হিংসা ও আক্রোশ থেকে তারেক জোবায়দাকে সাজা: মির্জা ফখরুল

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রাখা আওয়ামী সরকার তাদের কোনো প্রতিপক্ষ রাখতে চায় না। তাই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এ ফরমায়েশি রায় দেয়া হয়েছে। দেশের জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমান ও তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এমন ফরমায়েশি রায় দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (২ আগস্ট) সন্ধ্যায় গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, অবৈধ আওয়ামী সরকারের ফরমায়েশি রায়ের আরেকটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো। আজ ঢাকা মহানগর বিশেষ দায়রা জজ আদালতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার সহধর্মিনী ডাঃ জুবাইদা রহমানকে সাজা দেয়াটা আওয়ামী দুঃশাসনের কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা বলে কারো মনে হয়নি। বিচার বিভাগের দলীয় করণের এটা আর একটি নিকৃষ্ট নজির। তারেক রহমান এবং তার স্ত্রীকে যে সাজা দেয়া হবে এ নিয়ে কারো সংশয় ছিল না। কারণ আওয়ামী কর্তৃত্ববাদী শাসনে বিরোধী দলের প্রধান নেতাদের নির্মূল করতে যেভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হয়, সেই নীলনকশা ধরেই সরকারপ্রধান এগিয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রক্ষমতা আঁকড়ে রাখা আওয়ামী সরকার তাদের কোনো প্রতিপক্ষ রাখতে চায় না। সরকারপ্রধান নিজেকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চান। সেজন্য আইন আদালত ও প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে বদ্ধপরিকর হয়েছেন। আজ এই ফরমায়েশি রায় দেয়ার ঘটনা দেশকে গণতন্ত্র শূন্য করার ধারাবাহিক চক্রান্তের অংশ।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানসহ দেশজুড়ে বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র নব্য বাকশালী দুঃশাসনকে চিরস্থায়ী রাখতে। সেজন্য আইন আদালতকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের এক দমনযন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। ন্যায়বিচার করার কারণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে মামলা থেকে খালাস দেয়ায় বিচারক মোতাহার আর দেশে থাকতে পারেননি। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা বিচার বিভাগে সরকারি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ‘গানপয়েন্টে’ দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের সময় রামদা, লাঠিসোঁটা ও রড নিয়ে হামলা করে আওয়ামী ক্যাডার’রা যা মানুষের হাতে হাতে মোবাইলে ভিডিওতে দৃশ্যমান হয়েছে। অথচ মামলা হয় বিএনপির কয়েক বছর আগে মৃত, কারাবন্দী ও বিদেশে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের নামে। মামলা দেয়ার পুলিশী তামাশা এখন সর্বমহলে হাস্যকর বিষয় হয়ে উঠেছে। মৃত বিএনপি নেতাকে ‘গায়েবি জীবিত’ করে গায়েবি মামলা দেয়া যেন এখন পুলিশের নিত্যদিনের রুটিনে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী নেতাদের চেতনার স্তরে সুবিচার বলে কোনো জায়গা নেই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই রায় যে শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক হয়েছে তার বড় প্রমাণ আদালতে প্রায় ৪৯ লাখ মামলার জট থাকলেও আলোর গতিতে চলেছে এই মামলার কার্যক্রম। রাত ৮টা ৯টা পর্যন্ত একতরফাভাবে সাজানো সাক্ষীকে দিয়ে শেখানো বুলি বলানো হয়েছে আদালতে। একমাসে এই মামলাটির জন্য প্রতিদিন শুনানি করে ৪২ জন সাক্ষী দ্রুত গতিতে নিজেরা নিজেরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন। আমাদের আইনজীবীরা এ ধরনের অস্বাভাবিক বিচার কার্যের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করতে গেলে তাদের ওপর পুলিশ ও সরকারদলীয় আইনজীবীরা একাধিকবার হামলা চালিয়েছে। তাদেরকে আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। গোটা দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে হতবাক হয়ে প্রত্যক্ষ করেছে কিভাবে তামাশার বিচারের নামে ক্যামেরা ট্রায়াল চালানো হয়েছে। আজকের ফরমায়েশি রায় সরকারপ্রধানের হিংসা ও আক্রোশের বহিঃপ্রকাশ। দেশজুড়েই যখন আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে। তারেক রহমানের নেতৃত্বে জনগণের মধ্যে যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে বিভ্রান্ত করতে অবৈধ আওয়ামী সরকারের এটি একটি কূটচাল। একদফার চলমান আন্দোলনকে নেতৃত্বশূন্য করতে আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে প্রতিহিংসা মেটানো হয়েছে। যেমনটি করেছে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিয়ে। বিনাশ ও সংকীর্ণতার পথ অবলম্বন করে তারা ন্যায়বিচারকে দেশান্তরিত করেছে। দেশের জনগণ বিচারের নামে এই প্রহসন, এই ফরমায়েশি রায় ঘৃণ্যাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন, ২০০৭ সালে তথাকথিত ওয়ান ইলেভেনের জরুরি সরকার প্রতিপক্ষ দমনে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে জিয়া পরিবারকে হেয় এবং রাজনৈতিক পরিমন্ডল থেকে উচ্ছেদ করার গভীর চক্রান্তে মেতে বাংলাদেশের অগণন মানুষের সমর্থনধন্য দেশনায়ক তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা: জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণরুপে মিথ্যে, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগে মামলাটি দিয়েছিল। কারণ তথাকথিত জরুরি সরকার ছিল বর্তমান আওয়ামী লীগেরই আন্দোলনের ফসল। জরুরি সরকারের সময়ে শেখ হাসিনার নামে ১৫টি দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির মামলা করা হলেও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পর প্রধানমন্ত্রী পদের ক্ষমতা ব্যবহার করে অনুগত বিচারপতিদের দিয়ে সবগুলো মামলা প্রত্যাহার করিয়ে নেন শেখ হাসিনা। কোনো মামলায় তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়নি। অথচ তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের এই মামলা চলার মতো কোনো আইনগত ভিত্তি-উপাদান না থাকা সত্ত্বেও হিংসা চরিতার্থ করার আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দিয়ে শেখ হাসিনা তার নীলনকশা কার্যকর করার জন্য চটজলদি জোড়াতালি দিয়ে প্রতিহিংসা পূরণের রায় বের করা হয়েছে।