গদখালীর বাজারে রেকর্ড দামে ফুল বিক্রি, খুশি চাষি ও ব্যবসায়ী

0

আকরামুজ্জামান ।। ফুলের দামে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে যশোরের গদখালীর ফুল বাজারে। মাত্র দুদিন আগে যে গোলাপ ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে সেটি রোববার এক লাফে বেড়ে বিক্রি হয়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা দরে। প্রচলিত গোলাপের পাশাপাশি সাদা রঙয়ের চায়না গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। শুধু গোলাপ নয়, জারবেরা, গ্লাডিউলাস, রজনীগন্ধা, ভুট্টা, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসিসহ প্রায় সব ফুলেরই দাম বেড়েছে প্রতিটিতে ৫ থেকে ১০ টাকা করে। ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, নিকট-অতীতে যেকোনো সময়ে এমন দামে ফুল বিক্রির নজীর নেই।
রোববার ভোরে গদখালীর ফুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতা-বিক্রেতাদের সরব উপস্থিতে বাজারে পা ফেলার জায়গা নেই। বিশেষ করে পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দুদিন আগে ফুল মোকামে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। তবে বাজারে এসে ফুলের চড়া দাম থেকে তারা রীতিমত হতবাক হয়েছেন।
রাজধানীর সাভার থেকে আসা ফুলের পাইকারী ব্যবসায়ী জয়নাল হোসেন এসেছেন গদখালীতে ফুল কিনতে। সাংবাদিক দেখে রীতিমত তিনি ক্ষোভ ঝাড়তে থাকেন ফুলের দাম নিয়ে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গদখালীর ফুল বাজার থেকে ফুল কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে আসছেন। তবে এমন পরিস্থিতি আগে কখনও দেখেন নি। মাত্র দুদিন আগে যে গোলাপ কিনে নিয়ে গেছেন ১৫ টাকা দরে সেই গোলাপ আজ (রোববার) ২৫ টাকা দরে কিনে নিয়ে যেতে হচ্ছে। একইভাবে ২০-২৫ টাকার চায়না গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে। এটি রীতিমত স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বলে দাবি করেন ওই পাইকারী ব্যবসায়ী।
তবে এই ব্যবসায়ীর এ অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন গদখালীর ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী মঞ্জুর হোসেন। তিনি বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে এমনিতে ফুল চাষিদের শোচনীয় অবস্থা চলে আসছে। তারপর রাজনৈতিক অস্থিরতাতো ছিলই। কিন্তু এখন সব দিক দিয়ে অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যেমন ব্যবসায়ীরা আসছেন তেমনি ফুল বেচাকেনাও বেড়েছে। তিনি বলেন, ফুল চাষে অনেক ব্যয় বেড়েছে। তারপর এ বছর সারাদেশে গোলাপ ফুলের ফলনও কম হয়েছে। এ কারণে বিশেষ দিনকে ঘিরে সরবরাহ কম অথচ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম একটু বেশি হচ্ছে।
তৌহিদুল ইসলাম নামে আরেক চাষি বলেন, গদখালীর বাজারে আজ (রোববার) জারবেরা বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ১৮ টাকা, রজনীগন্ধা ও ভুট্টা ১৫ টাকা, একশ পিস চন্দ্রমল্লিকা ৫শ টাকা, গ্লাডিউলাস রঙভেদে ২০-২৫ টাকা। ফুলের এ দাম পেয়ে তিনি বেশ খুশি বলে জানান। তিনি বলেন, সব ফুলের মধ্যে গোলাপের যে দাম পাওয়া গেছে তা এই বাজারের ইতিহাসে এটিই প্রথম। ভবিষ্যতেও যেনো ফুলের দাম এমন থাকে ।
রফিকুল ইসলাম নামে আরেক ফুলচাষি বলেন, ফুল চাষে অনেকদিন ধরে লাভের মুখ দেখছিলাম না। আল্লাহ এ বছর আমাদের দিকে নজর দিয়েছেন। এর আগে বিশেষ দিবসে ৫-১০ টাকাও গোলাপের দাম পাইনি। যেকারণে অনেক চাষিই ফুল চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তবে এবার বাজার ভালো পেয়ে অনেকেই ফুল চাষকে টিকিয়ে রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি বলেন, এ বছর ভাইরাস জনিত রোগের কারণে গোলাপের উৎপাদন কম হয়েছে। এ অবস্থায় দাম না পেলে টিকে থাকার কোনো সুযোগ ছিলোনা। আগামী দুদিনে আরও ভালো দামে ফুল বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করেন।
ফুল ব্যবসায়ীদের নেতা আব্দুর রহিম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে গোলাপসহ প্রায় সব ধরনের ফুলের উৎপাদন কম হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমরা অনেকটা সন্দিহান ছিলাম ভালো দাম পাবো কি-না তা নিয়ে। তবে প্রত্যাশার চেয়েও বেশি দাম পেয়ে ফুলচাষিরা বেশ খুশি। তিনি বলেন, ব্যবসায়ীরা বেশি দামে ফুল কিনে যে হতাশা প্রকাশ করছেন তাতে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ সারা দেশে ফুলের উৎপাদন কম হওয়ায় দাম, চাহিদা দুই-ই রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরাও বেশি দামে ফুল কিনে লাভবান হতে পারবেন বলে তিনি দাবি করেন।