চৌগাছায় বাঁশ-বেত শিল্প বিলুপ্তির পথে

0

এম এ রহিম, চৌগাছা (যশোর)॥ যশোরের চৌগাছায় বাঁশ-বেত শিল্প বিলুপ্তির পথে। রকমারি প্লাস্টিকের পণ্যের দখলে বাজার। কর্মহীন হয়ে পড়ায় পেশা ছাড়ছেন অনেকে। এক সময় এ উপজেলার বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি পালি, চাঙ্গারি, ধামা, কুলা, ডালা, ঝুড়িসহবিভিন্ন শৌখিন দ্রব্যসামগ্রীর দেশজুড়ে বেশ কদর ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই শিল্পটি ধ্বংস হতে চলেছে। প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা, রোপণ ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে এ উপজেলার বাঁশ উজাড় হয়ে যাচ্ছে। ফলে বাঁশ-বেতনির্ভর এই শিল্পটি এখন বিলুপ্ত হতে চলেছে। এক সময় গ্রামের হাটবাজারে বাঁশের তৈরি নানা ধরনের কুলা, ডালা, চাঙ্গারি, ধামা, টুকরি, চালুনী, খালই ঠুশি, খুচিসহ মাছ ধরার বিভিন্ন সামগ্রী, মই, খেলনা ও বিভিন্ন শৌখিন শিল্পসামগ্রী বিক্রি হতো। এলাকায় কাঁচাঘর, ঘরের চাল, বাঁশের খুঁটি, বেড়া, ঘরের দরজা ইত্যাদিতেও বাঁশ ও বেত শিল্পের ব্যবহার ছিলো চোখে পড়ার মত। বেত দিয়ে তৈরি হতো ধামা, কাটা, দাঁড়িপাল্লা, শিশুদের বিভিন্ন খেলনা সামগ্রী। আধুনিক প্লাস্টিকের ছোঁয়ায় এ শিল্প এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। এখন আর গ্রামের বাজারে বাঁশ-বেতের তৈরি শিল্প আগের মতো চোখে পড়ে না। বাজারে চাহিদা কম ও বাঁশঝাড় উজাড় হয়ে যাচ্ছে। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ছে অনেকে। তাই এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত পরিবারগুলোর সদস্যরা এখন অন্য পেশার দিকে ঝুঁকছে। বলা যায় আয়-রোজগারের অভাবে অনেক পরিবার মানবেতর জীবনযাপনও করছেন।

উপজেলার সলুয়া বাজারে বাঁশের তৈরি শিল্পসামগ্রী কুলা, ডালা, মাথালি বিক্রি করতে আসা বিশ্বনাথপুর গ্রামের অনিল কমলে বলেন, বাপ-দাদার আমলের এই পেশাকে এখনো আঁকড়ে ধরে রেখেছি। এক টুকরো খাস জমির ওপর বসতবাড়ি বানিয়ে বাবা-মা, স্ত্রীসহ নয় সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকি। রাত-দিন খেটে বাঁশ দিয়ে যা তৈরি করি হাটবাজারে এনে তা সহজে বিক্রি করতে পারি না। বিক্রি হলেও খুব কম দাম পাওয়া যায়। এই শিল্পটি টিকিয়ে রাখার জন্যে সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতাও দেয়া হচ্ছে না। সরকারের সুনজরে এলে হয়তো শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখা যেত। অনেক দুঃখ-কষ্টে দিন কাটছে আমাদের। যারা এ পেশায় জড়িয়ে ছিলো তাদের অনেকেই এখন অন্য পেশায় চলে গেছে। উপযুক্ত কাজও অভিজ্ঞতার অভাবে আমরা পারছি না অন্য পেশায় যেতে। অন্য পেশা বা ব্যবসা বাণিজ্য করার মতো পুঁজিও নেই আমাদের।

উপজেলার স্বরুপদহ ইউনিয়নের টেঙ্গুরপুর গ্রামের সুনিল হাজেরা বলেন, পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন গরুর হাটে কাজ করি। এখান থেকে যা পাই তাই দিয়ে চলে আমার সংসার। আমাদের গ্রামের অনেকই পেশা বদলে ফেলেছে।জীবন সংসারের চাকা ঘুরাতে অনেকে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। উপজেলার খড়িঞ্চা গ্রামের খোকন ঋষি বলেন, এক সময় আমাদের এলাকায় আনাচে-কানাচে প্রচুর বাঁশ ঝাড় ছিলো। কালের আবর্তনে উজাড় হয়েছে বাঁশঝাড়। সংসার চালাতে মানুষের ঝাড় থেকে কঞ্চি ও বাঁশ নিয়ে ঝুঁড়ি, ডালা, খালই, মাথালি ইত্যাদি তৈরি করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করমাত। বাঁশ-বেতের তৈরি শিল্পের ব্যবহারও হতো প্রচুর। এখন বাজারে আধনিক প্লাস্টিক বিকল্প জিনিস থাকায় এই শিল্পের কদর কমে গেছে। এককালে প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জে বাঁশ-বেতের শিল্পসামগ্রীর প্রচুর চাহিদা ছিল। এখন বাঁশ-বেতের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তি এই কুটির শিল্পটির দারুণ ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে এর সাথে সম্পৃক্ত পেশাজীবী পরিবারগুলো।