উন্নয়ন বঞ্চিত পারখাজুরা বাজার

0

 

ওসমান গণি, রাজগঞ্জ (যশোর) ॥ প্রায় শত বছরের পুরনো মশ্মিমনগর ইউনিয়নের পারখাজুরা বাজার। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এ বাজারে। প্রতি বছর বন্যায় কপোতাক্ষের উপচে পড়া পানিতে বাজারটি প্লাবিত হলেও তা সংস্কারেও নেওয়া হয়নি কোনও উদ্যোগ। কপোতক্ষের কুল ঘেঁষে গড়ে ওঠা পুরনো এ বাজারে প্রায় ৬শ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পারখাজুরা বাঁওড় ও কপোতাক্ষ নদের মাঝখানে বাজাটির অবস্থান হওয়ায় ব্যবসায়ীদের জন্যে কোনও সুযোগ সুবিধা নেই এ বাজারে।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চালের সীমান্তবর্তী জেলা যশোর।এ জেলা সদর থেকে ৪০কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত মশ্মিমনগর ইউনিয়নের পারখাজুরা বাজার। খেজুরের গুড় পাটালি, পান ও কাঠের জন্যে বিখ্যাত এ বাজারটিকে সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে সরকারের আয় করা সম্ভব মোটা অংকের রাজস্ব। ভৌগলিক দিক থেকে এর অবস্থান ভাল হওয়ায় এখানে গড়ে উঠেছে এতদাঞ্চলের অন্যতম একটি বাজার। কপোতাক্ষ নদীর তীরে বাজারটি হওয়ায় এর বাণিজ্যিক গুরুত্বও বেড়েছে বেশ। তবে বহু পুরনো ঐতিহ্যবাহী বাজারটি আজও অবহেলিত।
সূত্রমতে, ব্রিটিশ শাসনামলে কপোতাক্ষ নদের উত্তর পাড়ে বিশাল খেজুরবাগানে গড়ে তোলা হয় ছোট্ট একটি বাজার। এ খেজুরবাগানে বসবাসকারি ব্রিটিশ নাগরিকের যাতায়াতের একমাত্র বাহন ছিলো নৌকা। আর এ নৌকায় পারাপারের কারণেই ব্রিটিশরা এ বাজারের নামকরণ করে পারখাজুরা বাজার। মূলত সুন্দরবন থেকে আনা বিভিন্ন কাঠ ও গোলপাতা বিক্রির জন্যেই সে সময় বাজারটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কালের পরিক্রমায় বাজারটি আজ এ অঞ্চলের মানুষের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বিকিকিনির ক্ষেত্রে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। বর্তমানে এ বাজারে মশ্মিমনগর ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা, বেসরকারি ১২টি অফিস, ৭টি এনজিও’র অফিস, ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৪টি মার্কেটসহ ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ছয়শ দোকান ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে। অথচ বাজারটিতে নেই পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশণের কোন ব্যবস্থা। নেই বাজারে আসা সাধারণ মানুষের জন্যে গণশৌচাগারও।
এছাড়া যাতায়াতের জন্যে একমাত্র সড়কটিও দীর্ঘ এক যুগ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এদিকে সামান্য বৃষ্টিতেই কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে বাজারটি। তাছাড়া প্রতি বছরই বর্ষকালে প্রায় এক-দেড় মাস পানিতে তলিয়ে থাকে গুরুত্বপূর্ণ এ বাজারটি। দেশের বৃহত্তম উপজেলা যশোরের মণিরামপুর। ভৌগলিক দিক থেকে এর অবস্থান ভাল হওয়ায় এখানে গড়ে উঠেছে এতদাঞ্চলের অন্যতম একটি বাজার। কপোতাক্ষ নদের তীরে বাজারটি হওয়ায় এর বাণিজ্যিক গুরুত্বও বেড়েছে বেশ। অথচ এই বাজারে স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।
বাজার কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বিজিবি কর্মকর্তা আব্দুল গণি বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই পানিতে তলিয়ে যায় বহু পুরনো এ বাজারটি। সেই সাথে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাজারের ব্যবসায়ী ও ক্রেতাসহ সাধারণ লোকজনকে। অথচ এ বাজারটির সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথাব্যথা নেই।
এ ব্যাপারে কথা হয়, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মশ্মিমনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এমএ গফুরের সাথে। তিনি জানান, ভারী বর্ষণ ও কপোতাক্ষ নদের উপচে পড়া পানিতে বাজারটি প্রতিবছর স্থায়ী পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি যশোর শহরের সাথে সম্পৃক্ত পারখাজুরাবাসীর সেতুবন্ধন এ অঞ্চলের একমাত্র সড়কটি ও বর্ষা মৌসুমে পানিতে তলিয়ে যায়। বর্তমানে কাঁঠালতলা মোড় থেকে বেলতলা বাজার পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের প্রধান এ সড়কটি চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।