মোংলায় নদীর পাড় দখল করে প্রভাবশালীদের কাঁচা-পাকা স্থাপনা তৈরি

0

মনিরুল হায়দার ইকবাল, মোংলা (বাগেরহাট) ॥ মোংলা বন্দরের নদীর পাড়জুড়ে প্রভাবশালী মহল কাঁচা-পাকা স্থাপনা তৈরি করে চলেছে। অবৈধ এ নির্মাণের কাজের পরিধি দিনদিন বাড়ছে। অথচ এসব ব্যক্তির কারোরই ভূমি মন্ত্রণালয় বা বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে কোনপ্রকার বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোংলা নদী ক্রমেই ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেখানে বর্তমানে চর পড়েছে। আর এ চরের সরকারি জায়গা দখল করতে প্রভাবশালী একটি মহল নানাভাবে উঠে পড়ে লেগেছে। মহলটির ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্টদের চোখের সামনে প্রকাশ্য নদীর পাড়ের জায়গা দখল করে নানা ধরনের অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে আসছে। বর্তমানে অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, চরের জায়গা দখল করে কে কত কাঁচা-পাকা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করতে পারে তা নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে। মেরিন ড্রাইভ রোড়ের নদীর পাড় এলাকায় কোনও কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি ইতোমধ্যে বরাদ্দ ছাড়াই অবৈধভাবে মার্কেট পর্যন্ত গড়ে তুলেছেন। সর্বশেষ গত সপ্তাহ খানেক ধরে মোংলা পোর্ট পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ও আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান মেইন ড্রাইভ রোড়ের লেবার জেটি সংলগ্ন নদীর পাড় এলাকায় জায়গা দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরি করে চলেছেন। রাস্তার পাশে টিনের বেড়া দিয়ে কোনপ্রকার বরাদ্দ ছাড়া তিনি সরকারি জায়গা দখল করে সেমি-পাকা মার্কেট নির্মাণ করে যাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে, তার দেখাদেখি আরও কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই এলাকায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এ ব্যাপারে হাবিবুর রহমান দাবি করেন, যে জায়গায় তিনি স্থাপনা নির্মাণ করছেন তা জেলা প্রশাসনের নয়, সেটি বন্দর কর্তৃপক্ষের। জরুরি অবস্থায় উচ্ছেদের আগে ওই জায়গায় তার স্থাপনা ছিল। এখন অনেকেরই নদীর পাড়ে স্থাপনা নির্মাণ করার দেখাদেখি তিনিও স্থাপনা তৈরি করছেন। তবে ওই জায়গা তার নামে বরাদ্দ না হলেও তিনি বরাদ্দের জন্য আবেদন করেছেন বলে জানান।
অভিযোগ রয়েছে, সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সরকারি এসব জায়গা দখল করে দিনের পর দিন অবৈধ স্থাপনা তৈরি করলেও তাদের সাধারণত কেউ বাধা দেয় না। আবার কোনও কোনও সময় অবৈধ স্থাপনা তৈরির সময় সংশ্লিষ্টদের কেউ বাধা দিলেও তাকে মোটা অংকের উৎকোচ দিয়ে ম্যানেজ করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে নেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জরুরি অবস্থা চলাকালীন অবৈধ দখল ও স্থাপনার দায়ে স্থানীয় প্রশাসন নদীর পাড়ের বিভিন্ন জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান চালায়। সে সময় অধিকাংশ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়। উচ্ছেদ হওয়া স্থাপনার মধ্যে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের থেকে বরাদ্দ নেওয়া কিছু স্থাপনাও ভাঙচুর করা হয়। পরে এ নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা হলে আদালত বন্দর কর্তৃপক্ষের বরাদ্দের জায়গা বৈধ বলে রায় দেয়। এর পর পরই প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বন্দর কর্তৃপক্ষ বা জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ না দিলেও বিভিন্ন ক্ষমতাধর ব্যক্তি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে নদীর পাড়ের জায়গা দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অনেকটা মহোৎসব চালাচ্ছে।
এ ব্যাপারে মোংলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, নদীর পাড়ের জায়গা তাদের ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন। ওই জায়গা কারও নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। হাবিবুর রহমান যে জায়গা দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করছেন সেখানে তার লোকদের কাজ না করার জন্য দু বার লোক পাঠিয়ে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু সে নিষেধ উপেক্ষা করেও তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
অপরদিকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারী ব্যবস্থাপক (সম্পত্তি) মোস্তফা জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, পুরাতন বন্দরের নদীর পাড়ের কোনও জায়গা বন্দর থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। কেউ যদি বরাদ্দের আগে বন্দরের জায়গা দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরি করে তা বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে উদ্ধার করা হবে।