসার রেখা খাতুনকে ৭০ হাজার টাকা দেন। ওইদিন বিকেলে সুফিয়া খাতুনের অপারেশন করেন ডা. শাহানাজ পারভীন। কিন্তু তিনি সুফিয়া খাতুনের জরায়ু কেটে ফেলেন। যা পরে সুফিয়া খাতুনের স্বজনদের কাছে স্বীকার করেন। সেই সাথে তিনি ব্যবস্থাপত্র দিয়ে রোগীকে ছাড়পত্র দেন। কিন্তু বাড়িতে আসার পরও সুফিয়া খাতুনের পেটের ব্যথা না কমায় এবং অনবরত প্র¯্রাব হতে থাকলে ৩ দফা তারা সুফিয়া খাতুনকে নিয়ে ডা. শাহানাজ পারভীনের কাছে যান। প্রতিবার ডা. শাহানাজ পারভীন তাদের আশ্বস্ত করেন যে, ওষুধ সেবন করলে সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু এক পর্যায়ে পেটের ব্যাথা আরও বৃৃদ্ধি পেলে তারা যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ডা. লে. কর্নেল হারুন অর রশিদের শরণাপন্ন হন। এ সময় আল্টাসনোগ্রামসহ অন্যান্য শারীরিক পরীক্ষা করে ডা. লে. কর্নেল হারুন রশিদ জানান, সুফিয়া খাতুনের জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে। এছাড়া অপারেশনের সময় প্র¯্রাবের নাড়িও কেটে ফেলা হয়েছে। তবে জরায়ুর ডান পাশে থাকা টিউমারটি এখনো রয়ে গেছে। যে কারণে প্র¯্রাব বন্ধ হচ্ছে না। এ জন্যে ফের অপারেশন করতে হবে। এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি ফের ইউনিক হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে ভুল অপারেশনের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. শাহানাজ পারভীন তাদেরকে গালিগালাজ করেন। তিনি তাদেরকে তার চেম্বার থেকে তাড়িয়ে দেন। এ কারণে কোনো উপায় না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন মাহাবুর মোল্লা।