চৌগাছায় এক মণ পাটের দামে এক কেজি ইলিশ!

0

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছায় নতুন পাট বাজারে আসতে শুরু করেছে। কিন্তু নতুন পাটের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রতিমণ পাট ১৫ শ থেকে ১৭ শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা এক কেজি ওজনের একটি ইলিশ মাছের দাম। বলা চলে মাঝেমধ্যে তাও হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সোনালী আঁশ যেন এখন কৃষকের গলার ফাঁস হয়েছে। কৃষকের ঘুরে দাঁড়ানোর সেই সোনালী স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।

উপজেলার পাট চাষিরা বলেন, গত মৌসুমে পাটের দাম পেয়ে এ বছর বেশি জমিতে পাটের চাষ করেন কৃষক। এবার চলতি মৌসুমের প্রথম দিকে হাট বাজারে নতুন পাটের দাম ভালোই ছিল। তাই লাভের আশা ছিল কৃষকের। কিন্তু হঠাৎ করে পাটের দাম কমে গেলে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে হাট- বাজারে প্রতি মণ পাট ১৫ শ থেকে ১৭শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। যা দুই মাস আগে বিক্রি হয়েছিল দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা মণ দরে। যার ফলে সোনালী আশে লাভের আশা নেই। হঠাৎ পাটের দরপতনে ফলে কৃষকের বিঘা প্রতি প্রায় ৫ হাজার টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। এদিকে এক মণ পাট বিক্রি করেও এক কেজি ভালো ইলিশ মাছও কেনা যাচ্ছে না।
উপজেলার বড়পাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাটকলগুলো পাট কিনছে না। ফলে মিল না কেনায় দাম কমে আমাদের পাট কিনতে হচ্ছে। পাটের মৌসুম শুরু তাই সরবরাহ বেড়ে গেছে। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা পাটের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর উপজেলায় জি আর ও ৫২৪ জাতের ১৮৬০ হেক্টর ও তুষা ৮ রবি জাতের ১৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলায় আরো বেশি জমিতে পাট চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৯ হাজার ৩৭৮মে. টন।

সরেজমিনে উপজেলার নারায়নপুর, পাশাপোল, ধুলিয়ানী, স্বরুপদাহ, ফুলসারা, চৌগাছা সদর ও সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নসহ চৌগাছা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন পাট বাজারে উঠতে শুরু করেছে। পুকুরে, বাওড়ে ও খানা-খন্দে পঁচানো প্রতিমণ পাট মানভেদে ১৫ শ থেকে ১৭ শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

উপজেলার চাঁদপাড়া গ্রামের পাট চাষি আবু তালেব বলেন, এ বছর এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করি। তাতে খরচ হয়েছে জমি লিজ ৮ হাজার টাকা; জমি তৈরি, বীজ, সার, সেচ ও নিড়ানিতে ৫ হাজার টাকা;পাট কাটা,আটি বাঁধা, বহন ও পচন দেয়া বাবদ ৬ হাজার ৭শ টাকা; ধোয়া, বাওড় থেকে বাড়িতে আনা ও শুকানো বাবদ ৮ হাজার ৫শ টাকা। মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার ২ শ টাকা। পাট পেয়েছি ১৩ মণ। যা ১৫শ টাকা মণদরে বিক্রি করলে মোট ১৯ হাজার ৫শ টাকা হয়। তিনি সরকারের কাছে ধান-চালের ন্যায় পাটের দামও নির্ধারণ করে দেয়ার দাবি জানান।

উপজেলার আন্দারকোটা গ্রামের পাটচাষি নুরন্নবী মিয়া বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর রাসায়নিক সার, কীটনাশকের দাম ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় পাট চাষের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। বর্তমান বাজার মূল্যে পাট বিক্রি করলে বিঘা অনন্ত ৫/৭ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। পাটে খরচের টাকাও উঠছে না। তাই আগামী বছর থেকে পাটের চাষ আর করব না। এখন জমি বন্ধক রেখে দিনমজুরের টাকা দিতে হচ্ছে।বাজারে এক মণ পাট বিক্রি করে এক কেজি ওজনের একটা ইলিশ মাছও হতে চায় না। বর্তমানে পাট হয়ে গেছে কৃষকের গলার ফাঁস।এতে পাট চাষে আগ্রহ হারাবে কৃষক।

চৌগাছা বাজারের পাট ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, সরকারি পাটক্রয় কেন্দ্র না থাকায়, পাট রফতানিকারক ও বেসরকারি পাটকলগুলো পর্যাপ্ত পাট না কেনায় পাটের বাজার অস্থিতিশীল। এক্ষেত্রে পুনরায় সরকারি পাট ক্রয় কেন্দ্র চালু করে সরকার ধান-চালের ন্যায় পাট ক্রয়ে ও সংরক্ষণে ভূমিকা নিলে বাজারে পাটের চাহিদা বাড়বে। ফলে এতে পাট বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

উপজেলা পাট উন্নয় কর্মকর্তা নিপা বিশ্বাস বলেন, উপজেলায় এ বছর ২৫৭৫ জন কৃষক পাট চাষ করেছেন। এ অঞ্চলে এবার পাট ভালো হয়েছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্তকর্তা মুসাব্বির হুসাইন বলেন, এ বছর পাটের আবাদ ভাল হয়েছে। সরকার পাট চাষিদেরও প্রণোদনা দিচ্ছেন। যাতে পাটের চাষাবাদ বাড়ে। তবে পাটের দাম আরো বেশি হওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।