ঝিনাইদহে অমিতাভ হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশা নিখোঁজের তিনদিন পর লাশ উদ্ধার

0

আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহ শহরের ধোপাঘাটা ব্রিজ এলাকা থেকে রোববার অমিতাভ সাহা (৩৫) নামে এক ব্যক্তির বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত অমিতাভ সাহা মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের অশোক সাহার ছেলে। তিনি ঝিনাইদহ আদালত চত্বরে একটি ক্যান্টিন পরিচালনা করতেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সাইফুর রহমান জানান, রোববার সকালে ধোপাঘাটা ব্রিজ এলাকার রাস্তার পাশে বস্তাবন্দি লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয় এলাকাবাসী। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তার লাশ উদ্ধার করে। এ সময় তিশা নন্দি নামে এক নারী অভিযোগ করেন, অমিতাভ সাহা তার দ্বিতীয় স্বামী। তার আগের স্বামী কালীগঞ্জের বিনয় নন্দিকে ছেড়ে অমিতাভকে বিয়ে করে তিনি ঝিনাইদহ শহরের আদর্শপাড়ার কচাতলা মোড়ে ভাড়া বাড়ি থাকতেন। হাটগোপালপুর এলাকার রাজন হোসেন রাজু নামে এক ব্যক্তি চাকরি দেওয়ার নাম করে গত ৩১ আগস্ট অমিতাভ সাহাকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তিশা নন্দি দাবি করেন।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, অমিতাভ সাহা এর আগে চেক ডিজঅনার মামলায় কারাগারে ছিলেন। তিশা নন্দি ও তার বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় আগের স্বামীকে ছেড়ে তারা ঝিনাইদহে দুজন বসবাস করতেন। তিশা নন্দির ভাষ্য রাজন হোসেন রাজু বিভিন্ন সময় তাকে উত্ত্যক্ত করতো। এদিকে তিশা নন্দি নিহত অমিতাভকে স্বামী বলে দাবি করলেও গত ৯ আগস্ট ঝিনাইদহ নোটারি পাবলিকে উপস্থিত হয়ে অমিতাভকে হিন্দু আইনমতে ত্যাগ করেন। তিশা নন্দি ত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন, অমিতাভকে বিয়ের পর থেকে তার সংসারে অশান্তি লেগে ছিল। যৌতুক নিয়ে তাকে মারধর করা হতো। অমিতাভ পরনারীতে আসক্ত। একাধিক মামলা তার নামে। চিটিংবাজ নামে পরিচিত। আগেও তার একাধিক স্ত্রী ছিল। ফলে আমি তাকে স্বামী হিসেবে ত্যাগ করলাম।
তিশা নন্দি কালীগঞ্জ উপজেলার গোমরাইল গ্রামের বিশ্বাজিৎ বিশ্বাসের মেয়ে হিসেবে ত্যাগপত্রে উল্লেখ করলেও অমিতাভের লাশ উদ্ধারের সময় গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে নিজের বাড়ি মাগুরার বিনোদপুর বলে দাবি করেন। ফলে অমিতাভ হত্যা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি ত্রিভুজি প্রেমের বলি, না পরকীয়া প্রেমের কারণে অমিতাভকে হত্যা করা হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। ঝিনাইদহ জেলা জজ আদালতের আইনজীবী ও বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া মিলন জানান, তিশা রাজন নামে যার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ তিনি বিএনপির ইউনিয়ন নেতা। মামলার সুবাদে রাজন তিশাকে আমার কাছে নিয়ে আসে তার দ্বিতীয় স্বামী অমিতাভকে ডিভোর্স দিতে। আমি গত মাসের ৯ আগস্ট নোটারির মাধ্যমে ডিভোর্স সম্পন্ন করি। ডিভোর্স সম্পন্ন হওয়ার পর বিষয়টি তিশা গোপন রাখতে বলে। আমি বিষয়টি গোপন না রাখায় এখন শুনছি রাজনের সঙ্গে তিশা আমাকেও জড়িয়ে ফেসবুক লাইভে মিথ্যা অভিযোগ করছে।
বিষয়টি নিয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা বলেন, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত অমিতাভ সাহার স্ত্রী দাবিদার তিশা নন্দি এ ঘটনায় একটি মামলা করেছেন। তিনি বলেন, অন্য কোথাও তাকে হত্যা করে ঘটনাস্থলে লাশ ফেলে রেখে গেছে দুর্বৃত্তরা বলে ধারণা করছি। হত্যার মোটিভ ও ক্লু উদ্ধারের চেষ্টা করছে পুলিশ।