তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের সাজা, বিএনপির বিক্ষোভ

0

লোকসমাজ ডেস্ক॥ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে করা মামলার রায় ঘোষণা করেছে আদালত। রায়ে তারেক রহমানকে ৯ বছর ও ডা. জুবাইদা রহমানকে ৩ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।
আদালত রায় ঘোষণার পর বুধবার (২ আগস্ট) বিকেলে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত ওই মিছিল শেষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। তিনি বলেন, আগামী শুক্রবার বেলা দুইটায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা হবে।
বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন।
বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের দাবি, এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে নজিরবিহীন দ্রুততম সময়ে। রাতের অন্ধকারে সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। এমনকি এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের দিন তাদের আইনজীবীরা যাতে এজলাসে থাকতে না পারে পিপি’র নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা মারধর করে বের করে দিয়েছে। আজ আদালত ফরমায়েশি রায় দিয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ঢাকা ইউনিটের সভাপতি ও তারেক-জুবাইদার পক্ষে আইনি লড়াই করতে আবেদন জমা দেয়া আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, এ মামলায় মোট ৫৭ জন সাক্ষী ছিল। মাত্র ১৬ কার্য দিবসে ৪২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। যা আদালত অঙ্গনে নজিরবিহীন।
তিনি বলেন,দ্রুত এই মামলা শেষ করতে সরকারের হস্তক্ষেপ ছিল। দুইদিন সাক্ষ্যগ্রহণ করেছে রাত ৭টা পর্যন্ত। কোর্ট অফিসার হিসেবে মামলার শুনানিতে আইনজীবীদের থাকার আইনগত অধিকার রয়েছে। কিন্তু এই মামলায় আমাদের আইনজীবীদের পিপি’র নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা মারধর করে বের করে দিয়েছে। আজ আবার আদালত ফরমায়েশি রায় দিলেন।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে মামলাটি তদন্ত করেছে। আমরা ৪২ জন সাক্ষী দিয়েছি। সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা এই অপরাধটা প্রমাণ করতে পেরেছি।
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে দণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। আগামীকাল শুক্রবার বেলা দুইটায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে দলটি।
বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলের সময় নয়াপল্টনসংলগ্ন নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ছিল। তবে মিছিলে বাধা দেয়নি পুলিশ।
নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল শেষে আয়োজিত সভার সভাপতি ছিলেন আবদুস সালাম। এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু। দলটির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে যে রায় হয়েছে, এটি ফরমায়েশি রায়। এই রায় সাধারণ মানুষ মেনে নেবে না। আপনাকে (শেখ হাসিনা) ক্ষমতা থেকে হটিয়ে বাংলার মাটিতে আপনার বিচার করা হবে। আপনি (শেখ হাসিনা) প্রস্তুত থাকুন।’
বিএনপির যুগ্ম সচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে প্রহসনের রায় দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যাকারী দল হিসেবে পরিচিত। তারা (আওয়ামী লীগ) তারেক রহমানকে এতটাই ভয় পায়, তিনি (তারেক রহমান) কখন এ দেশে ছুটে আসেন, এমন অজানা আতঙ্ক ও ভয়ে থাকে।
সভায় আরও বক্তব্য দেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন, জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস।
এদিকে তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলার রায় ঘোষণার আগে থেকেই বিএনপির নেতা-কর্মীরা নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। বেলা আড়াইটার পর নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। সাড়ে তিনটার পর নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।
২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তারেক রহমান, জুবাইদা রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পরের বছর তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়। চলতি বছরের গত ১৩ই এপ্রিল তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।