যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ওষুধ সংকট তীব্র : যথাযথ সেবা মিলছে না

0

বিএম আসাদ ॥ দুস্থ-কাঙাল কেউই বাদ যাচ্ছে না। একটু ভালো চিকিৎসা পাওয়ার প্রত্যাশায় নিয়মের ফাঁদে পড়ে সবাই বাড়তি টাকা দিয়ে টিকিট কিনছেন যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কাউন্টার থেকে। কিন্তু কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা মিলছে না রোগীদের। চাহিদা মোতাবেক ওষুধ না পাওয়ায় কেবলমাত্র দেড় মিনিটের চিকিৎসা আর প্রেসক্রিপশন নিয়েই রোগীদের বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। সরকারি ওষুধের সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী হাসপাতালে টিকিটের মূল্য ৫ টাকা। বছরের পর বছর ৫ টাকা দিয়ে টিকিট ক্রয় করে রোগীরা বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিতেন। আর বহির্বিভাগের চেম্বার হতে দেড় মিনিটের চিকিৎসার প্রেসক্রিপশনসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে সে সুযোগ নেই রোগীদের। তারা ৫ টাকা মূল্যের টিকিট বাড়তি আরও ৫ টাকা মিলে ১০ টাকা দিয়ে টিকিট ক্রয় করে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পূর্বের মতো দেড় মিনিটের চিকিৎসা আর প্রেসক্রিপশন নিয়ে অনেকে বাড়ি ফিরছেন অথচ, চাহিদা মোতাবেক হাসপাতাল ফার্মেসি থেকে ওষুধ পাচ্ছেন না। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় যেসব ওষুধ থাকার কথা তা নেই। আগে ৩৭ প্রকার থেকে ৪২ প্রকার ওষুধ দেওয়া হতো হাসপাতালে। আর এখন ১৫ থেকে ১৮ প্রকার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। প্রয়োজনীয় অন্যান্য ওষুধ না দিলেও এক পাতা গ্যাসের ওষুধ দিয়ে সামাল দেওয়া হচ্ছে রোগীদের। এর কারণ হচ্ছে প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই হাসপাতালে। ওষুধের সংকট তীব্রতর হয়েছে হাসপাতালে। এতে করে বাড়তি টাকা দিয়ে টিকিট ক্রয় করেও রোগীরা তাদের চাহিদা মোতাবেক ওষুধ পাচ্ছেন না। ফলে, জনগণ তাদের প্রত্যাশিত কাক্সিক্ষত ভালো সেবা পাচ্ছে না হাসপাতাল থেকে।
২০২১ সালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ৫ টাকার টিকিট ১০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করেন। ওই কমিটির সভাপতি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য অনুমোদন দেন মানুষকে মানসম্মত ভাল চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য। কিন্তু বাস্তবে সে প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। উল্টো ওষুধ সংকটের কবলে পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর রোগীরা হচ্ছেন প্রতারিত। যে উদ্যোগের সাথে বাস্তবে মিলছে না। সরকারিভাবে টিকিট বাবদ বাড়তি টাকা নেওয়াটা এখনো অনুমোদন পায়নি। আবার টিকিট বাবদ অতিরিক্ত লাখ লাখ টাকা আয় ও ব্যয় করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তার ভেতর আবার বিবিধ খরচও করা হচ্ছে জনগণের কাছ থেকে এভাবে অতিরিক্ত মূল্যে টিকিট বিক্রি করে।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গত অক্টোবর ও সেপ্টেম্বর দু মাসে হাসপাতালে ৯৩ হাজার ১৪১টি প্রাথমিক টিকিট বিক্রি হয়েছে। রোগীরা বর্ধিত মূল্য ১০ টাকা দিয়ে এসব টিকিট ক্রয় করে চিকিৎসা নেন। এ টিকিট বিক্রি করে হাসপাতালের ৯ লাখ ৩১ হাজার ৪১০ টাকা আয় হয়েছে। এর ভেতর সরকারি মূল্য ৫ টাকা হিসেবে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৫ টাকা সরকারি কোষাগার রাজস্ব খাতে জমা দেয়া হয়েছে। বাকী অর্ধেক ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৭০৫ টাকা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ফান্ডে জমা পড়েছে। বাড়তি এ টাকা দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাসেবকদের বেতন, রি-এজেন্ট ক্রয়-এক্স-রে খাম ও স্টেশনারি ক্রয় করেছেন। অন্যান্য খরচ করেছেন জনগণের কাছ থেকে আদায় করা এ বাড়তি টাকা দিয়ে।
সূত্র জানিয়েছেন, হাসপাতালে ৫ টাকা মূল্যের টিকিট বিক্রি বাবদ সেপ্টেম্বরে অতিরিক্ত ২ লাখ ৩১ হাজার ১০৫ টাকা আয় হয়েছে। খরচ হয়েছে ২ লাখ ২৩ হাজার ২শ টাকা। অক্টোবরে আয় হয়েছে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬শ টাকা। ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৮শ টাকা। এভাবে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা আয় ও ব্যয় হচ্ছে বাড়তি টাকা। এক্ষেত্রে যারা বাড়তি টাকা দিচ্ছেন তারা ভাল চিকিৎসা সেবা কতটুকু পাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রোগী ও সচেতন মহলের।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. হারুন-অর-রশীদ বলেন, জেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক করা হচ্ছে। তবে, এটা ঠিক হাসপাতালে আগের চেয়ে ব্যাপক সংখ্যক রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। জনবল রয়েছে কম। বাড়তি টাকা আয় হওয়ার কারণে প্যাথলজি, এক্স-রেসহ অন্যান্য সেবা দেওয়া সহজ হচ্ছে। সরকারি বরাদ্দের দিকে চেয়ে থাকতে হচ্ছে না। সরকারিভাবে যে টাকা আসে তাতে এভাবে সেবা দেওয়া যেত না বলে জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক। প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরএমও ডা. পার্থ প্রতীম চক্রবর্তী জানিয়েছেন, বাড়তি টাকা এভাবে আদায় না হলে হাসপাতাল এভাবে চালানো যেত না। টাকা আয় ও ব্যয়ের হিসাব সব আমরা জানিয়ে দেব বলে জানিয়েছেন ডা. পার্থ প্রতীম চক্রবর্তী।