পুলিশি নির্যাতন ও গ্রেফতারের মধ্যেও যশোরে প্রথম দিনের অবরোধ পালিত

0

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের হামলা, নির্যাতন, গ্রেফতারের মধ্যেও যশোরে  সর্বাত্মক অবরোধ পালিত হয়েছে কর্মসূচির প্রথম দিন। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে তিন দিনের রেলপথ, সড়ক ও নৌপথ অবরোধ পালন করছে বিএনপি। কর্মসূচির প্রথম দিনে মঙ্গলবার ভোর থেকেই যশোরে বিএনপি নেতাকর্মীরা সড়ক ও মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
এ সময় মুড়লী মোড়ে সড়কে অবস্থান নেয়া ১৪ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে বলে জানান বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। গ্রেফতারের সময় পুলিশ শহরের মুড়লী মোড় এলাকায় মহিলাদলের নেত্রীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা ও নির্যাতন চালায়। এছাড়া যুবদলের এক নেতার বাড়ি ভাঙচুর ও মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় বলে জানান দলটির এ কেন্দ্রীয় এ নেতা।
তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলার অন্যান্য থানা এলাকা থেকে আরও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি নুরুজ্জামান খান লিটন, নগর বিএনপি নেতা খাইরুল বাশার শাহীন, চৌগাছা বিএনপির আহবায়ক জহুরুল ইসলামসহ আরও কয়েজন নেতাকে আটক করে পুলিশ। কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি নুরুজ্জামান লিটন যশোর আদালতে একটি মামলা হাজিরা দিতে আসলে ডিবি পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিএনপি আহূত অবরোধে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও সড়কে বাস ও ট্রাক চলাচল ছিলো কম। বিশেষ করে সকালের দিকে বাস টার্মিনালে যাত্রীর সংখ্যা কম থাকলেও ট্রেন স্টেশনে ভিড় দেখা যায়। সকাল থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোরের স্টেশন মাস্টার আয়নাল হোসেন। তিনি জানান, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত এ স্টেশন থেকে ৬টি ট্রেন ছেড়ে তা নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছেছে।
যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের রূপসা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মোহাম্মদ বাদশাহ জানান, বাস ছাড়ার জন্য আমরা প্রস্তুত। তবে যাত্রী প্রায় নেই। তিনি জানান, বাইরে থেকে মানুষ আসতে না পারার কারণে টার্মিনাল প্রায় যাত্রীশূন্য।
ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগের ১ দফা দাবিতে চলা অবরোধ কর্মসূচিতে মঙ্গলবার সকালে মাগুরা-ঢাকা মহাসড়কে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে অবস্থান নেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। পরে যশোর-মাগুরা সড়কে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের নেতৃত্বে আরেকটা মিছিল বের করে অবস্থান নেন বিএনপি ও মহিলাদলের নেতৃবৃন্দ।
এছাড়াও যশোর-খুলনা মহাসড়ক, যশোর-নড়াইল সড়ক, শহরের ঘোপ, শংকরপুর, শহরতলীর মুড়লী মোড়, রাজারহাট, ঢাকা রোড, যশোর কলেজ সংলগ্ন সড়ক, টার্মিনাল সংলগ্ন রেলক্রসিং এলাকা, বিসিক শিল্পনগরী সড়ক, যশোর-মনিরামপুর সড়কসহ বিভিন্ন স্পটে একের পর এক মিছিল ও অবস্থান গ্রহণ করেন দলীয় নেতাকর্মীরা।
তবে অবরোধ কর্মসূচির শুরুতেই মুড়লী মোড় থেকে যশোর নগরের ৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সিদ্দিক, সদরের ৯নং আরবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদ, ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য শরিফুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন, নগরের ৮ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস ওয়াহিদ লিটন, ১৩ নং কচুয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক ডা. মশিয়ার রহমান, ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, মহিলাদল নেত্রী নাজনীন, পাপিয়াসহ ৪ জন নারী নেত্রী, ১১ নং রামনগর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম, ১৪ নং নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা অনিক হাসান অনি ও নগরের ৭নং ওয়া যুবদলের সহসভাপতি আমিনুর রহমানের ছেলে ছাত্রনেতা আপন রহমানসহ অন্তত ১৪ নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। এ সময় পুলিশ সেখানে মহিলাদলের নেত্রীদের ওপর বর্বোরোচিত হামলা চালায়। এছাড়াও অবস্থান কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করায় জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা।
এদিকে যশোরের রুপদিয়া বাজার থেকে কচুয়া ইউনিয়ন যুবদলের নেতা বিল্লাল হোসেন ও আসমত শরীফের মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে নরেন্দ্রপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজমুল ও এস আই আজাদের নেতৃত্বে একদল পুলিশ। এসব ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
এদিকে অবরোধ চলাকালে সড়ক- মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ অবস্থান নেয়। যশোর রেল স্টেশনেও অবস্থান নেয় পুলিশ।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হুসাইন জানান, যশোর-খুলনা মহাসড়কের মুড়লী মোড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টাকালে ১০ জনকে আটক করা হয়। তিনি আরও জানান, বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে সচেষ্ট রয়েছে পুলিশ।