যেভাবে বদলে গেছে বিএনপি

0

লোকসমাজ ডেস্ক ॥ বিগত বছরগুলোর তুলনায় বিএনপি হাইকমান্ডকে অনেক গোছানো, অভিজ্ঞ ও ধীরস্থির দেখাচ্ছে। ২০১৮ সালে রাতের ভোটে বিএনপিকে সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করা হয়। সারাদেশের কোথাও সরকারি দল ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিকে দাঁড়াতেই দেয়নি। হামলা, মামলা, গুম, খুন-জখম, ভয়-ভীতি, বাড়িতে বাড়িতে ভাঙচুর ও বোমাবাজি করে বিএনপি দমন চলতেই থাকে।
রাতের নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ বিএনপি দল পুনঃগঠনে মনোযোগী হয়। নির্বাহী কমিটির অপেক্ষাকৃত তরুণ সদস্যদের দলের বিভিন্ন কর্মকান্ডে আগের থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। নতুন করে হাল ধরেন তারা। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয় ঘর গোছানোর পালা। বিএনপি হাইকমান্ড কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেয়। প্রবীণ নেতাদের নেতৃত্বে তরুণ নেতাদের হাত ধরে ধীর ধীরে বদলে যেতে থাকে বিএনপি। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে উপহার সামগ্রী ও সহায়তা আসতে থাকে ক্ষতিগ্রস্থ বিএনপি কর্মীদের পরিবারে। কর্মীরা আহত হলে দল চিকিৎসা সহায়তার, মামলা দায়ের হলে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত মামলা লড়বার ব্যবস্থা করা হয়। আটক বা আহত কর্মীদের জন্য খাবার পৌঁছে যায় হাসপাতাল, থানা কিংবা আদালতে। বিভিন্ন স্তরের নেতাদেরকে তাদের অনুগত কর্মীদের সকল ধরণের সুবিধা অসুবিধা ও খোঁজ-খবর নেবার দায়িত্ব দেয়া হয়। আন্দোলন করতে গিয়ে আহত কর্মীদের তড়িৎ গতিতে হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এমনকি কয়েকশ’ কর্মীদের ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। নিহত, নিখোঁজ, গুম, খুনের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে ছুটে যান দলের স্থানীয় নেতারা। নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা হতে থাকে। অতীতের ব্যর্থতা ভুলে ঘুরে দাঁড়ায় বিএনপি। সারাদেশে কমিটি পুনঃ গঠনের প্রক্রিয়া চলমান থাকে। দেশের বহু জায়গায় মেধাবী ও যোগ্যতা সম্পন্ন তরুণ নেতাদের দায়িত্বশীল পদে আনা হয়। নেতা-কর্মীদের বন্ধন দৃঢ় হয়। সরকারের মেয়াদ শেষ হবার ২ বছর আগে থেকেই বিএনপি সমাবেশ করতে শুরু করে, কিছু কিছু জায়গায় পুলিশের অনুমতি নিয়েই।
বিএনপি’র আন্দোলনের ধরণের মধ্যেও পরিবর্তন আসে। অতীতের বিরোধীদলের রাজনীতির অনুসংগ হরতাল ও জ¦ালাও পোড়াও পরিহার করে তারা অহিংস আন্দোলন শুরু করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার মধ্যেও বিএনপি’র অহিংস আন্দোলন চলতে থাকে।
মানববন্ধন, দোয়া মাহফিল, জেলা ও উপজেলায় সমাবেশ, বিভাগীয় সমাবেশ, মহাসমাবেশ তারুণ্যের সমাবেশ এবং সর্বশেষ শান্তিপূর্ণ বিশাল পদযাত্রা শুরু করেছে বিএনপি। মার্কিন ভিসানীতি, সম্প্রতি আমেরিকা কর্তৃক অবৈধ সম্পদ পাচারকারীদের যাবতীয় সম্পদ আমেরিকান সরকার কর্তৃক জব্দকরণের হুমকি, সরকারি দলকে সংযত করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা জোট ও জাতিসংঘ বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছে। অন্যদিকে রিজার্ভ ঘাটতি, অল্পকিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কর্তৃক দ্রব্যমূল্যের চরম উর্দ্ধগতি, বিরোধী দল এমনকি সাধরণ জনগণের প্রতি কটাক্ষ করে কথা বলা ও পাহাড় সমান দুর্নীতি এবং সরকারী দলের লাগামহীন চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে অতিষ্ঠ সাধারণ জনগণও বিএনপির কর্মসূতিতে অংশগ্রহণ শুরু করেছে। মিছিলের দৈর্ঘ্য বাড়ছে। গত শুক্রবার ঢাকার পদযাত্রার মিছিল একটি স্থান পেরোতে প্রায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট লেগেছে।
গত কয়েদিনে ঘটেছে আরো কিছু চমকপ্রদ ঘটনা। ২৯ আগস্টের অবস্থান কর্মসূচিতে আশানুরুপ পারফরমেন্স দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় দলের ছাত্রসংগঠনের শীর্ষ পদে পরিবর্তন আনা হয়। বদলে যায় ঢাকা মহানগর যুবদল দক্ষিণ ও উত্তরের শীর্ষ পদগুলো। ভয়ে আছেন অনেক শীর্ষ নেতারাও। এ ঘটনা প্রমাণ করে বিএনপি নেতৃত্ব আগের চেয়ে অনেক অভিজ্ঞ ও পরিপক্ক। দলের ভেতরের সমস্ত খবর সম্পর্কে হাইকমান্ড অবগত আছে। নেতাদের পারফর্মেন্স বিচার করা হচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে কোন কর্মসূচিতে কোন নেতার অযোগ্যতা প্রমাণ হলেই তাকে সরিয়ে দেয়া হবে। এ ঘটনা প্রমাণ করে সঠিক পথেই আছে বিএনপি।
ইতিমধ্যে বিএনপি’র বিশাল কর্মীবাহিনীও আন্দোলনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। হামলা-মামলা, জেল-জুলুম তাদেরকে আর বিচলিত করে না। গত ১৫ বছরের আন্দোলন সংগ্রামে মার খেতে খেতে এই কর্মীবাহিনী এখন যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার সক্ষমতা অর্জন করেছে। আর বিএনপির’র বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যোগ্যতা ও প্রমাণিত হয়েছে। তাই এই বদলে যাওয়া বিএনপি’র নেতৃত্বের উপর ভরসা রেখেই সারা দেশবাসীও একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ দেখার প্রত্যাশা করছেন।