যশোরে এক রাতে দুই হত্যার ঘটনায় আটক ২

0

 

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যশোর সদর উপজেলার ঘুরলিয়া গ্রামে ইউনুস আলী ও শহরের পূর্ব বারান্দী নাথপাড়ায় কিশোর নাহিদ হাসান হত্যায় জড়িত সন্দেহে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। ইউনুস আলী হত্যায় নিহতের ছোটভাই ইউসুফ আলী এবং নাহিদ হাসান হত্যায় জিসান উদ্দিন অন্তর নামে এক কিশোরকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুইটি চাকু উদ্ধার করা হয়।
রোববার (২ এপ্রিল) সকালে পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন।
ইউসুফ আলী (২২) সদর উপজেলার ঘুরলিয়া দক্ষিণপাড়ার আব্দুল লতিফ শেখের ছেলে এবং জিসান উদ্দিন অন্তর (১৪) পূর্ব বারান্দী নাথপাড়ার জসিম উদ্দিনের ছেলে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হয়, একই দিন দুইটি স্থানে দুইজন ছুরিকাঘাতে নৃসংশভাবে খুন হওয়ায় শহরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। পুলিশ ওই দুইটি হত্যার ঘটনা গুরুত্বের সাথে নিয়ে জড়িতদের আটকে অভিযান শুরু করে। ডিবি পুলিশ ও কোতয়ালি থানার পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালায়। অভিযানে গত শনিবার বিকেলে সদর উপজেলার নাটুয়াপাড়া গ্রাম থেকে ইউনুস আলী হত্যায় জড়িত অভিযোগে নিহতের ছোট ভাই ইউসুফ আলীকে আটক করা হয়। অপরদিকে এদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের পুরাতন কসবা টালিখোলা থেকে আটক করা হয় নাহিদ হাসান হত্যায় জড়িত জিসান উদ্দিন অন্তরকে। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে হত্যায় ব্যবহৃত দুইটি চাকু উদ্ধার করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন জানান, ইউসুফ আলীকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, একই এলাকার এক নারীর শ্লীলতাহানি ঘটান ইউসুফ আলী। পরে এ ঘটনায় ইউনুস আলীর কাছে অভিযোগ দিয়ে বিচার দাবি করেন ওই নারী। গত শুক্রবার রাতে এই নিয়ে দুই ভাইয়ের স্ত্রীদের মধ্যে ঝগড়া হয়। ভাইয়েরাও বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এরই এক পর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউসুফ আলী ধারালো ছুরি তার বড়ভাই ইউনুস আলীর বুকে বসিয়ে দেন। এসময় ইউনুস আলী মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ জড়িত ইউসুফ আলীকে আটকের জন্যে অভিযান শুরু করে। গত শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর উপজেলার নাটুয়াপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে আত্মগোপনে থাকা ইউসুফ আলীকে আটক এবং তার কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত ১টি চাকু উদ্ধার করা হয়।
তিনি বলেন, শহরের বারান্দী নাথপাড়ায় কিশোর নাহিদ হাসান হত্যাকান্ডের পর জড়িতদের শনাক্ত ও আটকে অভিযান শুরু করে ডিবি ও কোতয়ালি থানার পুলিশ। এক পর্যায়ে পুলিশ জানতে পারে, হত্যার সাথে পূর্ব বারান্দী নাথপাড়ার ইব্রাহিম ও অন্তর জড়িত। এরপর গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুরাতন কসবা টালিখোলা এলাকায় অভিযান চালিয়ে অন্তরকে আটক করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তিতে ঘটনাস্থলের কাছ থেকে ১টি চাকু উদ্ধার করা হয়। অন্তরকে আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ঘটনার দিন অর্থাৎ গত শুক্রবার পূর্ব বারান্দী নাথপাড়ার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে ইফতারির পর নাহিদের বন্ধু রাতুলের সাথে অভিযুক্ত ইব্রাহিমের সিনিয়র জুনিয়র নিয়ে ঝগড়া হয়। এ সময় বন্ধু রাতুলের পক্ষে কথা বলে নাহিদ। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন ইব্রাহিম। এরপর তারাবির নামাজের মাঝে মসজিদ থেকে নাহিদকে ডেকে নিয়ে যান ইব্রাহিম ও তার চাচাতো ভাই অন্তর। পরে তাদের মধ্যে ঝগড়া হলে অন্তর তার কাছে থাকা চাকু দিয়ে নাহিদের পেটে আঘাত করলে তিনি মারা যান। পুলিশের ওই কর্মকর্তা আরো জানান, ওই ঘটনার সাথে জড়িত ইব্রাহিমকেও আটকের জন্যে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-সার্কেল) জুয়েল ইমরান, কোতয়ালি থানা পুলিশের ওসি মো. তাজুল ইসলাম, ডিবি পুলিশের ওসি রুপন কুমার সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আটক দুইজনকে পরে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এরমধ্যে আটক ইউসুফ আলী ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার দালাল তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউনুস আলী হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তালবাড়িয়া পুলিশ ক্যাম্পের এসআই একরামুল হুদা।