চৌগাছায় সরিষার হলুদ ফুলে ঢেকে গেছে মাঠ

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, চৌগাছা (যশোর) ॥ চৌগাছায় বিস্তীর্ণ মাঠে চাষ হয়েছে সরিষা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষক। আগাম চাষ করা জমি ইতোমধ্যে ফুলে ভরে উঠেছে। সরিষার ফুলের সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে মাঠের পর মাঠ। মৌমাছি ফুলের মধু সংগ্রহে ছুটছে এক গাছ হতে অন্য গাছে। সব মিলিয়ে সরিষার ফুলে প্রতিটি মাঠ সেজেছে অপরুপ এক সাজে।
সরিষা সবার কাছে অতি পরিচিত একটি তেলজাত শস্য। শীত মৌসুম এলেই চাষিরা জমি প্রস্তুত করে বপণ করেন বীজ। এ অঞ্চলের কৃষক সরিষার চাষ করে ওই জমিতে আবার বোরো ধানের চাষ করেন। সে কারণে আগাম বপণ করা জমি এখন হলুদের চাদরে ঢেকে গেছে। এক দিকে সরিষা ফুলের সুগন্ধ অন্যদিকে মৌমাছির গুনগুন শব্দে অন্য রকম এক সৌন্দর্য বিরাজ করছে মাঠ জুড়ে। শনিবার উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে সৌন্দর্যের এই দৃশ্য চোখে পড়ে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চৌগাছা উপজেলাতে ২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের সরিষার চাষ হয়েছে। এরমধ্যে বারী-১৪, ১৭, ১৮, টরি-৭, ভারতীয় বুলেট জাত উল্লেখযোগ্য। এছাড়া দেশি জাতের সরিষার চাষও বেশ লক্ষ্যণীয়। বেশ কিছু এলাকার চাষিরা আগাম জাতের সরিষার চাষ করেছেন ওই সব জমিতে এখন ফুল ফুটেছে। আগাম চাষ করা সরিষা উঠার পর সেই সব জমিতে বোরো চাষ করা হবে বলে জানা গেছে।
বিগত বছরগুলোতে সরিষার চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া উপজেলার ফুলসারা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম, বাটিকামারি গ্রামের মহিদুল ইসলাম, নগরবর্ণী গ্রামের আব্দুল্লাহ, সৈয়দপুর গ্রামের মুজিবর রহমান, কদমতলা গ্রামের মহব্বত আলীসহ একাধিক কৃষক বলেন, সরিষা হচ্ছে তেলজাত শস্য। বাজারে সব ধরনের তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সরিষার তেলের কদর বহুগুন বেড়ে গেছে। এ ছাড়া সরিষার তেল স্বাস্থ্যসম্মত। তেল ও খৈল দুটি জিনিসের ব্যাপক কদর থাকায় বাজারে সরিষার দামও ভাল। স্বল্প সময়ে এর চাষ হয় এবং উৎপাদন খরচও অন্য যে কোনো ফসলের চেয়ে কম। সে কারণে সরিষা চাষ করে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে দেশি জাতের পাশাপাশি উন্নতমানের হাইব্রিড জাতের সরিষার চাষ হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আশানুরুপ ফলনের আশা করছেন চাষিরা। কৃষকরা জানান, অনেকে আগাম রোপা আমনের চাষ করেন, সেই সব জমির ধান কেটে বপণ করা হয়েছে সরিষা। সরিষা উঠার সাথে সাথে বোরো ধান লাগানো হবে। সরিষার অধিক ফলনে সহযোগিতা করে মৌমাছি। ফুল ফোটার পর জমিতে যত বেশি মৌমাছির আগমন ঘটবে তত পরাগয়ন ঘটবে বাড়বে ফলন। তবে গত বেশ কয়েক বছর ধরে মৌমাছির সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে কমে গেছে। মৌমাছি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে জমিতে যখন তখন মাত্রারিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার। ক্ষতিকর সার কীটনাশক ব্যবহারে সকলকে আরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করছেন সরিষা চাষে সাফল্য পাওয়া এসব কৃষক।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুশাব্বির হোসাইন বলেন, চৌগাছার কিছু নিচু এলাকা ব্যতিত প্রতিটি এলাকাতে কমবেশি সরিষার চাষ হয়। সরিষা চাষ করে কৃষক যাতে লাভবান হতে পারে সে জন্য উন্নতজাতের সরিষা চাষে কৃষককে উদ্ধুদ্ধ করা হয়েছে, এমনকি বীজও বিতরণ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষক সরিষা চাষে বেশ লাভবান হবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।