ঝিকরগাছার এনজিও কর্মী কুদ্দুস হত্যায় দুই জনের যাবজ্জীবন

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোরের ঝিকরগাছার জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের মাঠকর্মী আব্দুল কুদ্দুস হত্যা মামলার দুই আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছে আদালত। একই সাথে তাদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড অনাদায়ে আারও ৬ মাসের কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার অপর ৪ আসামিকে বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার যশোরের স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ সামছুল হক এই রায় দেন।
স্পেশাল পিপি সাজ্জাদ মোস্তফা রাজা জানান, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদ্বয় হলেন, ঝিকরগাছা উপজেলার মল্লিকপুর গ্রামের মৃত মনু মিয়ার ছেলে রনি মিয়া ও হোচেন আলীর ছেলে ইউনুস আলী। রায় ঘোষণার সময় আসামি ইউনুস আলী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অপর আসামি রনি মিয়া পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেয়া হয়েছে।
ওই মামলায় খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, মল্লিকপুর ধাবড়ীপাড়ার রুহুল আমিনের ছেলে আব্দুর রাজ্জাক, মল্লিকপুর গুচ্ছগ্রাম কলোনিপাড়ার নজির আহমেদের ছেলে কোরবান আলী, লাউজানীর নুরুল হকের ছেলে রফিকুল ইসলাম ওরফে কান্ড ও লাউজানী রিফুজিপাড়ার ইউসুফ ড্রাইভারের ছেলে শাহীন। এছাড়া চার্জশিটে অভিযুক্ত আব্দুর রশিদ নামে এক আসামি মৃত্যুবরণ করায় আগেই তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদান করে আদালত।
মামলা সূত্রে জানা যায়, নিহত আব্দুল কুদ্দুস মাগুরার শালিখা উপজেলার বাগডাঙ্গা গ্রামের নুরুল আমিন মোল্লার ছেলে। তিনি ঝিকরগাছায় জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশনের মাঠকর্মী ছিলেন। ২০০৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সকাল ৮টার দিকে বাইসাইকেলে করে ঝিকরগাছার অফিস থেকে মল্লিকপুর ও কীত্তিপুরের উদ্দেশ্যে বের হন ঋণের কিস্তির টাকা আদায়ের জন্যে। কিন্তু অন্যান্য দিনের ন্যায় তিনি দুপুর ১টার মধ্যে অফিসে ফিরে না আসায় ম্যানেজার সানোয়ার হোসেন মোবাইল ফোনে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। এ সময় আব্দুল কুদ্দুসের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তখন ম্যানেজার সানোয়ার হোসেন অফিসের কর্মী হাফিজুর রহমানকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে মল্লিকপুর গ্রামে যান। প্রথমে তারা মল্লিকপুর গ্রামের শিউলীর বাড়িতে যাওয়ার পর জানতে পারেন, আব্দুল কুদ্দুস ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন এবং কিস্তির ৯ হাজার টাকা আদায় করেছেন। সেখান থেকে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বের হয়ে একই গ্রামের ইউনুস আলীর বাড়িতে যান কিস্তিুর টাকা আদায়ের জন্যে। বিষয়টি জানতে পেরে পরে ইউনুস আলীর বাড়িতে যান তারা। কিন্তু ইউনুস আলী ও তার স্ত্রী ছায়েরা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা আব্দুল কুদ্দুস তাদের বাড়িতে আসেননি বলে দাবি করেন। তবে ম্যানেজার সানোয়ার হোসেন আশেপাশের মানুষের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ইউনুস আলীর বাড়িতে এসেছিলেন আব্দুল কুদ্দুস। কিন্তু তাকে বাড়ি থেকে কেউ বের হতে দেখেননি। এছাড়া আব্দুল কুদ্দুসের ব্যবহৃত বাইসাইকেলটি ইউনুস আলীর বন্ধু রনি মিয়াকে নিয়ে যেতে দেখেছেন লোকজন। ফলে সন্দেহ হওয়ায় সন্ধ্যায় ম্যানেজার সানোয়ার হোসেন ঝিকরগাছা থানায় নিখোঁজ সংক্রান্ত জিডি করেন এবং আব্দুল কুদ্দুসের পরিবারকে খবর দেন। এরপর রাতে অন্যান্যদের সাথে পরিবারের লোকজন ইউনুস আলীর বাড়িতে গিয়ে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ঘরের পশ্চিম পাশের পুকুরপাড়ের কচুগাছ চটকানো অবস্থায় দেখতে পান। সেখানে নিখোঁজ আব্দুল কুদ্দুসের ছাতা পড়েছিলো। এ কারণে আব্দুল কুদ্দুসকে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়েছে সন্দেহ হওয়ায় পরিবারের লোকজন পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে স্থানীয় লোকজনের সাথে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ওই পুকুর থেকে আব্দুল কুদ্দুসের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে। তার গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সামসুর রহমান মল্লিকপুর গ্রামের ইউনুস আলী, রনি মিয়া, গুচ্ছগ্রামের কোরবান, লাউজানীর শামীম ও রুবেলকে আসামি করে ঝিকরগাছা থানায় মামলা করেন। পরে তদন্ত শেষে এজাহারভুক্ত আসামি ইউনুস আলী, রনি মিয়া ও কোরবান এবং তদন্তে প্রকাশ পাওয়া আসামি আব্দুর রশিদ, শাহীন, আব্দুর রাজ্জাক ও রফিকুল ইসলামকে অভিযুক্ত এবং এজাহারভুক্ত আসামি রুবেল ও শামীমের অব্যাহতি চেয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা ঝিকরগাছা থানা পুলিশের এসআই আব্দুর রব আকন্দ। পুলিশের তদন্তে প্রকাশ পায় যে, কিন্তির টাকা আদায়কে কেন্দ্র করে অভিযুক্তদের সাথে আব্দুল কুদ্দুসের কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে আসামিরা আব্দুল কুদ্দুসের গলায় দড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। লাশ গুমের জন্যে তারা বস্তার ভেতর ঢুকিয়ে পুকুরে ডুবিয়ে রাখেন ।