বাগেরহাটে সরকারি ধান সংগ্রহ শুরু না হওয়া কম দামে বিক্রি করছে কৃষক

0

বাগেরহাট সংবাদদাতা॥ বাগেরহাট জেলার মাত্র ধান কাটা বাকি আছে ১০ শতাংশ। তবে ইতোমধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি ধান কেটে ঘরে তুললেও, এখন পর্যন্ত সরকারি ধান সংগ্রহের কোন কার্য্ক্রম শুরু হয়নি জেলায়। নগদ টাকার প্রয়োজনে কৃষকরা বাধ্য হয়ে কম দামে খোলা বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছে ধান বিক্রি করছেন। এই অবস্থায় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি ধান সংগ্রহ লক্ষমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাট কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এবারের বোরো মৌসুমে বাগেরহাট জেলার ৯ উপজেলায় ৬২ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এতে প্রায় ৪ লক্ষ ১১ হাজার ৫‘শ টন ধান উৎপাদন হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষকরা। দুই-চার দিনের মধ্যে শতভাগ ধান কাটা ও মাড়াই শেষ হয়ে যাবে। কৃষকরা খোলা বাজারে কম দামে ধান বিক্রি করছেন। স্থানীয় বাজারে এক মন হাইব্রিড(মোটা) ধান ৮৫০ থেকে ৯৫০ টাকা এবং হাইব্রিড (চিকন ও ২৮) বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১১শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ২০২৩ সালের বোরো সংগ্রহের জন্য সরকার ধানের দাম নির্ধারণ করেছে কেজি ৩০ টাকা মন ১২‘শ টাকা। এই হিসেবে একজন চাষী প্রতিমন ধানে ৩৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কম পাচ্ছেন। এরপরেও নগদ টাকার প্রয়োজনে কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
অন্যদিকে বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এবছর বাগেরহাট জেলা থেকে ৫ হাজার ৫০৫ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করবে সরকার। ৪ এপ্রিল এক চিঠিতে এই চাহিদা পত্র পাঠিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। তবে এখন পর্যন্ত ধান সংগ্রহ বিষয়ক কোন কার্যক্রম শুরু হয়নি জেলায়।
কুচয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা ধান চাষী আবুল হোসেন বলেন, সরকার ৩০ টাকা কেজি দরে ধান কিনবে জেনে খুশি হয়েছিলাম। ভাবছিলাম সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে পারলে, বেশি টাকা পাওয়া যাবে। কিন্তু ঈদের আগেই ধান কেটে ঘরে তুলেছি, শ্রমিকদের মজুরী ও সারের দোকানে টাকা দেওয়ার জন্য মাত্র ৯০০ টাকা করে বেশকিছু ধান বিক্রি করেছি। এখনও ৫০ মনের মত ধান রয়েছে ঘরে, যদি তারাতারি ধানগুলো সরকার নিত তাহলে আমাদের অনেক লাভ হত।
একই গ্রামের লতিফ শেখ বলেন, ১০ হাজার টাকা দরে নগদ টাকায় ৫ বিঘা জমি করেছি। সার, ঔষধ ও শ্রমিকের ব্যয় বহন করে লাভ করা অনেক কষ্ট। সরকারি দামে বিক্রি করতে পারলে, ঋণ শোধ করে হয়ত কিছু টাকা থাকত। কিন্তু পাওনাদাররা কি আর সরকারি সময়ের অপেক্ষা করবে। তাইতো বাজারে দাম কম হলেও, বিক্রি করে দিচ্ছি এই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন এই কৃষক।
ধান ব্যবসায়ী মোঃ রিয়াজ বিশ্বাস বলেন, প্রতিহাটে এই বাজারে হাজার মনের উপরে ধান বিক্রি হয়। শুধু কচুয়া নয়, বাধাল, দেপাড়া, গজালিয়া, দৈবজ্ঞহাটি, সিএন্ডবি বাজারসহ জেলার সব বড় বড় বাজারে ভরা মৌসুমে এভাবেই ধান বিক্রি হবে। মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে বেশিরভাগ কৃষকের ধান বিক্রি হয়ে যাবে। তখন দামও কিছুটা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন এই ব্যবসায়ী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, সরকার কৃষকদের সুবিধার জন্য ধান ক্রয় করতেছে। কিন্তু কই কৃষকরা তো ধান বিক্রি করতে পারতেছে না। কৃষকদের ধান নেওয়া শেষ হয়ে গেলে ব্যবসায়ীদের মজুদ করা ধান ১২‘শ টাকা দরে নিবে। তখন আর তেমন কোন নিয়ম কানুনও থাকবে না।
বাগেরহাট জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে প্রধান সহকারি গোলাম রাব্বানি বলেন, ৪ মে আমাদের কাছে একটি চিঠি এসেছে। তবে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ও জেলা ধান চাল সংগ্রহ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, যতদ্রুত সম্ভব কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় শুরু করা হবে।