যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল ওষুধ কেনায় কোটি কোটি টাকা খরচ দেখানো হলেও সংকট কাটছে না

0

বিএম আসাদ ॥ যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ওষুধ বাবদ কোটি কোটি টাকা খরচ হলেও ওষুধের সংকট কাটছে না। ফলে হাসপাতালে আগত রোগীরা তাদের প্রয়োজনীয় ওষুধ না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছেন, ওষুধের সংকট আছে ঠিকই তবে ঠিকাদার নিয়োগে তারা ঢাকায় চিঠি পাঠিয়েছেন। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই ওষুধের সংকট কেটে যাবে।
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছেন, ২০২২ সালের এপ্রিল পর্যন্ত যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীরা তাদের চাহিদা মতো যথেষ্ঠ ওষুধ পেয়েছেন। শিশুদের জন্য দেওয়া হতো প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের ওষুধ। ৫ প্রকার ওষুধ চিকিৎসকগণ প্রেসক্রিপশনে লিখলে তার ভেতর ৩ থেকে ৪ প্রকার ওষুধ দেওয়া হতো হাসপাতাল থেকে। সালবুটামল, এমব্রোস্কলসহ বিভিন্ন প্রকার ওষুধ দেওয়া হতো এ হাসপাতাল থেকে। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে ছিল ওষুধের যথেষ্ঠ সরবরাহ। গ্যাস প্রতিষেধক ওমেপ, প্যান্টোপ্রাজল, এন্টাসিড প্রত্যেক রোগীর সরবরাহ করা হতো। ওমেপ নিয়ে সব রোগী সন্তষ্ট হতেন। কিন্তু বর্তমানে স্টোর কিপার এসে পূর্বের ওষুধের তালিকা অধিকাংশ পরিবর্তন করে ফেলেছেন। মূল্যবান ভাল ভাল ওষুধ পরিবর্তন করে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের গ্যাসের ওষুধ যেমন রেবসহ অন্যান্য ওষুধ দিচ্ছেন। এ অবস্থায় অন্যান্য ওষুধের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন।
২ অক্টোবর এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, প্যারাসিটামল ৫০০ এমজি, মেট্রোনিডাজল ৪০০ এমজি, এ্যাজিথ্রোমাইসিন ৫০০ এমজি, একিউরিন ২৫ এমজি, লুমনা ১০ এমজি, ফিরোয়াস সালফেট, এন্টাসিড, ফেক্সোফেনাডিন-১২০ এমজি, কার্ডন ৫০ এমজি, রেবপ্রাজল ২০ এমজি, সিপ্রোসিন ৫০০ এমজি, ক্লোপিডোজেরেল ৭৫ এমজি, লিভোক্সিন ৫০০ এমজি, ক্যালসিয়াম ৩০০ এমজি, এটোভাসটাটিন-১০ এমজি, এসপিরিনি-৭৫ এমজি, মোট ১৬ প্রকার ওষুধ দিচ্ছেন বহির্বিভাগে সাধারণ রোগীদের জন্য। এসব ওষুধের সবই ট্যাবলেট।
অপরদিকে চোখের রোগীদের ক্লোরোফেনিক্যাল আইড্রপ, সিপ্রোসিন আই ড্রপ, শিশুদের জন্য সিরাপ, সালবিউটালমল-১০০ এমএল, প্যারাসিটামল-৬০, এমএল, সেফ-৩-৫০ এমএল, হিস্টাসিন-১০০ এমএল। ক্যাপসুল ডক্সিসাইক্লিন-১০০ এমজি, ইনডোমেট-২৫ এমজি, সিপ্রোসিন-২০০ এমজি, ও ফ্লু কনাজল ৫০ এমজি এই ৮ প্রকার ওষুধ দেওয়া হয় বহির্বিভাগে। তাও আবার কোনদিন একটি পাওয়া যায় তো অন্যটি থাকে না। রোগীদের বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে। বহির্বিভাগের ফার্মেসিতে এসব ওষুধের তালিকা ঝুলানো থাকলেও ২০ প্রকার ওষুধের বেশি পাওয়া যায় না। অথচ এর আগে বহির্বিভাগে ওষুধের তালিকা ছিল ৫০ থেকে ৫২ প্রকার। ৪২ প্রকার ওষুধের নিচে আসিনি তালিকা। সে সময়ও প্রায় ৬ কোটি টাকার ওষুধ কেনা হতো ইডিসিএলও এমএস আর টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করে। একই পদ্ধতিতে গত বছর ও ওষুধের ক্রয় করা হয়েছে। কিন্তু এপ্রিলের পর রোগীরা তেমন ওষুধ পায়নি। ২০২২-২৩ অর্থ বছরটা গেছে রোগীদের ওষুধ সংকটের মধ্যে। অথচ গত অর্থ বছরে ওষুধ ক্রয় বাবদ প্রায় ৭ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। ওষুধ ক্রয়কারী ৪টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ করা হয়। এর ভেতর মাগুরার অপরাজিতা ড্রাগস্ ২ কোটি ৪৮ লাখ ১১ হাজার ৪শ ৮৬ টাকার ওষুধ ক্রয় করেছে বলে হাসপাতালের খাতায় হিসাব দেখানো হয়েছে। ৩টি চালানে এ হিসাব দিয়েছে অপরাজিতা ড্রাগস্। বরিশালের মেসার্স পিপলাই এন্টারপ্রাইজ ৫৪ লাখ ৮৩ হাজার ৬শ, ২০ টাকা, আহসান ব্রাদার্স ২ হাজার ৭শ টাকা ও মাগুরার মামুন ড্রাগস্ ৩ লাখ ২৪ হাজার টাকার ওষুধ সরবরাহ করেছে। ৫৮ লাখ ২৪ হাজার ৩শ ২০ টাকার ওষুধ সরবরাহ করে এই ৩টি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এছাড়া ইউডিসিএল লিমিটেড ৩ কোটি ৮৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭শ ৮২ টাকার ওষুধ সরবরাহ করে ২০২২-২৩ অর্থবছরে।
সবমিলে ৬ কোটি ৯৪ লাখ ৭৯ হাজার ৫শ ৮৮ টাকার ওষুধ কেনা হয়েছে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে। অথচ সারা বছর ইডিসিএল ওষুধের উপর হাসপাতাল নির্ভরশীল ছিল। তাও ওষুধ সংকটের মধ্যে। এ অবস্থায় হাসপাতালে রোগীরা ঠিকমতো ওষুধ না পেলেও সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা ফেরত যায়নি। সব টাকাই খরচ দেখানো হয়েছে। নানান কৌশলে। খাতাপত্রে খরচ পাকাপোক্ত করেই রোগীদের সংকট মোকাবিলা করেছে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সেই সংকট অবস্থা এখনো বহাল রয়েছে। হাসপাতালের আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে চলছে ওষুধের সংকট।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. পার্থ প্রতীম চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওষুধের সংকট তো আছেই। রোগী বেশি হওয়ার কারণেও সংকট হচ্ছে। আবার ওষুধের সরবরাহ কিছুটা কম। তবে নতুন টেন্ডার হয়েছে। তালিকা ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে আসলে ঠিকাদাররা ওষুধ সরবরাহ করলে তখন সংকট কিছুটা কমে যাবে বলে জানিয়েছেন, ডা. পার্থপ্রতীম চক্রবর্তী।