ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা, আদালতে স্বীকারোক্তি যশোরে মৃত স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে পালানো স্বামী গ্রেফতার

0

স্টাফ রিপোর্টার॥ যশোরে মৃত স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যাওয়া পরিতোষ কুমার সানাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার রাতে যশোর শহর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।সোমবার তিনি আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন যে, শনিবার রাতে বাড়ি কোন্দলের এক পর্যায়ে বাথরুমে তিনি স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এসময় পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে স্ত্রী মায়া রাণীর মৃত্যু হয়। এর আগে তিনি স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।
আটক পরিতোষ টিএমএসএস নামে একটি এনজিও’র যশোর ইউনিটের হিসাবরক্ষক ও সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বল্লাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা। তার স্ত্রী মায়ারাণী (৩৫) একই উপজেলার বেহুলা গ্রামের তরুণ কুমার ম-লের মেয়ে।
বর্তমানে পরিতোষ কুমার সানা যশোর উপশহরের ডি-ব্লকের জনৈক নওশের আলীর ৩ তলা ভবনের নিচতলায় ভাড়া থাকেন। স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত পরিতোষ কুমার সানার বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে নিহতের ভাই সুশান্ত মন্ডল কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল সরদার জানান, ৯ বছর আগে পরিতোষ কুমার সানার সাথে বিয়ে হয় মায়া রানী মন্ডলের। তাদের ৭ বছর বয়সের সুরভী সানা নামে একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, পরিতোষ কুমার সানা পরকীয়ায় আসক্ত। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে গোলাযোগ চলে আসছিল। যে কারণে পরিতোষ কুমার সানা প্রায়ই তার স্ত্রী মায়া রানী মন্ডলকে মারধর করতেন। দুই মাস আগে পরিতোষ কুমার সানা স্ত্রীকে মারধর করে পিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। পরে মায়া রানী মন্ডলের পরিবারের লোকজন বিষয়টি মীমাংসা করে তাকে ফের স্বামীর বাসায় পাঠিয়ে দেন।
তদন্ত কর্মকর্তা জানান, গত ৩ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে পরিতোষ কুমার সানা বাসায় ফিরে এলে তার পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে ফের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে গোলাযোগ হয়। এরই এক পর্যায়ে মায়া রানী মন্ডল বাথরুমের ভেতর ঢোকেন। তখন পরিতোষ কুমার সানা পেছন থেকে তাকে ধাক্কা দিলে বাথরুমের ভেতর থাকা স্টিলের ট্যাপে মায়া রানী মন্ডলের কপালে আঘাত লাগে। তিনি এ সময় লুটিয়ে পড়েন। বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে বিছানায় ঘুমাতে যান পরিতোষ কুমার সানা। কিন্তু প্রায় ৩ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও স্ত্রীর কোনো সাড়াশব্দ না হওয়ায় সন্দেহ হয় পরিতোষ কুমার সানার। তিনি বাথরুমে গিয়ে দেখেন, ভেতরে পড়ে আছেন স্ত্রী। তার কোনো সাড়াশব্দ নেই। এসময় তিনি বুঝতে পারেন স্ত্রী মারা গেছেন। এ ঘটনার পরদিন সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে বাথরুমের দরজা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেন পরিতোষ কুমার সানা। ঘটনাটি তিনি নিজ মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করেন। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, স্ত্রী বাথরুমের ভেতর পড়ে গিয়ে মারা গেছেন। প্রচারও করেন যে, স্ত্রী বাথরুমের ভেতর পড়ে মারা গেছেন। পরে পরিতোষ কুমার লাশটি একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আশাশুনির বলাবাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের চাপে পড়ে পরিতোষ কুমার সানা স্ত্রীর লাশ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। পরে খবর পেয়ে মায়া রানী মন্ডলের পরিবারের লোকজন যশোরে আসেন। তারা এ সময় পরিতোষ কুমারের বিরুদ্ধে মায়া রানী মন্ডলকে হত্যার অভিযোগ করলে তাকে আটক করা হয়।
পুলিশ জানায়, সোমবার বিকেলে আটক পরিতোষ কুমার সানাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরান আহম্মেদ তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। পরে আদালতের বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।