এক জরিমানাতেই কাঠেরপুলে সব দোকানেই গরুর মাংস ৬৫০

0

শেখ আব্দুল্লাহ হুসাইন ।। ক্রেতা ঠকিয়ে বেশি দামে গরুর মাংস বিক্রি করতে গিয়ে ৫ হাজার টাকা জরিমানা দিলেন যশোরের বড়বাজার কাঠেরপুলের মাংস বিক্রেতা মো. সাব্বির। এদিকে বিক্রিতে অসামঞ্জস্য পাওয়ায় একই বাজারের এক পেঁয়াজের আড়তকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার। তাছাড়া সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে বেশি দাম নেওয়ায় ডিম বিক্রেতাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। সরকার নির্ধারিত অপর দুই পণ্য আলু ও পেঁয়াজ আগের বেশি দামেই বিক্রি করতে দেথা যায় ব্যবসায়ীদের।
বেশ কিছুদিন ধরে যশোর শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রেতারা গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু করেছেন। একটু দেরিতে হলেও গত সপ্তাহ থেকে বড়বাজার কাঠেরপুলের শক্তিশালী সিন্ডিকেট ভেঙে বিক্রেতা মো. আব্বাস, মো. শাহিন ও মো. আনোয়ার ৬৫০ টাকায় মাংস বিক্রি শুরু করেন। তখনও এই এলাকায় ৭৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করছিলেন অন্য বিক্রেতারা। ওই তিন বিক্রেতার কারণে তারাও বাধ্য হয়ে ৫০ টাকা কমিয়ে ৭০০ টাকায় নেমে আসেন।
৬৫০ টাকার বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে তারা ক্রেতা ঠকিয়ে বাজার দরের থেকে কেজিতে ৫০ টাকা বেশি হাতিয়ে নিচ্ছেলেন। ক্রেতাদের বলা হচ্ছিল তাদের মাংস ভালোমানের ও হাড়-চর্বি থাকে না। কিন্তু সচেতন ক্রেতারা দেখেন গরুর মাংস হাড়-চর্বি ছাড়া হয় না। এর আগেও তারা এমনই মাংস কিনেছেন। হঠাৎ করে তাদের উল্টাপাল্টা বোঝাতে থাকায় ক্রেতারা অসাধু বিক্রেতাদের জারিজুরি ধরে ফেলেন। তারা সরকারের বাজার তদারকি সংস্থার নজরদারি কামনা করেন। ক্রেতাদের এমন অভিপ্রায় দৈনিক লোকসমাজে তুলে ধরা হয়।
এ অবস্থায় গতকাল শুক্রবার যশোর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক সৈয়দা তামান্না তাসনীম বড়বাজারে অভিযান চালান। তিনি কাঠেরপুলে সাব্বির বিফ হাউসে ৭০০ টাকা কেজি দরে গরুর মাংস বিক্রি করতে দেখেন। তিনি মূল্য বেশি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতা মো. সাব্বির ৭০০ টাকায় বিক্রি করার কথা অস্বীকার করেন এবং বলেন বাতাসে মূল্য তালিকা উল্টে গেছে। এ অবস্থায় ওই মূল্য তালিকা উল্টিয়ে দেখা যায় তাতে দর ৭০০ টাকা লেখা আছে। ক্রেতা ঠকিয়ে বেশি দাম নেওয়ার কারণে ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক সাব্বির বিফ হাউসকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এর পরপরই বাকি ৭০০ টাকার বিক্রেতারা প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৫০ টাকায় বিক্রি করতে থাকেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার সরকার তিন কৃষিপণ্যের খুচরা বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। দর নির্ধারণ করা পণ্যগুলো হলো, ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি পিস ১২ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৩৬ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬৫ টাকা। গতকাল শুক্রবার থেকে ভোক্তা অধিকারকে বাজার তদারকির জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু গতকাল শুক্রবার বড়বাজারে ফার্মের মুরগির ডিম প্রতি পিস সাড়ে ১২ টাকা, আলু প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০ টাকা ও আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। সরকারের এমন নির্দেশ আগেও যেমন ব্যবসায়ীদের মানতে দেখা যায়নি, এখনও সেই অবস্থা।
তবে বড়বাজারে পেঁয়াজের পাইকারি বিক্রেতা নিউ আমিন অ্যান্ড সন্স আড়তে টাঙানো মূল্য তালিকার সাথে অসামঞ্জস্য, ভাউচার ঠিক না থাকা ও মূল্য তালিকা হালনাগাদ না করার অপরাধে শুক্রবার ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক তামান্না তাসনীম। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ডিমের দাম সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারে প্রতি পিসে ৫০ পয়সা বেশি নেওয়া হচ্ছে। তিনি দোকানিদের ক্রয় রশিদ দেখেন, তাদের কাছেই পাইকারি বিক্রেতারা প্রতি পিস ডিম ১১ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি করেছেন। এই অবস্থায় তিনি গতকাল ডিম বিক্রেতাদের সতর্ক করে দিয়ে শনিবার থেকে সরকার নির্ধারিত প্রতি পিস ডিম ১২ টাকা দরে বিক্রি করতে বলেন।