যশোরে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিজিবি সদস্যের আদালতে আত্মসমর্পণ

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরে দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিজিবির সুবেদার মেজর নজরুল ইসলাম সোমবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি আদালতে জামিনের আবেদনও করেন। এ সময় স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সামছুল হক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদুকের পিপি মো. সিরাজুল ইসলাম।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামালনগর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম চামড়ার ব্যবসা করতেন। ২০১৪ সালে ঈদুল আজহার সময় তিনি পশুর বেশ কিছু চামড়া কিনে স্থানীয়ভাবে লবণ মাখিয়ে প্রক্রিয়াজাত করেন। একই বছরের ১৪ অক্টোবর তিনি মোট ৪৬৭৭ পিস চামড়া ট্রাকে নিয়ে নাটোরের আড়তে উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথে যশোরের ঝিকরগাছায় অজ্ঞাত পরিচয় লোকজন ওই ট্রাক থামিয়ে তার কাছে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় তারা যশোর বিজিবিকে সংবাদ দেয়। পরে বিজিবি সুবেদার মেজর নজরুল ইসলাম তার ফোর্সসহ ঘটনাস্থলে এসে চামড়া বোঝাই ট্রাকটি আটক করে যশোর ঝুমঝুমপুরস্থ ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে রফিকুল ইসলাম ঝুমঝুমপুর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেনকে চামড়ার বৈধ কাজগপত্র দেখালেও তিনি এ চামড়া ভারতে যাচ্ছে বলে অভিযোগে করে তাকে সুবেদার মেজর নজরুল ইসলামের সাথে কথা বলতে বলেন। পরে রফিকুল ইসলাম সুবেদার মেজর নজরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তার কাছে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ওইদিন রাতে রফিকুল ইসলাম ১ লাখ টাকা যোগাড় করে নজরুল ইসলামকে দেন এবং বাকি টাকা পরদিন সকালে দিবেন বলে তাকে জানান। কিন্তু পরদিন সকালে রফিকুল ইসলাম বিজিবি ক্যাম্পে গিয়ে দেখেন, চামড়া নিলামে বিক্রি করে ট্রাক ছেড়ে দিয়েছে। এ সময় ঘুষের টাকা নিয়েও নিলামে চামড়া বিক্রির কারণ জানতে চাইলে বিজিবি কর্মকর্তারা তার নামে মামলা দেওয়ার ভয় দেখিয়ে তাড়িয়ে দেন।
এ ঘটনায় রফিকুল ইসলাম বিজিবি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন ও নজরুল ইসলামকে আসামি করে একই বছরের ১৭ নভেম্বর দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন। জেলা ও দায়রা জজ অভিযোগটি গ্রহণ করে দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আাদেশ দেন। তদন্ত শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় যশোরের উপ-সহকারী পরিচালক সৌরভ দাস ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট সুবেদার মেজর নজরুল ইসলামকে অভিযুক্ত ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেনের অব্যাহতি চেয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। ওই মামলায় আসামি সুবেদার মেজর নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত বছরের ১ নভেম্বর রায়ে বিচারক তাকে ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় ৫ বছর সশ্রম কারাদ- এবং ১০ হাজার টাকা অর্থদ- অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদ-ের আদেশ দেন।
রায় ঘোষণার সময় সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিজিবি সদস্য নজরুল ইসলাম আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন। সোমবার তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।