মনিরামপুরে বিধবার আত্মহত্যার ঘটনায় আটক ২

0

স্টাফ রিপোর্টার,মনিরামপুর(যশোর)॥ যশোরের মনিরামপুরে অপবাদ সইতে না পেরে রহিমা খাতুন(৩৫) নামে এক বিধবা নারী আত্মহত্যা করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার দিবাগত রাত চারটার দিকে উপজেলার পোড়াডাঙ্গা গ্রামে। পুলিশ রোববার বিকেলে বিধবার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্যে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। মৃতের ভাই বাদি হয়ে রোববার সন্ধ্যায় থানায় মামলা করলে পুলিশ রাতেই বরুন দত্ত ও ইছাহাক ফকির নামে দুই যুবককে আটক করেছে। তবে পুলিশ কথিত কোন মাতুব্বরকে আটক করতে পারেনি। বিধবা রহিমা খাতুন কুলটিয়া ইউনিয়নের পোড়াডাঙ্গা গ্রামের মৃত এহছানুল ফকিরের স্ত্রী।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য প্রভাষ ঘোষসহ এলাকাবাসী জানান, গৃহবধূ রহিমার স্বামী এহছানুল ফকির পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যানের চাকরি করতেন। বছর পাচেক আগে লাইন মেরামতের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুই সন্তানের জনক এহছানুলের মৃত্যু হয়। ইতিমধ্যে মেয়ের বিয়ে হয়েছে। বর্তমান ১২ বছর বয়সী ছেলে রায়হানকে নিয়ে বিধবা রহিমা বসবাস করে আসছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে রহিমাকে প্রায় কুপ্রস্তাব দিত একই গ্রামের স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন ও ব্যবসায়ী বরুন দত্ত। কিন্তু তাদের প্রস্তাবে সম্মত না হওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে রহিমার প্রতি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যক্তি জানান, এক পর্যায়ে রহিমার সাথে বরুনের একটু সখ্য হয়। ফলে এ নিয়ে আকতার ও বরুনের মধ্যে বিবাদ দেখা দেয়।
এলাকাবাসী জানান, শনিবার দিবাগত রাত চারটার দিকে রহিমার ঘরের পাশ থেকে বের হতে দেখে গ্রামের কথিত মাতুব্বর আক্তার ও তার লোকজন ধাওয়া করে বরুনকে আটক করেন। পরে আকতারের নেতৃত্বে ইছাহাক আলী, আবদুল মান্নান, আবু হানিফাসহ বেশ কয়েকজন রহিমার বাড়িতে গিয়ে তাকে মারপিটের পর কলঙ্কিনি আখ্যা দিয়ে ঘরের মধ্যে আটকিয়ে রাখেন। অন্যদিকে বরুনকে আটকের পর মারপিট করে নেয়া হয় আকতারের বাড়িতে। অভিযোগ রয়েছে, এ ঘটনাকে পূজি করে আকতার ও তার লোকজন বরুনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন। রহিমার ভাই আব্দুল্লাহ বিশ্বাস জানান, মারপিটের পর কলঙ্কিনি আখ্যা দিয়ে ঘরের মধ্যে অবরুদ্ধ করে রাখার এক পর্যায়ে তার বোন রহিমা খাতুন ঘরের আড়ার সাথে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। অবশ্য এ সময় রহিমার ছেলে রায়হান বাড়িতে ছিলেন না।
তবে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি কথিত মাতুব্বর আকতার হোসেনের বিরুদ্ধে আনিত সব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই মহসিন আলী জানান, এ ঘটনায় মৃতের ভাই আব্দুল্লাহ বাদি হয়ে চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ছয় ব্যক্তির নামে রোববার সন্ধ্যায় মামলা করেন। ইতোমধ্যে বরুন ও ইছাহাক আলী নামে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। বাকি আসামিদের আটকের চেষ্টা চলছে। মনিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ মনিরুজ্জামান জানান, আপাতত আত্মহত্যা প্ররোচণার মামলা নেয়া হয়েছে। তবে ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।