শীতের আগমনে ব্যস্ততা বেড়েছে চৌগাছার মৃৎশিল্পিদের

0

মুকুরুল ইসলাম মিন্টু চৌগাছা (যশোর) ॥ শীতের আগমনে কর্মব্যস্ততা বেড়েছে চৌগাছার মৃৎশিল্প পল্লীতে। খেজুর গাছ হতে রস আহরণের ভাড় তৈরিসহ নানা ধরনের জিনিসপত্র তৈরির মাটি সংগ্রহ করা, চুলো মেরামত, জ্বালানি মজুদসহ নানা কাজে ব্যস্ত বাড়ির গৃহকর্তা থেকে শুরু করে গৃহিনী এমনকি পরিবারের ছোট সদস্যরাও। তবে কাংখিত দাম না পাওয়ায় হতাশ মহল্লার বাসিন্দারা।
ইছাপুর, হাজরাখানা, তাহেরপুর, সাঞ্চাডাঙ্গা, নিয়ামতপুর, গরীবপুর গ্রামে বসবাসরত মৃৎশিল্পিরা সারা বছরই মাটি দিয়ে নানা ধরনের মালামাল তৈরি করেন। তবে শীত এলে তাদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। অন্য বছরের মত এ বছরও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু বাজারে সঠিক মূল্য না পেয়ে চরম হতাশ হচ্ছেন শিল্পিরা। কিভাবে বাবা- দাদাদের রেখে যাওয়া পেশাকে টিকিয়ে রাখবেন সেই চিন্তায় বিভোর তারা।
শুক্রবার চৌগাছা পৌর এলাকার ইছাপুর পালপাড়াতে গিয়ে দেখা গেছে, কাদামাটি নিয়ে ব্যস্ত বাড়ির সব সদস্য। এ সময় কথা হয় উত্তম কুমার পালের সাথে। তিনি বলেন, ৪২ বছর বয়স আমার। জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর হতেই দেখছি এই পেশার সাথে আমিও জড়িত। বাবা কাদা মাটি নিয়ে কাজ করতে করতে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তার রেখে যাওয়া পেশাকে আগলে রেখেছি। ১০/১৫ বছর আগেও বেশ ভালভাবে চলেছে সংসার। কিন্তু এখন আর পেরে দিচ্ছিনা। বাজার দরের যে অবস্থা তাতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকাই কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে। মাঠে কাজ করতে পারিনা, তাই লাভ লোকসান যাই হোক এই পেশাকে ধরে রেখেছি।
উত্তম কুমার পালের মত ওই মহল্লার গৃহকর্তা, গৃহীনি এমনকি স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলে মেয়েরা মৌসুমের এই সময়টা এলে সকলেই কাদা মাটির সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলেন। কেউ মাটি জড়ো করছেন, কেউ বা তৈরি করছেন ভাড়, হাড়ি পাতিল, আবার কেউ ওই সব মালামাল নিয়ে রোদে শুকাতে দিচ্ছেন। পালপাড়ার গৃহিনী শিবা রানী পাল, রিনা রানী পাল বলেন, স্বামী সন্তানের সাথে আমরাও সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে তাদের সহযোগিতা করি।
মহল্লার সুশান্ত পাল বলেন, হাঁড়ি, কড়াই, ভাড়, নেন্দে, রিং এক কথায় মাটির তৈরি সব কিছুর পেছনে ব্যয় বেড়েছে। বর্তমানে এক টলি মাটি ১ হাজার থেকে ১২শ টাকায় কিনতে হচ্ছে। জ্বালনি হিসেবে কাঠের গুঁড়ো আগে কিনেছি ২শ টাকায়। বর্তমানে কিনতে হচ্ছে ৭শ টাকায়। নিজেদের শ্রম তো আছেই। কিন্তু বাজারে আমরা ন্যায্য মূল্য পাইনা। বর্তমানে ১টি ভাড় ২০ থেকে ২৫ টাকা, রিং ৫০ থেকে ৬০ টাকা, দই খুরি ৪ থেকে ৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব জিনিসপত্র তৈরি করতে ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু পণ্যের দাম বাড়েনি। মহল্লার একাধিক বাসিন্দা বলেন, ইছাপুর পালপাড়াতে ১৫টি পরিবার বসাবস করেন। মোট সদস্য সংখ্যা শতাধিক। এমন এক সময় ছিল এই মহল্লার কোন ছেলে মেয়ে স্কুলে যেত না। কিন্তু সেই ধারা থেকে বের হতে পেরেছি। এখন পালপাড়ার ছেলে- মেয়েরা স্কুল -কলেজ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া- লেখা করছে।