অভয়নগরে টানা বর্ষণে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি

0

স্টাফ রিপোর্টার, অভয়নগর(যশোর)॥ অভয়নগর উপজেলার চলিশিয়া ইউনিয়নের বাগদাহ বিলের সরকারি কালভার্টের মুখে বাঁধ ও অবৈধ দখল করায় এলাকাবাসী পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন বাগদাহ গ্রামের শতাধিক পরিবার। এ উপজেলায় রের্কড পরিমাণ বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে বসতভিটার আঙ্গিনা ও ফসলের ক্ষেত। এমনকি ঘরের মধ্যেও পানি থই থই করছে। স্কুলে যেতে পারছে না কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাগদাহ বিল পাড়ের এই গ্রামটি নিচু আর আশপাশের এলাকা তুলনামূলকভাবে উঁচু। এজন্যে ৩০ বছর আগে গ্রামের পানি নিষ্কাশনের জন্যে ভবদহের টেকা নদীর সঙ্গে সংযোগ করে একটি খাল খনন করা হয়। প্রায় ২০ বছর আগে মাছ শিকারের জন্যে খালটিতে একটি ইটের বাঁধসহ আরও কয়েকটি বাঁধ দেয়া শুরু হয়। বাগদাহ বিলে সরকারি কালর্ভাটের মুখ বন্ধ করে রেখেছেন এলাকার মুনছুর নামের এক মাছ ব্যবসায়ী। তিনি পানি প্রবাহে বাধা প্রদান করে মাছ চাষ করছেন। এছাড়াও খালের পাশের বাসিন্দারা বাঁধের পাশে ঘরবাড়ি নির্মাণ করায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলেই গ্রামের একটি অংশ এখন পানির নিচে তলিয়ে যায়। সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে আবারও পানিবন্দি হয়েছেন এলাকার শতাধিক পরিবার।
হুমায়ন বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে বর্ষাকালে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কেউ এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয় না। যারা খালে বাঁধ দেন, তাদের বেশিরভাগই প্রভাবশালী। এজন্যে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। এমনকি তাদের নামও বলতে চান না।
মর্জিনা বেগম বলেন, শোয়ার ঘর ও রান্নাঘরে পানি উঠেছে। রান্না করতে পারিনি। আমরা পবিারের ৬ জন সদস্য সবাই না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি।
আকলিমা বেগম নামের এক নারী বলেন, পানিতে পুকুরের মাছ ভেসে যাচ্ছে। আমনের মৌসুম চলছে। কিন্তু পানির কারণে ধানের চারা ডুবে গেছে।
মারুফ ইসলাম ও রাজু হোসেন বলেন, বাড়ি থেকে বের হতে হলে কোথাও হাঁটু পরিমাণ আবার কোথাও কোমর পানি ডিঙিয়ে বাজারে বা কাজে যেতে হয়। বর্ষা আমাদের জন্যে অভিশাপের মতো। বর্ষা মৌসুমে বিয়েসহ অন্যান্য সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানও বন্ধ রাখতে হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই গ্রামের স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বই-খাতা ও জামা একটি ব্যাগে ভরে তা মাথায় নিয়ে মূল সড়কে উঠেছে। পরে সেখানে ভেজা কাপড় রেখে আবার জামা পরিধান করে স্কুলে যাচ্ছে। বিকেলে ফেরার পথে একইভাবে বাড়ি ফিরছে। কেউ অসুস্থ হলে তাকে কয়েকজন মিলে কাঁধে করে হাসপাতালে নিতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় চলিশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নান বলেন, সমস্যাটি অবগত হয়ে শুক্রবার সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে শিগগিরই খালের বাঁধ অপসারণ করে গাছপালা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। পরে গ্রামবাসীর চলাচলের রাস্তা সংস্কার করা হবে। এ বিষয়টি নিয়ে অভিযুক্ত মুনছুরের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়টি নিয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) থান্দার কামরুজ্জামান বলেন, আমি শুক্রবার সকালে বিষয়টি জেনেছি। কালভার্টের মুখ বন্ধ করে রাখা আছে। আমি শ্রমিক নিয়ে অপসারণ করার চেষ্টা করছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম আবু নওশাদ বলেন, টানা বর্ষণে বাগদাহ গ্রামের অনেক পরিবার পানির মধ্যে বসবাস করছে। এখানকার কালভার্টের মুখ কেউ বন্ধ করে রেখেছে। আমার কাছে কেউ সে ব্যাপারে অভিযোগ করেনি। তবে আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। আজই দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে।